চট্টগ্রাম বন্দরকে বিস্ফোরণ ও অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে কীটনাশক-কেমিকেল এবং শিল্পের কাঁচামালের মতো ১৫ ধরনের পণ্য বন্দরের শেডের পরিবর্তে বেসরকারি অফডকগুলো থেকে ডেলিভারি নেয়ার নির্দেশনা জারি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল রাখতে সাত দফায় ৬৫ ধরনের পণ্য অফডকগুলোতে পাঠানো হলো। তবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত জায়গা সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে জারি করা চিঠিতে ১৫ ধরনের পণ্য বন্দরের শেডের পরিবর্তে অফডকগুলো থেকে ডেলিভারির ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে। বিশেষ করে কার্বোনেটস, অ্যামোনিয়াম কার্বোনেটের মতো কেমিকেল, নানা ধরনের কীটনাশক, পেপার, সিরামিক, প্লাস্টিক পলিমার, ফোমসের মতো শিল্পের কাঁচামাল খালাস হবে অফডকে।

 
মূলত এসব কেমিকেল ও শিল্পের কাঁচামাল বন্দরের শেড থেকে ডেলিভারি হওয়ায় অগ্নি এবং বিস্ফোরণ ঝুঁকিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করছিল।
 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিপদজ্জনক পণ্যগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। এসব পণ্য আমদানিকারকরা খালাস না করলে বা নিলামে না তোলা গেলে অগ্নিঝুঁকি, রাসায়নিক বিক্রিয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। এটা থেকে পরিত্রাণের জন্য এসব পণ্য যতদ্রুত খালাস করা যায়, ততোই ভালো।
১৯৯৬ সাল থেকে বন্দরের কাজের সুবিধার্থে শুধু খালি কনটেইনার ওঠা-নামায় যুক্ত করা হয়েছিল বেসরকারি অফডক। ২০০০ সালে রফতানি পণ্য ও ২০০৬ সাল থেকে ৯ ধরনের আমদানি পণ্যের ডেলিভারির সুবিধা দেয়া হয়। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে আরও ১২ ধরনের কেমিকেল ও দাহ্যপণ্য বন্দর থেকে অফডকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
 
পৃথিবীর কোনো বন্দরের ভেতরেই কনটেইনার খুলে সরাসরি পণ্য ডেলিভারির নজির নেই। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রথা চলে আসছে। তবে এবার সেই ধারা বদলাতে উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
 
বন্দরের ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের গতি বাড়াতে হলে বেসরকারি অফডকগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়ানো জরুরি। চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে একরাম চৌধুরী জানান, অফডকগুলোকেও সেবাদানের মান উন্নত করার বিষয়ে ভাবতে হবে।
 
তিনি বলেন, যখন বন্দরে জট তৈরি হয়, তখন পণ্যগুলো বিভিন্ন অফডকে পাঠানো হয়। তাই অফডকগুলো থেকে যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে।
 
তবে ডেলিভারি প্রক্রিয়া অফডকে সরিয়ে নেয়ায় বন্দরে কনটেইনার ওঠানামায় গতি আসলেও অফডকের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ব্যবসায়ীরা।
 
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, অনেক অফডকের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, পণ্য রাখার জায়গাও নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব অফডকে একের পর এক পণ্য ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আগের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। একইসঙ্গে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ কোটি মেট্রিক টন। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রফতানি ও ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ২ লাখ ৬৫ হাজার আমদানি কনটেইনার ওঠানামা করেছে ২১টি বেসরকারি অফডকে।
 
বর্তমানে সক্ষমতার মাত্র ২২ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে বলে দাবি বিকডার। নতুন করে আরও ১২টি পণ্য যুক্ত হলে সক্ষমতা হবে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি।
 
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য দ্রুত বেরিয়ে গেলে রফতানি পণ্য প্রি-স্টেক করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে বন্দরে ট্রাকের চাপও কমবে। আর বেসরকারি অফডকগুলো যেভাবে বন্দরের ওপর নির্ভর করে উৎপাদনশীলতা অর্জন করছে, তা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

রফতানির ক্ষেত্রে জাহাজে তোলার আগে শুল্কায়নসহ সব জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অফডকগুলোতে।

The post চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তায় নতুন উদ্যোগ, ১৫ পণ্য যাবে অফডকে appeared first on Ctg Times.