বিশেষ প্রতিনিধি:

বরিশাল আদালতে এখনও আওয়ামীপন্থিদের শাসন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী আইনজীবীরা প্রকাশ্যে অনুপস্থিত থাকলেও জুনিয়রদের মাধ্যমে আদালতের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় মামলার আসামিদের জামিন করাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে অর্থ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও পঙ্কজ দেবনাথ। তারা বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম সুমাইয়া রেজভি মৌরী এবং বিচারক মাহফুজুর রহমানের আদালত থেকে আসামি দলীয় নেতাকর্মীদের জামিন করিয়ে নিচ্ছেন। এই দুই বিচারক হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও গৌরনদী উপজেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর অন্তত ২৫০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে জামিন দিয়েছেন বলে অভিযোগ বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর বরিশাল জেলার দশ উপজেলায় দুই ডজনেরও অধিক মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেত্রী থেকে শুরু করে দুই থেকে তিন সহাস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। বরিশাল আদালতে বর্তমানে যেসব বিচারক রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বিদায়ী সরকারের মেয়াদের। যে কোনো সময় তাদের অন্যত্র বদলি করা হতে পারে। তার আগেই তারা দণ্ডবিধিসহ বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩/৬ ধারায় মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিন দিয়ে দিচ্ছেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক বলেন, বিগত ১৫ বছর যে ধারায় হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে জেলে পাঠিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, এখন একই আদালত একই আইনে শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে জামিন দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দুই আমলি আদালতের বিচারকদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বরিশালের গৌরনদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী থানায় গত ৫ আগস্টের পর গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় এক ডজন মামলা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়েরকৃত এসব মামলায় নামধারীসহ অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এক থেকে দেড় সহাস্রাধিক। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনসহ জামিন অযোগ্য ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম সুমাইয়া রেজভি মৌরী হিজলা আমলি আদালতের এবং মাহফুজুর রহমান মেহেন্দীগঞ্জ ও গৌরনদী আমলি আদালতের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত তারা হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও গৌরনদী উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে দণ্ডবিধিসহ বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩/৬ ধারায় মামলার অন্তত ২৫০ আসামিকে জামিন দিয়েছেন।
জামিন পাওয়া উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো হলো- ৯ অক্টোবর হিজলা থানায় দায়েরকৃত জিআর মামলা নং-১৭৫। আসামির সংখ্যা নামধারী ১০০, অজ্ঞাত ১০০-১২০ জন। ১৩ অক্টোবর একই থানায় দায়েরকৃত জিআর মামলা নং-১৭৭। নামধারী ২৩ জনের সঙ্গে অজ্ঞাত আসামি ১৫০-১৮০ জন। মেহেন্দীগঞ্জ থানায় ২২ আগস্ট থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় নামধারী ৩১১ ও অজ্ঞাত ৭১০ জনকে আসামি করা হয়। এসব আসামির জামিন লাভে বরিশাল আদালতের আওয়ামীপন্থি সিনিয়র আইনজীবীরা অংশ না নিলেও দুই জুনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ও তার শ্যালক অ্যাডভোকেট শেখ আমিনুল ইসলাম সোয়েব শুনানি করেন। গত মঙ্গল ও বুধবার হিজলা এবং মেহেন্দীগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক বেগম সুমাইয়া রেজভি মৌরী ও মাহফুজুর রহমানের আদালতে আসামিদের জামিন শুনানিকালে হট্টগোল হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দুই বিচারকের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘এসব আসামির জামিন দিয়ে ভুল করেছেন’। পরে তোপের মুখে আওয়ামী পক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন আদালত থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন গত বৃহস্পতিবারও দুই আদালতে প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর জামিন দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষে শুধু শেখ আমিনুল ইসলাম সোয়েব শুনানি করেছেন। জামিনের বিরোধিতা করেছেন হিজলা আমলি আদালতের সিএসআই শাহনাজ বেগম ও মেহেন্দীগঞ্জ আমলি আদালতের সিএসআই সাইফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ আমিনুল ইসলাম সোয়েব বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আমি আমার মক্কেলদের (আসামি) জামিন প্রার্থনা করেছি। আমাদের যুক্তিতে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে জামিন মঞ্জুর করেছেন। আর অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বরিশাল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু জানান, ‘গত সপ্তাহে দুটি আদালত যেভাবে জামিন অযোগ্য মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিন দিয়েছেন তা বিরল। আমরা দলবদ্ধভাবে জোরালো আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু বিচারকদ্বয় কোনো কথাই শোনেননি। অথচ একই আদালত এ ধরনের মামলায় আমাদের মাসের পর মাস জেলহাজতে রেখেছেন। এখন তারাই খাসকামরা ও বাসায় বসে জামিনের কাগজে স্বাক্ষর করছেন। দুই বিচারকের আপত্তিজনক জামিন প্রদানের বিষয়টি আমরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারককে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এভাবে চললে আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’
এ বিষয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের (মেহেন্দীগঞ্জ ও গৌরনদী) বিচারক মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালতে চলমান মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করার এখতিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে দেয়নি। যে কারণে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারর না।’
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের (হিজলা) বেগম সুমাইয়া রেজভী মৌরীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মহিবুল হাসান বলেন, বেশ কয়েকজন আইনজীবী তার দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছেন। আদালত তার নিয়মে চলে। এ ব্যাপারে তার পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই।

The post হাসানাত-পঙ্কজের কারিশমায় বরিশালে আড়াইশ আ’লীগ নেতাকর্মীর জামিন appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.