11:53 am, Wednesday, 29 January 2025
Aniversary Banner Desktop

উপকূলের আমন ক্ষেতে সবুজের বিপ্লব

কলাপাড়া ((বরিশাল) প্রতিনিধি:

উপকূলের ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ফসলের মাঠে কৃষকরা বিলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে বাতাসে ধানের সবুজ পাতায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।

দৃষ্টি জুড়ে ছেঁয়ে গেছে কৃষকের শ্রম আর কষ্টে অর্জিত স্বপ্নের পাতার সবুজ রঙের ঢেউ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঠ জুড়ে কৃষকের জমিতে এখন হাঁটুসমান উঁচু ধানগাছ। আমন ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার এবং সার দেওয়া ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধান গাছের পরিচর্যায় কেউ পরিষ্কার করছেন আগাছা, আবার কেউ দিচ্ছেন রাসায়নিক সার। কেউ কেউ প্রয়োগ করছেন কীটনাশক। দম ফেলার সুযোগ নেই কৃষকদের।

অধিক ফলনের আশায় কৃষকরা এবার স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধানের বিজ রোপণ করছেন। সারা মাঠ ছেঁয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের গুটি স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা, ব্রি-ধান-৪৯, ব্রি-ধান-৫১, ব্রি-ধান-৭৫, ব্রি-ধান-৮৭, ব্রি-ধান-৯৫, ব্রি-ধান-১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের সবুজ পাতার প্রান্তর।

ধানের বাম্পার ফলনের আশায় দিন-প্রহর গুনছে এখন কৃষক। কৃষকের গোলায় সোনার ফসল ধান উঠলেই মায়া ভরা মুখে ফুটবে হাসির ঝিলিক।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। ঘূর্নিঝড় ’রেমাল’ পরবর্তী কিছু প্রয়োজনে ২০২৩-২৪ কর্মসূচীর আওতায় উপকূলের ১ হাজার ৮ শ’ ৯০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জন প্রতি ৫ কেজি ধানবীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নিজের জমি জায়গা নাই। পরের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চলে। ধান লাগানো, আগাছা পরিষ্কার ও মাটি কাটাসহ যখন যে কাজ পাই সে কাজই করি।

প্রতিদিন সকাল ৭টায় কাজ শুরু করি আর সন্ধ্যায় কাজ শেষ হয়। মজুরী হিসেবে পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রতিটি জিনিসের দাম যে হারে বৃদ্ধি সে অনুযায়ী শ্রমিকের মজুরী কম। জিনিস পাতির যে দাম বাজার করতে গেলে মাথা ঘোরে টেনশন হয়। মজুরী একটু বৃদ্ধি হলে ভাল হবে।’

কুয়াকাটা পৌরসভার মেলাপাড়া এলাকার কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে এবার স্বর্ণা জাতের ধান রোপণ করেছি। ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও তদারকি করছে। রোগ বালাই দমন ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তাঁদের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করছি।

ধান গাছের গ্রোথ ভাল আছে, যদি কোনো দুর্যোগ, রোগ বালাই না হয় তাহলে আশা করছি ধানের ফলন ভালো পাবো। শ্রমিক এবং নিজে ধান ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারে এখন ব্যস্ত আছি। তবে দিন দিন শ্রমিকের মজুরী এবং কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধিতে আবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।‘

এ উপজেলায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়ায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেও কৃষিতে সফলতা পেয়েছে কৃষক।

তবে স্লুইসগেট আটকে প্রভবশালীদের মাছ চাষে কৃষকের দু:শ্চিন্তা বাড়ে চাষাবাদ মৌসুমে। এতে কৃষি ক্ষেত থেকে অতি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নামানো এবং প্রয়োজনের সময় নদী-খালের পানি ওঠানো সম্ভব হয় না কৃষকদের।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষককে দেয়া হচ্ছে প্রনোদনার বীজ, সার। কৃষকের চাষাবাদ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ করে কৃষি প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে কৃষককে। অফিসেও দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।

আগে যারা দিন মজুরীর কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতো, তারা এখন কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ পেয়ে ধান চাষের পাশাপাশি পতিত জমিতে লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শষা সহ মৌসুম ভেদে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। এতে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের পরিবারে। ফলে কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে বেকার যুবকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে।

আমি নিজেও প্রতি দিন এক একটি গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ পরিদর্শন সহ কৃষকের সাথে কথা বলি। কৃষকের যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।

The post উপকূলের আমন ক্ষেতে সবুজের বিপ্লব appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

ndax login

https://ndaxlogi.com

latitude login

https://latitude-login.com

latitude login

latitude login

tangem wallet

tangem

https://tangamwallet.com

https://tangmwallet.com

tangem wallet

https://tangmwallet.com

উপকূলের আমন ক্ষেতে সবুজের বিপ্লব

Update Time : 05:07:26 pm, Monday, 21 October 2024

কলাপাড়া ((বরিশাল) প্রতিনিধি:

উপকূলের ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ফসলের মাঠে কৃষকরা বিলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে বাতাসে ধানের সবুজ পাতায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।

দৃষ্টি জুড়ে ছেঁয়ে গেছে কৃষকের শ্রম আর কষ্টে অর্জিত স্বপ্নের পাতার সবুজ রঙের ঢেউ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঠ জুড়ে কৃষকের জমিতে এখন হাঁটুসমান উঁচু ধানগাছ। আমন ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার এবং সার দেওয়া ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধান গাছের পরিচর্যায় কেউ পরিষ্কার করছেন আগাছা, আবার কেউ দিচ্ছেন রাসায়নিক সার। কেউ কেউ প্রয়োগ করছেন কীটনাশক। দম ফেলার সুযোগ নেই কৃষকদের।

অধিক ফলনের আশায় কৃষকরা এবার স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধানের বিজ রোপণ করছেন। সারা মাঠ ছেঁয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের গুটি স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা, ব্রি-ধান-৪৯, ব্রি-ধান-৫১, ব্রি-ধান-৭৫, ব্রি-ধান-৮৭, ব্রি-ধান-৯৫, ব্রি-ধান-১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের সবুজ পাতার প্রান্তর।

ধানের বাম্পার ফলনের আশায় দিন-প্রহর গুনছে এখন কৃষক। কৃষকের গোলায় সোনার ফসল ধান উঠলেই মায়া ভরা মুখে ফুটবে হাসির ঝিলিক।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। ঘূর্নিঝড় ’রেমাল’ পরবর্তী কিছু প্রয়োজনে ২০২৩-২৪ কর্মসূচীর আওতায় উপকূলের ১ হাজার ৮ শ’ ৯০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জন প্রতি ৫ কেজি ধানবীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নিজের জমি জায়গা নাই। পরের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চলে। ধান লাগানো, আগাছা পরিষ্কার ও মাটি কাটাসহ যখন যে কাজ পাই সে কাজই করি।

প্রতিদিন সকাল ৭টায় কাজ শুরু করি আর সন্ধ্যায় কাজ শেষ হয়। মজুরী হিসেবে পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রতিটি জিনিসের দাম যে হারে বৃদ্ধি সে অনুযায়ী শ্রমিকের মজুরী কম। জিনিস পাতির যে দাম বাজার করতে গেলে মাথা ঘোরে টেনশন হয়। মজুরী একটু বৃদ্ধি হলে ভাল হবে।’

কুয়াকাটা পৌরসভার মেলাপাড়া এলাকার কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে এবার স্বর্ণা জাতের ধান রোপণ করেছি। ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও তদারকি করছে। রোগ বালাই দমন ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তাঁদের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করছি।

ধান গাছের গ্রোথ ভাল আছে, যদি কোনো দুর্যোগ, রোগ বালাই না হয় তাহলে আশা করছি ধানের ফলন ভালো পাবো। শ্রমিক এবং নিজে ধান ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারে এখন ব্যস্ত আছি। তবে দিন দিন শ্রমিকের মজুরী এবং কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধিতে আবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।‘

এ উপজেলায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়ায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেও কৃষিতে সফলতা পেয়েছে কৃষক।

তবে স্লুইসগেট আটকে প্রভবশালীদের মাছ চাষে কৃষকের দু:শ্চিন্তা বাড়ে চাষাবাদ মৌসুমে। এতে কৃষি ক্ষেত থেকে অতি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নামানো এবং প্রয়োজনের সময় নদী-খালের পানি ওঠানো সম্ভব হয় না কৃষকদের।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষককে দেয়া হচ্ছে প্রনোদনার বীজ, সার। কৃষকের চাষাবাদ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ করে কৃষি প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে কৃষককে। অফিসেও দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।

আগে যারা দিন মজুরীর কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতো, তারা এখন কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ পেয়ে ধান চাষের পাশাপাশি পতিত জমিতে লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শষা সহ মৌসুম ভেদে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। এতে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের পরিবারে। ফলে কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে বেকার যুবকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে।

আমি নিজেও প্রতি দিন এক একটি গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ পরিদর্শন সহ কৃষকের সাথে কথা বলি। কৃষকের যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।

The post উপকূলের আমন ক্ষেতে সবুজের বিপ্লব appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.