নগর প্রতিনিধি:
মুলাদীর আওয়ামী লীগ নেতা তারিকুল হাসান খান মিঠুর ক্যাডার হিসেবে সমাধিক পরিচিত এবং শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাস মো. শামীম খান বরিশালে মারধরের শিকার হয়েছেন। শহরের গির্জা মহল্লা এলাকার ঘরোয়া রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করলে পাশের টেবিলে থাকা ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম তারেকসহ অনেকেই প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এরপরেও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা না করে উল্টো হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন, এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তরিকসহ স্থানীয় লোকজন তাকে একচোট পিটুনি দেয়। এই ঘটনার ভিডিওচিত্র নিয়ে বরিশালের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নোংরামি শুরু হয়ে গেছে। দলীয় ঘরনার বিরোধী মতের নেতাকর্মীরা তরিককে হয়রানি করতে উঠেপড়ে লেগেছে, ঠুনকো এই বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আলোচ্চ্য ছাত্রদল নেতার রাজনৈতিক পদপদবি নিয়ে টান দিতেও চাইছে। কিন্তু তরিকসহ সাধারণ জনতা যাকে বেইজ্জতি করেছে, সেই শামীম মুলাদীতে ত্রাস হিসেবে পরিচিত, আওয়ামী লীগ শাসনামলে খুনসহ বহুমুখী অপরাধে সামিল ছিলেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মুলাদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা তারিকুল হাসান খান মিঠুর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে শামীম গত ১৫ বছর কাজিরচর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। স্থানীয় আব্দুর রব হাওলাদারসহ একাধিক খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু তিনি প্রতাপশালী নেতার ছত্র-ছায়ায় থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার অপরাধের লাগাম টানতে পারছিল না। জানা গেছে, শামীমসহ তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎকালীন একাধিক প্রতিবাদ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেও কোনা সুফল পাওয়া যায়নি। বরং যারা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তাদের প্রত্যেককেই আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়রানি করা হয়।
সূত্র জানায়, কাজিরচর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শামীম আওয়ামী লীগের আমলে মির্জাগঞ্জ ফেরিঘাট ইজারা নিয়েও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন। নিজেদের ইচ্ছেমত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে গিয়ে বহু নামি-দামি ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করেন। বছর দুয়েক আগে এক ব্যক্তি ট্রলারে পার হতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ না দেওয়ায় তাকে নদীতে ফেলে দেওয়ার উদাহরণ আছে, যে ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তখন কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে তিনি ছিলেন ধরাছোয়ার বাইরে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠুর দিক-নির্দেশনার আলোকে শামীমসহ ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী গোটা উপজেলায় ত্রাস করে বেড়িয়েছে। দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে এলাকায় কোপাকুপি, খুন-জখম করাসহ সাধারণ অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করেছেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলোচিত সন্ত্রাসী শামীম এলাকা ছেড়ে বরিশাল শহরে আত্মগোপনে আছেন।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে কাজিরচর বিএনপি কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শামীম এলাকায় ব্যাপক ত্রাস করলেও তিনি সেইভ সাইডে আছেন। উপজেলার শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে আঁতাত করায় কোনো মামলায় অভিযুক্ত হতে হয়নি, যা নিয়েও তৃণমূলে ক্ষোভ আছে।
৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে থাকা এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা না হলেও তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমানকে নিয়ে নানান কটূক্তি করে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, বরিশাল শহরে লুকিয়ে থাকা শামীমসহ ১০/১২ জন রোববার মধ্যহ্নভোজ করতে গির্জা মহল্লা এলাকায় ঘরোয়া রেস্টুরেন্টে আসেন। এবং সেখানে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তিনি পূর্বের ন্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমানের নাম নিয়ে খিস্তিখেউর করেন। ওই সময় পার্শ্ববর্তী টেবিলে খাবার খেতে থাকা ছাত্রদল নেতা তরিকসহ কয়েকজন তাদের নাম পরিচয় জানতে চাইলে শামীমসহ তার সঙ্গীরা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। এতে ছাত্রদল নেতা তরিকসহ অন্যরা সংক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি প্রতিবাদ করলে, তাদের ওপর চড়াও হন শামীম।
রোববারের ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শামীমকে চড়-থাপ্পড় মার পূর্বে তাকে ক্ষমা প্রার্থনার একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি, বরং নিজের মন্তব্যে অনঢ় থাকেন, তাতেই ক্ষুব্ধ হন ছাত্রদল নেতা তরিকসহ সকলে। পরক্ষণে তাকে পুলিশে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে শেষত্বক হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। মূলত এই সন্ত্রাসীকে হেনস্থা করার সিসি ক্যামেরায় ধারণ ভিডিও নিয়ে তরিকবিরোধী অংশটি নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। এই সবর্ণ সময়ে দুসময়ের কাণ্ডারি ও ত্যাগি তরিককে ঠুকনো ওই ঘটনায় শায়েস্তা করা গেলে আগামীতে ফায়দা লোটার সুযোগ তৈরি হবে, এমন ভাবনায় বিরোধী অংশটি মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এক্ষেত্রে ছাত্রদল নেতা কারও কারও বিরুদ্ধে তরিকুল ইসলাম তারেকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আছে। আবার কেউ কেউ ভিডিওচিত্রটি ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিএনপির হাইকমান্ডের কাছেও পাঠিয়ে প্রতিবাদী ছাত্রদল নেতাকে পদচ্যুৎ করতে চাইছে। অবশ্য বিষয়টি আলোচনায় আসতেই বিষয়টিতে হাইকমান্ড জোর নজর দিয়েছে এবং বরিশাল ও মুলাদী থেকে যুবলীগ নেতা শামীমের অতীত সন্ত্রাসের ফিরিস্তি খুঁজতে শুরু করেছে।
যদিও ছাত্রদল নেতা তরিক নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলছেন, তিনি রোববার দুপুরে ঘরোয়া রেস্তোরাঁর টেবিলে খাবার খেতে গিয়ে শুনতে পান পাশর্^বর্তী টেবিলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিবাদ করায় শামীমসহ তার ক্যাডার বাহিনী চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা ছুটে আসেন, শামীমকে আটক করে একচোট দেন। তবে এর আগে তাকে ক্ষমা প্রার্থনাও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা শোনেননি বরং খিস্তিখেউর অব্যাহত রাখেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দের কথা বললে তখন হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান।
মুলাদীর সুশীল মহল বলছে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিঠুর ছত্র-ছায়ায় থেকে শামীম গোটা উপজেলা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। খুন-খারাপিসহ টেন্ডারবাজি করে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। রহস্যজনক কারণে তাকে এখন পর্যন্ত কোনো মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীকে অচীরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছে মুলাদীতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি এবং তাদের স্বজনেরা।’
The post মুলাদীর আলোচিত শামীম খান বরিশালে জনরোষে!বিএনপি নিয়ে কটূক্তি করে খেলেন পিটুনি appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.