খুলনার বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়নে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভার শুরুতে উপাচার্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ সকল শহিদ, কটকা ট্র্যাজেডিতে শাহাদাৎবরণকারী শিক্ষার্থীদের স্মরণ এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন। একই সাথে ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে যে সকল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের আশু সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সভায় উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও বিভিন্ন সংগঠনসহ আপামর সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের এবং বিশেষ করে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যে গবেষণাগুলো করবো, তা বাংলাদেশের উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এমনভাবে দক্ষ হয়ে উঠবে, তারা যেখানে যে কাজই করুক- তারা তাদের একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন এমনভাবে পরিচালিত হবে, যেন তা সমাজের এবং জাতির টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনাদের সকলের সহযোগিতা এবং বর্তমান প্রশাসনের গতিশীলতা দিয়ে ‘ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয়’ এ পরিণত করতে চাই।
উপাচার্য আরও বলেন, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতন হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত ২০ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্টবৃন্দ, প্রকল্প পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকসহ প্রায় ৭০ জন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। দায়িত্ব নেওয়ার পর অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সংকটময় ওই সময়টাতে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্থিতিশীল পরিবেশ না থাকলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ব্যতিক্রম। শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় এ সংকট দ্রুত কেটে যায়। ক্লাসের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে স্বরূপে ফিরে আসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে গত এক মাসে বর্তমান প্রশাসনের বেশকিছু পদক্ষেপ এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত অভিলক্ষ্য পূরণে শিক্ষা ও গবেষণা, আন্তর্জাতিক কোলাবরেশন ও র্যাঙ্কিং, দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশাসনিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুসংহতকরণ ও শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে, অচিরেই তা দূর করতে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংকটের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মতবিনিময় সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করি। এ ছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট ও পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ইউএনবির ব্যুরো প্রধান ও খুলনা গেজেটের যুগ্ম সম্পাদক শেখ দিদারুল আলম, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মো. রফিউল ইসলাম টুটুল, মানবজমিনের ব্যুরো প্রধান মো. রাশেদুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন, সময়ের খবরের স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম নূর, দিনকালের খুলনা প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের ব্যুরো এডিটর মাহবুবুর রহমান মুন্না, দৈনিক প্রবাহের চিফ রিপোর্টার মুহাম্মদ নুরুজ্জামান, দেশ টিভির খুলনা প্রতিনিধি নূর ইসলাম রকি এবং দৈনিক কালবেলার খুলনা প্রতিনিধি বশির হোসেন।
এ সময় সাংবাদিকদের মধ্য থেকে বিগত সরকারের আমলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
মতবিনিময় সভায় খুলনার বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এএজে
The post খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা ভিসির appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.