6:54 pm, Sunday, 24 November 2024

তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আসেন ৮টায়, ডাক্তার ১০টায়!

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত রোগী আসে চিকিৎসার আশায়। কিন্তু চিকিৎসার বদলে ভোগান্তি বেশি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের। কেননা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ডাক্তার আসা যাওয়া করে তাদের মনমত। নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সময়ে তারা হাসপাতলে আসছেন। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা ডাক্তারদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের। সরকারি নিয়মের নেই কোন বালাই তাদের কাছে। তারা সরকারের চাকরি করবে কিন্তু সরকারের দেওয়া নিয়ম মানতে নারাজ।

সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের চেম্বারে বসার কথা থাকলেও তা মানছেন না বেশিরভাগ চিকিৎসক। টিকিট কাউন্টারের লোক আসেন সকাল ৯ টার পর আর সকাল ১০টার আগে হাসপাতালে প্রবেশ করেন না কোন ডাক্তার। অথচ সকাল ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে রোগীরা টিকিট কাউন্টার ও চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। দু-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও যখন চিকিৎসকের দেখা পান না, তখন ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ চলেও যান। হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র এটি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঠিক তদারকির অভাব এর কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিনও সকাল ১০ টার আগে হাসপাতালে কোন ডাক্তার আসেন না। রোগীরা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ১০ টার পর অফিসে প্রবেশ করে প্রথমে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দেওয়া উপহার গুলো নিয়ে তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার রুমের সামনে গিয়ে ডিজিটাল মেশিনে হাজিরা দিয়ে কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রোগী দেখতে শুরু করেন তারা।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিত্র অনুযায়ী দেখা গেছে সকাল ৯ টায় মেডিকেল অফিসার, কমিউনিটি আই সেন্টার, আইএমসিআই কর্ণার, টিকিট কাউন্টারের কক্ষটি তালা দেওয়া রয়েছে। বেলা ১০ টা পেরিয়ে গেলেও অনুপস্থিত রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তাকে সকাল ১০ টা ১০ মিনিটের পর হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

বারাসাত এলাকার রহিম মোল্যা বলেন, আমার চোখের সমস্যা। আমি গত সপ্তাহে একবার আসছিলাম ৩ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখিয়ে গেছি। আজ সকাল ৭ টায় আইছি। এখন বেলা অনেক হইলো ডাক্তার তো আসে না দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে।

ইখড়ি এলাকার সুজ্জাল শেখ বলেন, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সকাল ৮ টায় হাসপাতালে আসছি ডাক্তারের কাছে। এখন প্রায় ১০ টা বাজে এখনো ডাক্তার আসেন নাই। এখন শুনতেছি ডাক্তার আসতে আরো সময় লাগবে।

পানতিতা এলাকার রুয়েল মোল্যা জানান, তার শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন সকাল ৭ টায়। সকাল সাড়ে ৯ টায় টিকিট কাউন্টারের লোক আসলে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিয়ে বসে আসেন প্রায় তিন ঘন্টা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দুই জন কর্মচারী বলেন, সকাল ১০ টায় ডাক্তার আসবে। এ জন্য আমরা হাসপাতাল পরিষ্কার করছি। ডাক্তাররা ১০ টার আগে কখনো হাসপাতালে আসেন না বলেও জানান তারা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মোট ১৭৪ টি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১৮ টি পদসহ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ৮০ টি পদ শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমান বলেন, ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। শীঘ্রই চিকিৎসা সংকটের সমস্যা সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।

খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ড. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, সেই অনিয়ম যদি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধিমালা পরিপন্থী হয় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/এনএম

The post তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আসেন ৮টায়, ডাক্তার ১০টায়! appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আসেন ৮টায়, ডাক্তার ১০টায়!

Update Time : 04:07:33 pm, Sunday, 24 November 2024

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত রোগী আসে চিকিৎসার আশায়। কিন্তু চিকিৎসার বদলে ভোগান্তি বেশি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের। কেননা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ডাক্তার আসা যাওয়া করে তাদের মনমত। নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সময়ে তারা হাসপাতলে আসছেন। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা ডাক্তারদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের। সরকারি নিয়মের নেই কোন বালাই তাদের কাছে। তারা সরকারের চাকরি করবে কিন্তু সরকারের দেওয়া নিয়ম মানতে নারাজ।

সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের চেম্বারে বসার কথা থাকলেও তা মানছেন না বেশিরভাগ চিকিৎসক। টিকিট কাউন্টারের লোক আসেন সকাল ৯ টার পর আর সকাল ১০টার আগে হাসপাতালে প্রবেশ করেন না কোন ডাক্তার। অথচ সকাল ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে রোগীরা টিকিট কাউন্টার ও চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। দু-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও যখন চিকিৎসকের দেখা পান না, তখন ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ চলেও যান। হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র এটি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঠিক তদারকির অভাব এর কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিনও সকাল ১০ টার আগে হাসপাতালে কোন ডাক্তার আসেন না। রোগীরা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ১০ টার পর অফিসে প্রবেশ করে প্রথমে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দেওয়া উপহার গুলো নিয়ে তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার রুমের সামনে গিয়ে ডিজিটাল মেশিনে হাজিরা দিয়ে কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রোগী দেখতে শুরু করেন তারা।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিত্র অনুযায়ী দেখা গেছে সকাল ৯ টায় মেডিকেল অফিসার, কমিউনিটি আই সেন্টার, আইএমসিআই কর্ণার, টিকিট কাউন্টারের কক্ষটি তালা দেওয়া রয়েছে। বেলা ১০ টা পেরিয়ে গেলেও অনুপস্থিত রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তাকে সকাল ১০ টা ১০ মিনিটের পর হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

বারাসাত এলাকার রহিম মোল্যা বলেন, আমার চোখের সমস্যা। আমি গত সপ্তাহে একবার আসছিলাম ৩ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখিয়ে গেছি। আজ সকাল ৭ টায় আইছি। এখন বেলা অনেক হইলো ডাক্তার তো আসে না দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে।

ইখড়ি এলাকার সুজ্জাল শেখ বলেন, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সকাল ৮ টায় হাসপাতালে আসছি ডাক্তারের কাছে। এখন প্রায় ১০ টা বাজে এখনো ডাক্তার আসেন নাই। এখন শুনতেছি ডাক্তার আসতে আরো সময় লাগবে।

পানতিতা এলাকার রুয়েল মোল্যা জানান, তার শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন সকাল ৭ টায়। সকাল সাড়ে ৯ টায় টিকিট কাউন্টারের লোক আসলে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিয়ে বসে আসেন প্রায় তিন ঘন্টা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দুই জন কর্মচারী বলেন, সকাল ১০ টায় ডাক্তার আসবে। এ জন্য আমরা হাসপাতাল পরিষ্কার করছি। ডাক্তাররা ১০ টার আগে কখনো হাসপাতালে আসেন না বলেও জানান তারা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মোট ১৭৪ টি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১৮ টি পদসহ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ৮০ টি পদ শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমান বলেন, ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। শীঘ্রই চিকিৎসা সংকটের সমস্যা সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।

খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ড. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, সেই অনিয়ম যদি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধিমালা পরিপন্থী হয় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/এনএম

The post তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আসেন ৮টায়, ডাক্তার ১০টায়! appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.