3:34 am, Monday, 25 November 2024

ফুলতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একীভূত শিক্ষা মেলা’

জিনিয়া ইসলাম সানার বয়স মাত্র ১০ বছর। জন্মের পরপরই অসুস্থতার কারণে ডান পা বাঁকা হয়ে যায়। এরপর সেই বাঁকা পা নিয়েই চলতে হচ্ছে জিনিয়াকে। কখনো হুইল চেয়ারে, কখনো বা ওয়াকারে করে অন্যের সহায়তায় চলাফেরা করে সে।

জন্মের প্রতিকূলতা বাঁধা হতে পারেনি জিনিয়ার। বাড়ির পাশের বড়িয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। দাদী আনজিরা বেগমের সহায়তায় নিয়মিত স্কুলে যায়। এখনো শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারে না জিনিয়া।

রোববার (২৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী খুলনার ফুলতলা উপজেলার ডাবুর মাঠে জিনিয়া ইসলামের মতো শত শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল মেলার।

সেখানে নাগরদোলায় চড়ে, চরকিতে উঠে, গান শুনে আনন্দে দিন কাটিয়েছে তারা। `একীভূত শিক্ষা মেলা’ নামের ওই মেলার আয়োজন করেছিল ইউএসএআইডির ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্প’। মেলায় ফুলতলা উপজেলার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ।

দিনব্যাপী এ মেলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সেবা ও সহায়তার সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২০ টি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ, শিক্ষার্থীদের তৈরি চারুকার্য, প্রতিবন্ধী অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেটসহ তাদের কার্যক্রম তুলে ধরে।

মেলায় একটি কবিতা আবৃত্তি করে জিনিয়া। মা ও দাদীর সঙ্গে ঘুরে ঘরে দেখে পুরো মেলা প্রাঙ্গন। শিশুদের জন্য আয়োজিত নাগরদোলা, চরকিসহ বিভিন্ন ইভেন্টে চড়ে আনন্দ করে।

এ সময় কথা হলে জড়ানো কথায় জিনিয়া ইসলাম বলে, ‘নাগরদোলায় চড়িছি, ঘোড়ায় চড়িছি। সবগুলোতে কয়েকবার করে চড়িছি। আমার বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজা করিছি।’
ওই মেলায় এসেছিল দেবদাস অর্ক। সে তরুণ সংঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। চরকিতে চড়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। কথা হলে সে বলে, ‘বন্ধুরা সবাই আইছে। ঘুরে বেড়াচ্ছি, সবার সাথে খেলা করছি, খুব মজা করতিছি।’

আয়োজকরা জানান, মেলা আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য ছিল সমাজে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ সব শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ ও একীভূত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। প্রকল্পটি দেশের ১৬টি উপজেলার এক হাজার ৫৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ হাজার শিক্ষক ও আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরাসরি কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীসহ সব শিশুর জন্য শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ ধরনের মেলার আয়োজন সব স্তরে সচেতনতা বাড়াতে ও একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম। ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীম জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. রুহুল আমিন, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের অফিস অব এডুকেশনের পরিচালক ডেনিস ও’ টুল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্পের’ ডেপুটি চিফ অব পার্টি জাকারিয়া রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া প্রতিবন্ধীসহ প্রতিটি শিশুর অধিকার। আর এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য একীভূত শিক্ষার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে স্থানীয় কমিউনিটির সচেতনতা বাড়াতেই ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্পের’ এই আয়োজন।

খুলনা গেজেট /এমএম

The post ফুলতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একীভূত শিক্ষা মেলা’ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

ফুলতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একীভূত শিক্ষা মেলা’

Update Time : 01:06:25 am, Monday, 25 November 2024

জিনিয়া ইসলাম সানার বয়স মাত্র ১০ বছর। জন্মের পরপরই অসুস্থতার কারণে ডান পা বাঁকা হয়ে যায়। এরপর সেই বাঁকা পা নিয়েই চলতে হচ্ছে জিনিয়াকে। কখনো হুইল চেয়ারে, কখনো বা ওয়াকারে করে অন্যের সহায়তায় চলাফেরা করে সে।

জন্মের প্রতিকূলতা বাঁধা হতে পারেনি জিনিয়ার। বাড়ির পাশের বড়িয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। দাদী আনজিরা বেগমের সহায়তায় নিয়মিত স্কুলে যায়। এখনো শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারে না জিনিয়া।

রোববার (২৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী খুলনার ফুলতলা উপজেলার ডাবুর মাঠে জিনিয়া ইসলামের মতো শত শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল মেলার।

সেখানে নাগরদোলায় চড়ে, চরকিতে উঠে, গান শুনে আনন্দে দিন কাটিয়েছে তারা। `একীভূত শিক্ষা মেলা’ নামের ওই মেলার আয়োজন করেছিল ইউএসএআইডির ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্প’। মেলায় ফুলতলা উপজেলার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ।

দিনব্যাপী এ মেলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সেবা ও সহায়তার সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২০ টি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ, শিক্ষার্থীদের তৈরি চারুকার্য, প্রতিবন্ধী অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেটসহ তাদের কার্যক্রম তুলে ধরে।

মেলায় একটি কবিতা আবৃত্তি করে জিনিয়া। মা ও দাদীর সঙ্গে ঘুরে ঘরে দেখে পুরো মেলা প্রাঙ্গন। শিশুদের জন্য আয়োজিত নাগরদোলা, চরকিসহ বিভিন্ন ইভেন্টে চড়ে আনন্দ করে।

এ সময় কথা হলে জড়ানো কথায় জিনিয়া ইসলাম বলে, ‘নাগরদোলায় চড়িছি, ঘোড়ায় চড়িছি। সবগুলোতে কয়েকবার করে চড়িছি। আমার বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজা করিছি।’
ওই মেলায় এসেছিল দেবদাস অর্ক। সে তরুণ সংঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। চরকিতে চড়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। কথা হলে সে বলে, ‘বন্ধুরা সবাই আইছে। ঘুরে বেড়াচ্ছি, সবার সাথে খেলা করছি, খুব মজা করতিছি।’

আয়োজকরা জানান, মেলা আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য ছিল সমাজে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ সব শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ ও একীভূত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। প্রকল্পটি দেশের ১৬টি উপজেলার এক হাজার ৫৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ হাজার শিক্ষক ও আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরাসরি কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীসহ সব শিশুর জন্য শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ ধরনের মেলার আয়োজন সব স্তরে সচেতনতা বাড়াতে ও একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম। ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীম জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. রুহুল আমিন, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের অফিস অব এডুকেশনের পরিচালক ডেনিস ও’ টুল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্পের’ ডেপুটি চিফ অব পার্টি জাকারিয়া রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া প্রতিবন্ধীসহ প্রতিটি শিশুর অধিকার। আর এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য একীভূত শিক্ষার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে স্থানীয় কমিউনিটির সচেতনতা বাড়াতেই ‘সবাই মিলে শিখি প্রকল্পের’ এই আয়োজন।

খুলনা গেজেট /এমএম

The post ফুলতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একীভূত শিক্ষা মেলা’ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.