খুলনার বাজারগুলোতে হঠাৎ বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই সংকট। তবে সাধারণ ক্রেতারা কৃত্রিম সংকট আখ্যা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত বলে মন্তব্য করছেন।
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে খোলা তেল। যেখানে এক সপ্তাহ আগেও খোলা সয়াবিন তেল ১৮৮ টাকায় লিটারে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই খোলা তেল বিক্রি করছে ১৯৫-২০০ টাকা লিটারে। বেড়েছে ৭ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে।
খুলনা নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতে বোতলজাত তেল নেই বললেই চলে। কি কারণে হঠাৎ খুলনার বাজারে বোতলজাত তেলের উপস্থিতি কমে গেছে, তার কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খোলা বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি, কিন্তু বোতলজাত তেলের মূল্যই কম। ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীরা ৮১৫ থেকে ৮১৮ টাকায় বিক্রি করছেন। একইসাথে ২লিটার সয়াবিন তেল ৩৩৪ টাকা ও ১ লিটার তেল ১৬৭ টাকায় বিক্রি করছেন।অপরদিকে খুচরায় খোলা তেল ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কমে না। এটি কঠোরভাবে দমন করা উচিত। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ না থাকলে আমরা কি করবো? আমরা ব্যবসায়ী যেমন আনবো, তেমন দামে বিক্রি করবো।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে সয়াবিন তেল কিনতে আসা সঞ্জয় দাস খুলনা গেজেটকে বলেন, আমরা গরীব মানুষ একটু খোলা তেল কিনমু। কিন্তু বড় বড় বোতল থাকায় তা কেনার সামার্থ নেই।
সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা সুলতানা খুলনা গেজেটকে বলেন, সপ্তাহ আগে ২ লিটার তেল ৩৩৪ টাকায় কিনেছেন তিনি। অথচ আজ একই পরিমান তেল ৩৬০ টাকায় কিনেছেন। মূল্য লেখাস্থান ঘষে সেখানে অতিরিক্ত ১৭ টাকা যোগ করে ৩৬০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককের কাছে অভিযোগ করেছেন।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মেসাস রেজা ব্রাদার্সের মালিক মো: শাহা আলম সরদার খুলনা গেজেটকে বলেন, বর্তমানে এক মন লুস সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, দু’দিনের ব্যবধানে ২০০ টাকা কমেছে। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা কেন বেশি দামে বিক্রি করছেন তা তারা জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ৭ টি তেল রিফাইনারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা সকলে একইসুতায় গাঁথা। একটি কোম্পানী ডিও বন্ধ করে দিলেই বেড়ে যায় তেলের দাম। তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেছেন।
একই বাজারের অপর ব্যবসায়ী উত্তম দাশ খুলনা গেজেটকে বলেন, খোলা তেলের দাম বৃদ্ধির খবর জেনে বিভিন্ন কোম্পানীর কর্মচারীরা তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগাম খবর জানিয়ে গেছে। রীতিমতো তারা বোতলে নতুন মূল্য সংযোজন করে বাজারে নতুন বোতল ছাড়ার পরিকল্পনাও নিয়েছে। এ কারণেই অর্ডার করলে ১ থেকে ২ কার্টুন সয়াবিন তেল দিচ্ছে।
ধর্মসভা মন্দির সংলগ্ন সদয়পাতি দোকানের মালিকের ছোটভাই সুমন এ প্রতিবেদককে বলেন, বোতলের তেলের জন্য বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিকে অর্ডার দেওয়া হয়। তারা তেল দেয় না। চাইলে প্রয়োজনের তুলনায় কম দেয়।
পিটিআই মোড়ের ব্যবসায়ী আতিকুজ্জামান বলেন, ১৫-২০ দিন আগেও লুস তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তা তিনি ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। বোতলজাত কোন সয়াবিন তেল গত একসপ্তাহ ধরে কোম্পানীর কাছে চেয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা। তারা মূল্যবৃদ্ধির আগাম খবর জানিয়ে যাচ্ছেন।
রোড হোম রেস্টুরেন্টের কর্মচারী উৎপল এ প্রতিবেদককে বলেন, সকাল থেকে ২ লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য আহসান আহমেদ রোড, সাউথসেন্ট্রাল রোড ও পিটিআই মোড় ঘুরে কোথাও পাননি। সংকটের কারণ হিসেবে তিনি মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টা বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের দোকানদার মারুফ বলেন, খোলা তেল বিক্রি করি না, খোলা তেল ২০০ টাকা আর বোতলজাত তেলের লিটার ১৭৫ টাকা।
নগরীর খালিশপুরের ব্যবসায়ী মানিক বলেন, বোতলজাত তেল কোম্পানীভেদে ১৬৭ টাকা থেকে ১৮২ টাকা লিটারের রয়েছে। তবে বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি।
কনসাস কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের (সিসিএস) নির্বাহী কমিটির সদস্য কামাল মোস্তফা খুলনা গেজেটকে বলেন, কোম্পানী সরবরাহ কমিয়েছে। বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা লিটার, আর খোলা সয়াবিন তেল লিটার ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি করছে। ফলে কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার জন্য বোতলজাত তেল ঢেলে খোলা বিক্রি করছে। আর বলছে সরবরাহ কম। এটি একটি সিন্ডিকেট। এছাড়া যেখানে খোলা সয়াবিন তেল কিছুদিন আগেও ১৭৮ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে, সেটা এখন ১৯৫-২০০ টাকায় বিক্রি করছে। হঠাৎ দাম কিভাবে বাড়লো। অথচ এই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি বা সংকট থাকার কথা নয়। এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতাদের নাজেহাল করার অপচেষ্টা চলছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম খুলনা গেজেটকে বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। বোতলজাত তেল ঢেলে বিক্রির সুযোগ নেই, এটি বেআইনী। বাজার তদারকি করে এমন ঘটনার প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম
The post সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.