গৌরনদী ((বরিশাল) প্রতিনিধি:
প্রশাসনের বিনা অনুমতিতেই বরিশালের সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কয়েকদিন যাবত মেলায় পণ্য সামগ্রী বোকেনা হচ্ছিল। ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী মহলের (মেলার আয়োজকরা) বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের দুই-তৃতীয়াংশ মাঠ দখল করে গত ৩ সপ্তাহ ধরে মেলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
এতে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা, পাঠদান ও খেলাধূলাসহ শিক্ষার পরিবেশ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়সহ গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ থেকে ৩’শ শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এ মেলায় এসে ঘোরাফেরা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য চাইলে প্রশাসনের টনক নড়ে। অবশেষে সোমবার রাতে উপজেলা প্রশাসন এস্কেভেটর ও রোলার মেশিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয় ষ্টল।
সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী ও ষ্টল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেলার প্রধান আয়োজক আজগর সরদার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর থেকে ওই বিদ্যালয়ের দুই তৃতীয়াংশ মাঠের ভেতর চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ৬৮টি ষ্টল ও একটি নাগরদোলা নির্মাণ করেন। এরপর প্রতিটি স্টল বরাদ্দের জন্য ৫০ হাজার টাকা নির্ধারন করেন।
ধার্য্যকৃত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ষ্টল মালিকরা ৪০/৫০টি ষ্টলে মালামাল তুলে গত ২/৩ সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা করে আসছেন। ওই সরকারি বিদ্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে দিন-রাত স্টলগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছে। ওই বিদ্যালয়সহ গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২/৩’শ শিক্ষার্থীকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
মায়ের দোয়া কসমেটিক্স স্টলের মালিক মো, সোহাগ হোসেন সরদার বলেন, মেলার প্রধান আয়োজকে দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে আমি মেলায় তিনটি স্টল বরাদ্দ নিয়েছি। বরাদ্দকৃত ৩টি স্টলে মালামাল (পণ্য সামগ্রী) উটিয়ে গত ২০ দিন ধরে বেচাকেনা করে আসছি। প্রশাসনের অনুমতি পেলে মেলায় বেশি লোকজন আসতো ও প্রতিদিন ৫০/৬০ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এখন ৩/৪ হাজার টাকা বিক্রি করে যা লাভ পাই, তা থেকে ষ্টাফদের খরচ দিয়ে লসে আছি। তিনি আরো বলেন, বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘুরতে আসে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা নষ্ট হচ্ছে।
দর্শনার্থী আগৈলঝাড়া আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের ছাত্র হুদয় হোসেন, তামিম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলায় ঘুরতে এসে দেখি মেলা ভাল ভাবে জমে উঠেনি। তাই ঘুরে ঘুরে স্টলগুলো ও দর্শনার্থীদের দেখছি।
গৌরনদী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী আরাভি রহমান জানায়, ক্লাসের স্যারকে না বলে মেলায় ঘুরতে এসেছে।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অধিকাংশ স্টলে পন্য সামগ্রী তুলে বেচাকেনা করার কারণে মেলার আয়োজনকে গত সপ্তাহে জানানো হয়েছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাকে (আজগর) মেলার স্টল ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওয়ালিউল্লাহ্ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেলার প্রধান আয়োজক আজগর সরদার স্কুল মাঠে মেলার করার অনুমতি চাইলে আমি শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে তাকে মৌখিক অনুমতি দিলে সে (আজগর) গত ১৬ আক্টোবর বিদ্যালয় মাঠের ভেতর টিনের বেড়া দেওয়ার ও স্টল নির্মাণ কাজ গুরু করেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আনতে না পারলে মেলার স্টল ভেঙ্গে নিতে হবে। গত এক মাসেও প্রশাসনের অনুমতি আনতে না পারায় তাকে মেলার স্টল ভেঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। আজগর আমাদের সাথে টালবাহানা করে আসছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে মেলার অনুমতি নিতে এসেছিল। পরিপত্রে স্কুল মাঠে মেলায় অনুমতি দেওয়ার বিধান নেই। তাই আমি মেলার অনুমতি দেইনি। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ষ্টলে বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অবৈধ, ভেঙ্গে দেওয়া হবে ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, অবৈধ ভাবে স্কুল মাঠ দখল করে ষ্টল নির্মাণ করায় সোমবার রাতে ষ্টল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
The post গৌরনদীতে বিদ্যালয়ের মাঠে মেলার ষ্টল গুড়িয়ে দিলো প্রশাসন appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.