বিশেষ প্রতিনিধি:
বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে চরমোনাই দরবারের মাদ্রাসার বিশাল ময়দান লাখো মুসল্লির কলরবে মুখর হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই অসংখ্য বাস, লঞ্চ ও অন্য যানবাহনে চরমোনাইমুখী মানুষের ভিড় শুরু হয়।
আজ বুধবার সকালেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাদ্রাসার বিশাল আয়তনের দুটি মাঠ। এরপর জোহরের নামাজ শেষে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল।
উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, চরমোনাই দরবারের এই ঐতিহাসিক মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়। এই মাহফিল হলো পথভোলা, পথভ্রষ্ট মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। এ জন্যই এই মাহফিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এখানে যাঁরা আসবেন, দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাঁদের আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন, তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরমোনাই দরবারের মাদ্রাসার মূল মাঠ ও ৩ নম্বর মাঠ নিয়ে দুটি সুবিশাল মাঠে সমবেত হয়েছেন লাখো ভক্ত, অনুসারী ও সাধারণ মুসল্লি। মাঠ দুটিকে শামিয়ানায় আবৃত করে দেওয়া হয়েছে।
আয়োজকেরা বলেন, মঙ্গলবার থেকেই বাস-লঞ্চে এখানে মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন। আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা আসবেন। মাহফিল চলবে তিন দিন। এই তিন দিনই মুসল্লিদের স্রোত থাকবে এই মাহফিলে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম আরও বলেন, যাঁরা চরমোনাইয়ে নতুন এসেছেন, তাঁরা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখিরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দিন। দিল থেকে বড়ত্ব, আমিত্ব ভাব দূর করে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে চরমোনাই থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আয়োজকেরা জানান, প্রতিবছর বাংলা মাস হিসাব করে চরমোনাইয়ে অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাসে দুটি মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে অগ্রহায়ণে কিছুটা ছোট পরিসরে এবং ফাল্গুন মাসে সবচেয়ে বড় পরিসরের মাহফিল আয়োজন হয়।
ইসলামী যুব আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম সানাউল্লাহ বলেন, মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার হওয়ায় ওই দিন দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে চরমোনাই মাদ্রাসা ময়দানে। এরপর শনিবার সকাল আটটায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাহফিলের সমাপ্তি হবে।
মাহফিল উপলক্ষে গঠিত গণমাধ্যম উপকমিটির সদস্য কে এম শরীয়াতুল্লাহ বলেন, চরমোনাই বার্ষিক মাহফিলে সাতটি মূল বয়ানের মধ্যে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম পাঁচটি এবং নায়েবে আমির ও শায়েখে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম দুটি বয়ান করবেন। এ ছাড়া চরমোনাই কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় দরবারগুলোর পীর এবং শীর্ষস্থানীয় ওলামারা মাহফিলে বয়ান করবেন।
মাহফিল উপলক্ষে সারা দেশ থেকে কয়েক লাখ মুসল্লি সড়ক ও নৌপথে প্রতিবছর এখানে সমবেত হন। লাখো মুসল্লির শৃঙ্খলার জন্য কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে।
শরীয়াতুল্লাহ জানান, আগত মুসল্লিদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীন আরও ৪০ জন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত আছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের জন্য উভয় মাঠের চারদিকে সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ আছে সহস্রাধিক মানসম্মত শৌচাগার, অজু ও গোসলখানা।
তিন দিনব্যাপী মাহফিলের প্রথম দিন আজ সকালে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন হয়। দ্বিতীয় দিন সারা দেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষ দিন সকালে সারা দেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজন করবে বিশেষ মতবিনিময় সভা।
The post কীর্তনখোলা নদীর তীরে লাখো মুসল্লির কলরবে শুরু চরমোনাইয়ের মাহফিল appeared first on Amader Barisal - First online Newspaper of Greater Barisal - Stay with Barisal 24x7.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024