বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে পুঁজি পাচার বাবদ বাংলাদেশ বছরে গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সরকারি নথি ও বৈশ্বিক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তবে সময় স্বল্পতার কারণে অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি বলে ১২ সদস্যের কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে দ্য ডেইলি স্টার। তবে
বছরের পর বছর ধরে চলা অব্যবস্থাপনা ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ধোঁয়াশায় জর্জরিত অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানাতে প্রতিবেদন তৈরিতে গত ২৮ আগস্ট গঠিত এই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কীভাবে অর্থ পাচার হয় এবং কীভাবে বন্ধ করা যায় তা আমরা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
এর আগে গত ২ নভেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, গত ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর দেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, কর ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ভুল চালানের কারণে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শীর্ষক ২৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যুসহ ২২টি অধ্যায় থাকবে।
প্রতিবেদনটি রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং পরদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছি।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।
এই কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ ও কানাডার আদালতের বিষয়ে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের বিষয়েও আমাদের পর্যবেক্ষণ আছে।’
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের দেওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে।
কমিটির আরেক সদস্য বলেন, মোট সরকারি ঋণ বিশেষ করে বিদেশি অর্থায়নে চলমান ২১৫টি প্রকল্পের আগামী চার বছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কমিটি বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি ব্যয় যৌক্তিককরণ, মন্দ ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- অর্থনীতিবিদ একে এনামুল হক, কাজী ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান, সেলিম রায়হান, শারমিন নীলোর্মি, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ফেরদৌস আরা বেগম, জাহিদ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ তামিম এবং জনশক্তি রপ্তানি বিশেষজ্ঞ তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী।
খুলনা গেজেট/কেডি
The post আ.লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছরে পাচার ১৪ বিলিয়ন ডলার appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.