রাঙাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
একদিকে পাকা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত চাষীরা, অন্যদিকে মাঠের এক কোনে বড় হচ্ছে তরমুজের চারা। যুগের সাথে তালমিলিয়ে কৃষকরাও জানান দিচ্ছেন পিছিয়ে নেই তাড়াও। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সোনালী রংয়ে ছেয়ে থাকা পাকা আমন ধান কাটার পরেই কৃষকরা স্বপ্ন বুনবেন ঢোড়াকাটা কালো কিংবা সবুজ রংয়ের তরমুজে।
তরমুজ চাষের জন্য জমি উপযোগী হতে বিলম্ব হয় ।শুধু মূল জমিতে আমন ধান থাকায়। তাই আগাম তরমুজ চাষের জন্য কৃষক পলিব্যাগে তরমুজের চারা উৎপাদন করে। তরমুজের উর্বর‚ভুমি খ্যাত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী চর ও চরমোন্তাজের ৬ নং ওয়ার্ডসহ একাধিক জায়গায় তরমুজের প্রজেক্টের চিত্র একই। মূল জমিতে আমন ধান কাটার পরে জমি ফাঁকা হলে সেখানে শুরু হয় তরমুজ চাষের উৎসব। রোদে জমি শুকানো,কয়েক ধাপে চাষাবাদ, প্রস্তুত জমিতে তরমুজের মাদা (গোলাকার মাটির বেড) তৈরি। প্রস্তুতকৃত এই মাদায় তরমুজের চারা রোপণের পূর্বেই ক্ষেতের পাশে, বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠের কোনে সুবিধাজনক জায়গায় পলিব্যাগে লাগানো হয় তরমুজের বীজ। পলিতে লাগানো চারার বয়স যখন একমাস ছুই ছুই ঠিক তখনই ২০-২৫ দিন বয়সী এ চারা লাগানো হয় প্রস্তুতকৃত মাদায়। যার ফলে ২০-২৫ দিন আগে ফলন পাওয়াসহ আগাম তরমুজে চড়া দাম পেয়ে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন কৃষকরা।
এছাড়াও পলিব্যাগে করা চারা প্রচন্ড রোদ বা বৃষ্টিসহ অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায় সহজেই।
সরাসরি ক্ষেতে রোপণ করা চারা মারা গেলে নতুন করে বীজ গজিয়ে চারা পুনঃস্থাপন করা সময়সাপেক্ষ এবং দূরুহ হয়ে পড়ে। কিন্তু পলিব্যাগে করা চারা মূল জমিতে লাগানোর পর কোনো চারা মারা গেলে সেখানে একই বয়সী চারা পুনঃস্থাপন করা অতি সহজ। পলিতে চারা করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে। এতে উৎপাদন খরচ কমে যায়। সময় সাশ্রয়ের সাথে খরচ কম হওয়ায় বেশির ভাগ তরমুজ চাষীরা ঝুকছেন এই পদ্ধতিতে।
তরমুজ চাষীরা বলেন, আগে আমরা তরমুজের আডি (বীজ) মূল জমিতে মাদায় দিতাম (রোপন) করতাম। ২ টা করে বীজ রোপন করা লাগতো। এতে খরচ হতো দ্বিগুণ হতো কিন্তু এহন (এখন) পলিব্যাগে করায় আমাদের খরচ অর্ধেক কইম্যা (কমে) গেছে। এহন (এখন) বেশি বৃষ্টি বা রোদ হলে তরমুজের চারা মারা যাওয়ার আশংকা কম থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে আমরা আগে (আগাম) ফলন পামু (পাবো)। এতে ভালো দাম পাওয়াসহ লাভবান হবেন বলে আশাবাদী অন্যান্য চাষীরাও।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গতবছর ভালো ফলন হওয়ায় ও বেশি দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৯-১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হতে পারে বলে আশা করছেন। গত বছর এ উপজেলায় ৫৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, মূল জমিতে আমন ধান থাকায় তরমুজ চাষের জন্য জমি উপযোগী হতে বিলম্ব হয়। তাই আগাম তরমুজ চাষের জন্য কৃষক পলিব্যাগে তরমুজের চারা উৎপাদন করে। পরবর্তীতে জমি ফাঁকা হলে সেখানে ২০-২৫ দিন বয়সী চারা লাগানো হয় ফলে ২০-২৫ দিন আগে ফলন পাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রচন্ড রোদ বা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতেও পলিতে চারা করা হয়। ফলে কৃষক বড় ধরণের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। আগাম ফলন হওয়ায় ভালো দামে বিক্রি করে বেশ লাভবানও হবেন কৃষকরা এমনটাই আশা রাখছি।
The post রাঙাবালীতে পলিব্যাগে তরমুজ চাষে মুনাফা লাভের সম্ভাবনা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.