9:48 pm, Sunday, 15 December 2024

স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।”

বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অস্তিত্ব আর মর্যাদা। বিজয়ের আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।”

বাণীতে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরো স্মরণ করি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।”

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ও কৃষি বিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। বার-বার আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথচলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই থেমে যায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাল্লাহ।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। যুদ্ধ কোনো দেশের জন্য কাঙ্খিত নয়। বাংলাদেশ মনে করে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। আন্তর্জাতিক সমস্যার মানবিক সমাধানে বাংলাদেশ সর্বদা আন্তরিক। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরীহ-নিরস্ত্র জনগণের ওপর বর্বরোচিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনি জনগণের যে কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ সবসময় তাদের পাশে থাকবে। বাংলাদেশে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর অবদান রাখবে- এই প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশে প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। জাতি তাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। আমি আশা করি, বিশ্বমন্দা ও অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসীগণ রেমিটেন্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন এবং দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবেন। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

খুলনা গেজেট/এএজে

The post স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন : রাষ্ট্রপতি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :
জনপ্রিয়

স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন : রাষ্ট্রপতি

Update Time : 07:14:17 pm, Sunday, 15 December 2024

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।”

বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অস্তিত্ব আর মর্যাদা। বিজয়ের আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।”

বাণীতে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরো স্মরণ করি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।”

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ও কৃষি বিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। বার-বার আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথচলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই থেমে যায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাল্লাহ।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। যুদ্ধ কোনো দেশের জন্য কাঙ্খিত নয়। বাংলাদেশ মনে করে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। আন্তর্জাতিক সমস্যার মানবিক সমাধানে বাংলাদেশ সর্বদা আন্তরিক। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরীহ-নিরস্ত্র জনগণের ওপর বর্বরোচিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনি জনগণের যে কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ সবসময় তাদের পাশে থাকবে। বাংলাদেশে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর অবদান রাখবে- এই প্রত্যাশা করি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশে প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। জাতি তাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। আমি আশা করি, বিশ্বমন্দা ও অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসীগণ রেমিটেন্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন এবং দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবেন। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

খুলনা গেজেট/এএজে

The post স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন : রাষ্ট্রপতি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.