4:53 am, Monday, 16 December 2024

মহান বিজয় দিবস আজ

মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে, বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে লন্ডভন্ড হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে।

আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ সেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫৩তম বর্ষ। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন আজ।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবে। ইতিহাসে প্রথম, বছরে দ্বিতীয় ‘বিজয় দিবস’ পেল বাংলাদেশ।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসন, ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য বিগত সরকার ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এ বছর স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর, বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও অভিহিত করছে।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে আজ বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। আলোচনা সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরও স্মরণ করি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।

বিজয় দিবসের বাণীতে তিনি বলেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।

বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ও স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। প্রধান উপদেষ্টা ‘বিজয় দিবস ২০২৪’-এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

খুলনার কর্মসূচি

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে খুলনা জেলা প্রশাসন, কেসিসি বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রসাশন : ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। প্রত্যুষে বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে। ঐদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। সকাল ৯টায় বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।

নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে বেলা ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উম্মুক্ত রাখা হবে। রেল স্টেশন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, ও লঞ্চ ঘাটে রেল, স্টিমার, লঞ্চ ও জাহাজ সজ্জিত করা হবে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হবে।

১৬ ডিসেম্বর সুবিধাজনক সময়ে জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, নৌকা বাইচ, ফুটবল ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে শহিদ হাদিস পার্ক, শিববাড়ি মোড়, দৌলতপুর শহিদ মিনারসহ উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে সিনেমা হলসমূহে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদযোহর বা সুবিধাজনক সময়ে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। বাদ জোহর হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গিলাতলা শিশুপার্ক, খুলনা রিভারভিউ পার্ক, বয়রা শিশুপার্ক, লিনিয়ার শিশুপার্ক ও খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কসহ সকল পার্ক বিনাটিকেটে শিশুদের জন্য উম্মুক্ত রাখা এবং পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর ও ফুলতলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হবে।

১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাজনক সময়ে শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সুবিধাজনক সময়ে পূর্ব রূপসাঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের মাজার প্রাঙ্গণে তাঁর বীরত্ব ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য-সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

কেসিসি : ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন; নগর ভবন, কেসিসি’র সকল স্থাপনাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান এবং বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা।

এছাড়া কেসিসি’র গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ নগরীর প্রবেশদ্বার, গুরুত্বপূর্ণ আইল্যান্ড ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিতকরণ এবং নগর ভবন, প্রশাসক ভবন, খালিশপুর শাখা অফিস, বীর বাঙালী ভাস্কর্য ও শহীদ হাদিস পার্ক আলোকসজ্জিতকরণ। শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য খালিশপুরস্থ ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক ও গল্লামারীস্থ লিনিয়ার পার্কে বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত রাখা হবে।

বিএনপি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে দুইদিনের কর্মসুচির পরিবর্তে একদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার রাতে মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে আজ (১৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় গল্লামারী স্মৃধিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া।

দুপুর ২টায় নগরীর শিববাড়ি জিয়াহল চত্ত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে নগরীতে বিজয় র‌্যালি।

সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালীতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। সভাপতিত্বে করবেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা।

এ ছাড়া সুর্যোদয়ের সাথে সাথে মহানগর বিএনপি কার্যালয় সহ সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং এ দিকে দিবসটিকে কেন্দ্র করে সকল দলীয় কার্যালয়ে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কর্মসুচি সফল করতে সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু ও সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু।

খুবি : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬ টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে উপাচার্য কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্ব শহিদ মিনারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রশাসন ভবন, মেইন গেট, হাদি চত্বর পর্যন্ত রাস্তা ও গাছপালা, অদম্য বাংলা ও সংলগ্ন গাছপালা, ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হবে।

কুয়েট : মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর সুর্যোদয়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাসভবন এবং আবাসিক হলসনমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯ টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সন্তানদের অংশগ্রহণে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ, সকাল ১০ টায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য “দুর্বার বাংলা” এর পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল সাড়ে ১০ টায় অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা, বেলা ৩ টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষক বনাম ছাত্র প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, বাদ আসর বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা ৬ টায় বিজয় দিবসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় সোমবার সকাল ৮ টায় “মাদক ও জঙ্গীবাদ থেকে দূরে থাকি সুষ্ঠু দেশ বিনির্মানে ভুমিকা রাখি” শ্লোগান নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাইকেল শোভাযাত্রা।

খুলনা প্রেস ক্লাব : মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি : ১৬ ডিসেম্বর(সোমবার) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বেলা ১১ টায় ক্লাবের হুমায়ূন কবীর বালু মিলনায়তনে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এমইউজে খুলনা: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার উদ্যোগে বেলা ১২টায় ইউনিয়ন কার্যালয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

শিবির: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র‍্যালি সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে খুলনা মহানগর শাখার অনুষ্ঠিত হবে।

নাগরিক কমিটি: সোমবার সকাল ১০টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি খুলনার বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম

The post মহান বিজয় দিবস আজ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :
জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস আজ

Update Time : 01:06:45 am, Monday, 16 December 2024

মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে, বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে লন্ডভন্ড হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে।

আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ সেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫৩তম বর্ষ। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন আজ।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবে। ইতিহাসে প্রথম, বছরে দ্বিতীয় ‘বিজয় দিবস’ পেল বাংলাদেশ।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসন, ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য বিগত সরকার ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এ বছর স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর, বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও অভিহিত করছে।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে আজ বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। আলোচনা সভা এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরও স্মরণ করি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।

বিজয় দিবসের বাণীতে তিনি বলেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।

বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ও স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। প্রধান উপদেষ্টা ‘বিজয় দিবস ২০২৪’-এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

খুলনার কর্মসূচি

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে খুলনা জেলা প্রশাসন, কেসিসি বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রসাশন : ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। প্রত্যুষে বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে। ঐদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। সকাল ৯টায় বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।

নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে বেলা ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উম্মুক্ত রাখা হবে। রেল স্টেশন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, ও লঞ্চ ঘাটে রেল, স্টিমার, লঞ্চ ও জাহাজ সজ্জিত করা হবে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হবে।

১৬ ডিসেম্বর সুবিধাজনক সময়ে জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, নৌকা বাইচ, ফুটবল ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে শহিদ হাদিস পার্ক, শিববাড়ি মোড়, দৌলতপুর শহিদ মিনারসহ উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে সিনেমা হলসমূহে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদযোহর বা সুবিধাজনক সময়ে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। বাদ জোহর হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গিলাতলা শিশুপার্ক, খুলনা রিভারভিউ পার্ক, বয়রা শিশুপার্ক, লিনিয়ার শিশুপার্ক ও খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কসহ সকল পার্ক বিনাটিকেটে শিশুদের জন্য উম্মুক্ত রাখা এবং পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর ও ফুলতলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হবে।

১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রদর্শনী ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাজনক সময়ে শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সুবিধাজনক সময়ে পূর্ব রূপসাঘাটে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের মাজার প্রাঙ্গণে তাঁর বীরত্ব ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য-সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্র মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

কেসিসি : ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন; নগর ভবন, কেসিসি’র সকল স্থাপনাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান এবং বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা।

এছাড়া কেসিসি’র গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ নগরীর প্রবেশদ্বার, গুরুত্বপূর্ণ আইল্যান্ড ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিতকরণ এবং নগর ভবন, প্রশাসক ভবন, খালিশপুর শাখা অফিস, বীর বাঙালী ভাস্কর্য ও শহীদ হাদিস পার্ক আলোকসজ্জিতকরণ। শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য খালিশপুরস্থ ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক ও গল্লামারীস্থ লিনিয়ার পার্কে বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত রাখা হবে।

বিএনপি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে দুইদিনের কর্মসুচির পরিবর্তে একদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার রাতে মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে আজ (১৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় গল্লামারী স্মৃধিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া।

দুপুর ২টায় নগরীর শিববাড়ি জিয়াহল চত্ত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে নগরীতে বিজয় র‌্যালি।

সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালীতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। সভাপতিত্বে করবেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা।

এ ছাড়া সুর্যোদয়ের সাথে সাথে মহানগর বিএনপি কার্যালয় সহ সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং এ দিকে দিবসটিকে কেন্দ্র করে সকল দলীয় কার্যালয়ে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কর্মসুচি সফল করতে সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু ও সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু।

খুবি : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬ টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে উপাচার্য কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্ব শহিদ মিনারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রশাসন ভবন, মেইন গেট, হাদি চত্বর পর্যন্ত রাস্তা ও গাছপালা, অদম্য বাংলা ও সংলগ্ন গাছপালা, ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হবে।

কুয়েট : মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর সুর্যোদয়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাসভবন এবং আবাসিক হলসনমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯ টায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সন্তানদের অংশগ্রহণে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ, সকাল ১০ টায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য “দুর্বার বাংলা” এর পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল সাড়ে ১০ টায় অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা, বেলা ৩ টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষক বনাম ছাত্র প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, বাদ আসর বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা ৬ টায় বিজয় দিবসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় সোমবার সকাল ৮ টায় “মাদক ও জঙ্গীবাদ থেকে দূরে থাকি সুষ্ঠু দেশ বিনির্মানে ভুমিকা রাখি” শ্লোগান নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাইকেল শোভাযাত্রা।

খুলনা প্রেস ক্লাব : মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি : ১৬ ডিসেম্বর(সোমবার) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বেলা ১১ টায় ক্লাবের হুমায়ূন কবীর বালু মিলনায়তনে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এমইউজে খুলনা: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার উদ্যোগে বেলা ১২টায় ইউনিয়ন কার্যালয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

শিবির: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র‍্যালি সকাল সাড়ে ৮ টায় নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে খুলনা মহানগর শাখার অনুষ্ঠিত হবে।

নাগরিক কমিটি: সোমবার সকাল ১০টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি খুলনার বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম

The post মহান বিজয় দিবস আজ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.