2:57 am, Tuesday, 17 December 2024

খুলনায় ডাক বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রদর্শনী

‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার রানার চলেছে,রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোন নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার, রানার, কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।’

‘রানার! রানার! জানা-অজানার, বোঝা আজ তার কাঁধে, বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে।’ – কবি সুকান্ত ভট্টাচাযের ‘রানার’ কবিতার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে ডাক বিভাগ। আধুনিক যুগে নতুন প্রজন্মের কাছে ডাকবিভাগ যেন শুধুই একটি নাম। এই ডাক বিভাগের সঙ্গে যে কত ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রেম-ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে তা হয়ত অনেকের কাছেই অজানা।

আজ সোমবার ডাক বিভাগের অতীত ইতিহাস ও কর্মকান্ড খুলনার মানুষের কাছে তুলে ধরতেই আয়োজন করা হয়েছে ‘ফিলাটেলিক প্রদর্শনী’। বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা নগরের জিপিও কাযালয়ে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করে খুলনা ডাক বিভাগ। প্রদর্শনীতে ডাক বিভাগের বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ডাক টিকিট, বই, খাম, পোস্ট কার্ডসহ নানান কিছু প্রদর্শন করা হয়। ছিল রানারের ব্যবহৃত হারিকেন, বল্লম ও বস্তা। ডাক বিভাগের ওই প্রদর্শনীতে এসে আবেগ-আপ্লত হয়ে পড়েন অনেকেই। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পযন্ত ওই প্রদর্শনী চলে।

ডাকবিভাগের ওই প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলেন খালিশপুর এলাকার মো. মিলন। ঘুরে ঘুরে ডাকবিভাগের অতীত বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখছিলেন। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘যখন টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ছিল না তখন মানুষের কাছে খবর পৌছে দেওয়ার কাজ করতো ডাক বিভাগ। ওই খবরে থাকতো হাঁসি-কান্না, দুঃখ-বেদনাসহ কত কিছুই। বর্তমান যুগে ডাক বিভাগের সেই ঐতিহ্য আর নেই। নতুন প্রজন্ম ডাক বিভাগের অতীত এসব কর্মকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানে না। ডাক বিভাগের এমন প্রদর্শনী নতুন ও পুরোনোদের মাঝে সমন্বয় ঘটাতে সহায়তা করবে।’

ওই প্রদর্শনীতে আটজন সংগ্রাহক তাঁদের ঝুলিতে থাকা ডাকবিভাগের বিভিন্ন কর্মকান্ড প্রদর্শন করেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন জি কে এম লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই যখন কারো কাছে একটি চিঠি বা পোস্টকার্ড পৌছাত তখন এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করতো। ডাক বিভাগ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ডাক টিকিট তৈরি করতো। সংগ্রাহকরা এসব ডাকটিকিট, খাম, পোস্টকার্ড সংগ্রহ করে রাখেন। সেগুলোই আজ প্রদর্শন করা হয়েছে। এ প্রদর্শনী অতীত ও বর্তমানের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।’

আয়োজকরা জানান, ১৯৮৪ সালে প্রথম ফিলাটেলি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় গত বছর। এবার তৃতীয়বারের মতো খুলনা জিপিওতে ফিলাটেলি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল মুহ. জহুরুল আলম। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আমিনুর রহমান, ডাক জীবন বিমার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোস্তফা, ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল খন্দকার মাহাবুব হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা জিপিওর জ্যেষ্ঠ পোস্টমাস্টার জুবাইদা গুলশান আরা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডাক বিভাগে সাম্প্রতিক সংযোজিত ‘ডমেস্টিক মেইল সফটওয়ার’ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ইস্যু ও বিলিকারী খুলনা জিপিওর ১০ কর্মীকে পুরস্কৃত করা হয়।

দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল মুহ. জহুরুল আলম বলেন, ‘ফিলাটেলি হলো একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, ভাষা, বিপ্লব, সৌন্দযের মত বিষয়গুলোকে জীবন্ত করে তোলে। আজকের বিজয় দিবসের মতো এমন একটি দিনে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি।’

খুলনা জিপিওর জ্যেষ্ঠ পোস্টমাস্টার জুবাইদা গুলশান আরা বলেন, ‘ফিলাটেলিক বলতে বোঝায় ডাক টিকিট প্রদর্শনী। তবে শুধু ডাক টিকিটই ফিলাটেলির অংশ নয়। পোস্ট অফিস সম্পর্কিত সবকিছুই ফিলাটেলির অন্তর্ভূক্ত। আধুনিক যুগে যোগাযোগের নতুন নতুন যে প্রযুক্তি তার কাছে চিঠির যে আবেগ, যে অনুভূতি তা কোনো কিছু দিয়েই আর পূরণ করা যাবে কী না জানি না! আমাদের এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের যারা আছেন তাঁদেরকে একটু ফিলাটেলি সম্পর্কে জানানো।’

খুলনা গেজেট/এএজে

The post খুলনায় ডাক বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রদর্শনী appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :
জনপ্রিয়

খুলনায় ডাক বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রদর্শনী

Update Time : 11:09:07 pm, Monday, 16 December 2024

‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার রানার চলেছে,রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোন নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার, রানার, কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।’

‘রানার! রানার! জানা-অজানার, বোঝা আজ তার কাঁধে, বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে।’ – কবি সুকান্ত ভট্টাচাযের ‘রানার’ কবিতার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে ডাক বিভাগ। আধুনিক যুগে নতুন প্রজন্মের কাছে ডাকবিভাগ যেন শুধুই একটি নাম। এই ডাক বিভাগের সঙ্গে যে কত ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রেম-ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে তা হয়ত অনেকের কাছেই অজানা।

আজ সোমবার ডাক বিভাগের অতীত ইতিহাস ও কর্মকান্ড খুলনার মানুষের কাছে তুলে ধরতেই আয়োজন করা হয়েছে ‘ফিলাটেলিক প্রদর্শনী’। বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা নগরের জিপিও কাযালয়ে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করে খুলনা ডাক বিভাগ। প্রদর্শনীতে ডাক বিভাগের বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ডাক টিকিট, বই, খাম, পোস্ট কার্ডসহ নানান কিছু প্রদর্শন করা হয়। ছিল রানারের ব্যবহৃত হারিকেন, বল্লম ও বস্তা। ডাক বিভাগের ওই প্রদর্শনীতে এসে আবেগ-আপ্লত হয়ে পড়েন অনেকেই। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পযন্ত ওই প্রদর্শনী চলে।

ডাকবিভাগের ওই প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলেন খালিশপুর এলাকার মো. মিলন। ঘুরে ঘুরে ডাকবিভাগের অতীত বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখছিলেন। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘যখন টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ছিল না তখন মানুষের কাছে খবর পৌছে দেওয়ার কাজ করতো ডাক বিভাগ। ওই খবরে থাকতো হাঁসি-কান্না, দুঃখ-বেদনাসহ কত কিছুই। বর্তমান যুগে ডাক বিভাগের সেই ঐতিহ্য আর নেই। নতুন প্রজন্ম ডাক বিভাগের অতীত এসব কর্মকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানে না। ডাক বিভাগের এমন প্রদর্শনী নতুন ও পুরোনোদের মাঝে সমন্বয় ঘটাতে সহায়তা করবে।’

ওই প্রদর্শনীতে আটজন সংগ্রাহক তাঁদের ঝুলিতে থাকা ডাকবিভাগের বিভিন্ন কর্মকান্ড প্রদর্শন করেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন জি কে এম লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই যখন কারো কাছে একটি চিঠি বা পোস্টকার্ড পৌছাত তখন এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করতো। ডাক বিভাগ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ডাক টিকিট তৈরি করতো। সংগ্রাহকরা এসব ডাকটিকিট, খাম, পোস্টকার্ড সংগ্রহ করে রাখেন। সেগুলোই আজ প্রদর্শন করা হয়েছে। এ প্রদর্শনী অতীত ও বর্তমানের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।’

আয়োজকরা জানান, ১৯৮৪ সালে প্রথম ফিলাটেলি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় গত বছর। এবার তৃতীয়বারের মতো খুলনা জিপিওতে ফিলাটেলি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল মুহ. জহুরুল আলম। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আমিনুর রহমান, ডাক জীবন বিমার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোস্তফা, ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল খন্দকার মাহাবুব হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা জিপিওর জ্যেষ্ঠ পোস্টমাস্টার জুবাইদা গুলশান আরা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডাক বিভাগে সাম্প্রতিক সংযোজিত ‘ডমেস্টিক মেইল সফটওয়ার’ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ইস্যু ও বিলিকারী খুলনা জিপিওর ১০ কর্মীকে পুরস্কৃত করা হয়।

দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল মুহ. জহুরুল আলম বলেন, ‘ফিলাটেলি হলো একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, ভাষা, বিপ্লব, সৌন্দযের মত বিষয়গুলোকে জীবন্ত করে তোলে। আজকের বিজয় দিবসের মতো এমন একটি দিনে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি।’

খুলনা জিপিওর জ্যেষ্ঠ পোস্টমাস্টার জুবাইদা গুলশান আরা বলেন, ‘ফিলাটেলিক বলতে বোঝায় ডাক টিকিট প্রদর্শনী। তবে শুধু ডাক টিকিটই ফিলাটেলির অংশ নয়। পোস্ট অফিস সম্পর্কিত সবকিছুই ফিলাটেলির অন্তর্ভূক্ত। আধুনিক যুগে যোগাযোগের নতুন নতুন যে প্রযুক্তি তার কাছে চিঠির যে আবেগ, যে অনুভূতি তা কোনো কিছু দিয়েই আর পূরণ করা যাবে কী না জানি না! আমাদের এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের যারা আছেন তাঁদেরকে একটু ফিলাটেলি সম্পর্কে জানানো।’

খুলনা গেজেট/এএজে

The post খুলনায় ডাক বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রদর্শনী appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.