যশোরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৬ বছরের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু শত্রুরা বসে নেই। তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আপনারা আনন্দ উল্লাসে থাকবেন না।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) যশোর টাউন হল ময়দানে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশাররফ হোসেনের কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। এসময় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
আলোচনা সভায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমার দলের নেতাকর্মী কেউ যদি জনগণের সাথে খারাপ আচারণ করেন, তাহলে ভালো হয়ে যান। আমরা ক্ষমতায় আসি নাই। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের ভোটের প্রয়োজন আছে। বিজয়ের দিনে আমি আপনাদের নির্দেশ দেব জনগণের মন জয় করেন, তারা যেন আপনাদের ওপর আস্থা রাখেন।মহান বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করা হচ্ছে? ভারতের এমন অপপ্রচার প্রসঙ্গে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি এ দেশের সংখ্যালঘূরা মায়ের কোলে শিশুর মত নিরাপদ থাকে । আমরা বিএনপি নেতাকর্মীরা এ দেশের সংখ্যালঘুদের শিশুর মত লালন পালন করি। পাশের দেশের দিদি ( মমতা ব্যানার্জি) আপনি নিজে বাংলাদেশে এসে দেখে যান। যশোরে আসেন দেখেন অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কিভাবে আপনার ধর্মের লোকদের নিরাপদে রেখেছে। ফিরে গিয়ে আপনার দেশের মিডিয়াকে বলেন কুৎসা রটিয়ে কোন দেশে রায়োট ( দাঙ্গা) বাঁধানো যায় না। আমরা এখানে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এটি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
টুকু বলেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের দোকান খুলে ১৬ বছর সেই দোকানে নানান রকম মলম বিক্রি করেছে। ইতিহাসকে বিক্রিত করে মুক্তিযুদ্ধ তার বাবার এবং তার ভ্যানেটি ব্যাগের সম্পদ বানিয়েছিল। আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি, গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৪ আগস্ট পর্যন্ত গাছের পাতায়ও আওয়ামী লীগ ছিল । কিন্ত আগস্টের পরে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের এই চরিত্র নতুন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত গাছের পাতায় বাকশাল দেখেছি। কিন্তু যেই ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের লাশ পড়েছিল, কেউ দেখতে আসলো না। এখন তারা পালিয়েছে আমরা কিন্তু অবাক হইনি। কারণ আওয়ামী লীগ মানে কিছু হলেই লেজ তুলে পালায়। আর দৌড় দেয় তাদের মামুর বাড়িতে। এবারও তারা সেই মামুর বাড়িতে পালিয়েছে।
আওয়ামী লীগের দাবি করা শেখ মুজিব ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ মুজিব সে দিন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দর কষাকষির ভাষণ দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের যদি স্বাধীনতার ভাষণ হবে তাহলে উনি (শেখ মুজিব) ইয়াহিয়া খানকে আলোচনা বসার কথা কিংবা ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলতেন না। আবার হুংকার ছেড়ে সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাবার কথা বলতেন না। আবার সেই ভাষণ জয় পাকিস্তান বলে শেষ করেন। সুতরাং ৭ মার্চের ভাষণ আর যাই হোক স্বাধীনতার ভাষণ হতে পারে না। আর যদি স্বাধীনতার ভাষণই হতো ওই মুহুর্তে যে লাখ লাখ মানুষ ছিল তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো সেখানে যতগুলো পাকিস্তানি সৈন্য ছিল তাদের শেষ করে দিতো পারতো। কিন্তু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে ১১ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনায় বসলেন। এরপর ২৪ মার্চ শেখ মুজিবকে জিজ্ঞেস করা হলো আলোচনার অগ্রতি কি? তখন তিনি বললেন অগ্রতি না হলে আলোচনা চলছে কিভাবে? তার অর্থ উনার প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার পথ ঠিক হয়ে গেছে। ২৫ তারিখের বৈঠকের পর উনি ঘরে ফেরার পর উনার দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ নির্দেশনা জানতে চাইলে উনি যার যার অবস্থান থেকে আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি টেপ রেকর্ডার এনেছি আপনি (শেখ মুজিব) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন শেখ মুজিব বললেন এই টেপ রেকর্ড যদি থাকে তাহলে আমার ফাঁসির দড়ি তৈরি হয়ে যাবে। সুতরাং আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারবো না।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ চাপাবাজিতে বরাবরই প্রথম। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যবসা। প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এসেছিল ২৬ তারিখে। ২৫ তারিখে পাকিস্তানের বর্বরোচিত হামলার পরে আওয়ামী লীগের সবাই লেজ তুলে পালিয়েছিল মামুর বাড়িতে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের খুঁজে পায়নি। তখন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটাই হলো স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করি। নিয়াজি আত্মসমর্পন করছে ভারতীয় সৈনাবাহিনীর কাছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি নেই। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে অপমানের ছিল। তারই জের ধরে মোদী (ভারতে প্রধানমন্ত্রী) বলছে এটা ভারতে বিজয়। আমরা সাত কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছিলাম সেটি আওয়ামী লীগের দোষে ব্যহত হয়ে গেছে।
একাত্তরের এবং পঁচাত্তরে শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে ত্রাণ কর্তকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জাতিকে উদ্ধার করেছিলেন। নব্বইয়ে বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরচারকে হটিয়ে জনগণের আশা ভরসার আশ্রয় স্থলে পরিণত হয়েছিলেন। এবার ২০২৪ এ তারেক রহমান জনগণের সেই আশা ভরসার আশ্রয় স্থলে পরিণত হয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে দেশে যখনই সংকট পড়ে জিয়া পরিবার একমাত্র ত্রাণ কর্তা হিসেবে উদ্ধার করে। ছাত-জনতার অভুত্থানের পর গণ ভবন ক্ষত বিক্ষত পড়ে আছে। জনরোষের কাছে কোন কিছু টিকানো যায় না এটিই প্রমাণ করে। আপনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন, আপনার চামচারা কে কোথায় আছে আল্লাহ জানেন। হয়তো কিছু দিন পর আওয়ামী লীগ ভেসে উঠবে। আওয়ামী লীগ থেকে দলের সকল নেতাকর্মীদের সাবধান থাকার আহ্বান জানান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরল হক সাবু, সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
খুলনা গেজেট/ টিএ
The post মিডিয়ায় কুৎসা রটিয়ে কোন দেশে রায়ট বাধানো যায় না : টুকু appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024