চরফ্যাশন ((ভোলা) প্রতিনিধি:
চরফ্যাশন উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে আশ্রিত ২০ পরিবারের ঘর ভেঙে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার ১ মাস ২দিনে হলেও পুনর্বাসন করেনি প্রশাসন। থাকার জায়গা হারিয়ে বিপাকে পরিবারগুলো।
উচ্ছেদের পর দীর্ঘদিন স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ও সেখানে থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে তীব্র শীতের মধ্যে বসবাস করছে।
চরফ্যাশন পৌরসভা ২নম্বর ওয়ার্ডের নিলিমা আদর্শ গ্রামের ঘরে আশ্রিত অসহায় ফরিদ, হান্নান ও আকলিমাসহ অনেকে জানান, তাদের আসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সনে সরকারি অর্থায়নে নিলিমা আদর্শ গ্রামের ২০টি ঘর তাদের ২০টি পরিবারকে বরাদ্দ দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোয়ার হোসেন। সেই থেকে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে বসবাস করে আসছেন।
গত ৫ আগষ্ট আওয়া মীলীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের কর্মী সমর্থক তাদের ঘর ভেঙ্গে নিতে বলেন। নিরুপায় হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান তারা। নির্বাহী কর্মকর্তা ঐদিন সহকারি কমিশনার ভূমিকে দায়িত্ব দেন। ২ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
১৭ ও ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে স্থানীয় ছাত্রদলের সদস্য মমিন ও রাসেল, শ্রমিক দলের সুমন ছাড়াও স্থানীয় রাশেদ লোকজন নিয়ে ঘরগুলো ভেঙে ফেলেন। প্রভাবশালীরা ঘর থেকে তাদেরকে বের করে দিয়ে ঘরগুলো ভেঙ্গে নেওয়ায় ২০টি পরিবার এখন তাদের স্বজনদের বাড়িতে ক্ষণিকের জন্য আশ্রিত হয়েছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরিবারগুলোকে। এসব পরিবার স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে খালি ভিটায় ফিরেছেন তারা। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানেই করছে বসবাস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে মিজান-বকুল দম্পতি। কথা হলে মিজান বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। দুর্বৃত্তরা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়েছে।
১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার ঘরের চাল-বেড়াসহ সবকিছু নিয়ে গেছে। ওইদিন রাত কোনোমতে কাটিয়ে সকালে আশ্রয়ের জন্য যাই বোনের বাড়ি। সেখানে আশ্রয় মেলেনি। বাধ্য হয়ে খালি ভিটায় ফিরেছি। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছি।’
আবাসনে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী জেলে বাবুল বলেন, `মেঘনার স্রোতে ভেঙে যায় আমাদের বসতভিটা। পরে অন্যের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছিলাম। এরপর ১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার আশ্রয়ণের ঘরের দরজা-জানালা, টিনের চালা ভেঙে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।
রাইতটা কোনোরকমে পার করি, দিন হইলে মালামাল নিয়া আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানেও আশ্রয় মেলেনি। বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণের খালি জায়গায় ফিরেছি। এবং ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় কেন নামানো হলো আমরা সেটাই বুঝতে পারছি না। এই শীতের মধ্যে আমরা কীভাবে রাত্রিযাপন করব।’
ঝুপড়ি ঘরে থাক পিয়ারা বেগম বলেন, ‘সেদিন রাতে ঘরের টিনের চাল ছুটাইয়া নেয় দুর্বৃত্তরা। কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছি। ঘরের সব আসবাব শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রান্না করে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি, প্রায় ১ মাস ২দিনে অতিবাহিত হলেও সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাইনি।’
শুধু পিয়ারা নন, এমন চিত্র অন্য পরিবারগুলোরও। দুর্বৃত্তরা তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করায় নিরুপায় হয়ে পড়েছে। একদিকে খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে বাসস্থান তৈরির দুশ্চিন্তা ভর করেছে ঘরহীন-ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর ওপর।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাছাড়া জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের এবং তাদের তদন্তাধীন। তবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
The post চরফ্যাশনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২০ পরিবারের মানবেতর জীবন appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.