সমীর মুনি। জমির রেজিষ্ট্রির কাজে তেরখাদা ভূমি অফিসে যান। কাজ শেষে সেখানেই একটি হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে নেন। এরপর থেকেই সমীর মুনি পেটের পীড়ায় ভূগছেন। প্রায় এক সপ্তাহ পর সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।
শুধু সমীর মুনি নন। তেরখাদার হোটেল রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নানা অসুখে ভূগছেন। কারন এসব হোটেল রেস্টুরেন্টের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। আর এসব প্রতিষ্ঠানে খুব কমই অভিযান পরিচালনা করা হয়। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা কিংবা সেনেটারি কর্মকর্তা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করলেও ফলাফল শূন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সদরের কাটেংগা, জয়সেনা ও তেরখাদা বাজারে প্রায় ২০/২৫ টি হোটেল রোস্তারা রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ৬ ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট বাজারে রয়েছে কয়েক শতাধিক হোটেল রোস্তারা। এসব হোটেল রোস্তারার মধ্যে সিংগভাগই লাইসেন্স বিহীন। কর্মচারীদের নেই স্বাস্থ্য সনদ। এরপরও হোটেল রোস্তারাগুলোতে রয়েছে অব্যবস্থাপনা, পঁচাবাশি খাদ্য বিক্রি যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ খাবার হোটেল রোস্তারায় খোলা এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সব প্রকার খাবার। এছাড়া খোলা জায়গায় ধুলাবালিতে রাখা হচ্ছে পরোটা, চপ, পুড়ি, জিলাপী সহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সমগ্রী। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশিরভাগ খাবার হোটেল বা রোস্তারাগুলোর বাইরের দৃশ্য চকচকে থাকলেও খাবার তৈরির জায়গা দেখলে সচেতন মানুষ আঁতকে উঠবেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে চাকচিক্য পরিবেশে। এছাড়া খাবারে মেশানো হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক নানা রাসায়নিক। উপজেলার অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বাবুর্চি ও রান্নার কাজে সহযোগীদের গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে খাবারে। উপজেলা সদরসহ আশপাশে বিভিন্ন খাবার হোটেলের রান্নাঘরে এরকম ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। এ ধরনের হোটেল মালিকরা ভোক্তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার দিয়ে তাদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছেন। এসব খাদ্য খেয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ। এছাড়া অধিকাংশ হোটেলেই আর্সেনিক মুক্ত পানির ব্যবস্থা নেই। স্যানিটেশনের এই দুরবস্থা বছরের পর বছর চলে আসলেও প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেই।
উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের হোটেল রোস্তারা এবং ফুটপাতে চলছে অসাস্থকর পরিবেশের মধ্যে আলুরচপ, পিয়াজী, মাংসের চপসহ নানা প্রকার খাদ্য তৈরি করে বিক্রি করে। এদিকে এসব তৈরি করা খাবার তৈরিতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেই তেল সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করা হয়। পোকা, মাছি, পিপড়া, তেলাপোকার অংশবিশেষ লোম, সুতালীসহ অখাদ্য জিনিসপত্র পাওয়া যায়। অসাধু হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সেনেটারী কর্মকর্তা জুয়েল রানা এ ব্যাপারে ‘খুলনা গেজেট’কে বলেন, নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি কোন রেস্তোরায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করার প্রমান মেলে তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে
The post তেরখাদায় অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় নোংরা অস্বাস্থ্যকর appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.