4:45 pm, Sunday, 22 December 2024

ভেস্তে গেল গ্রাম সালিস মামলা হল থানায়

আকাশ রহমান,বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ রংপুরের বদরগঞ্জে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর পেটের ৭মাসের অবৈধ সন্তান হত্যা করার জন্য গ্রাম সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল। 
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গোপন সালিসে মাতবররা ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে এক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মাতবরদের আয়োজন করা গ্রাম সালিম মনোপুত না হওয়ায় ধর্ষকের শাস্তির দাবীতে গ্রামবাসী স্বোচ্চার হয়ে হঠে। অবশেষে উৎসুক গ্রামবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপের মুখে থানা পুলিশ ধর্ষন মামলা নিতে বাধ্য হয়।
গ্রামবাসী ও মামলা সুত্রে জানা যায়, উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পুর্ব মন্ডলপাড়া খোড়াজান গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে (ছদ্মনাম বৃষ্টি) স্থানীয় দামোদরপুর পোদ্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। সে স্কুলে আসা যাওয়া করার পথে একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে সাদেকুল ইসলাম (৩৭) দুই সন্তানের জনক তার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে। এই সম্পর্কের সুত্র ধরে সাদেকুল মেয়েটিকে নানা অজুহাতে তার বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপুর্বক ধর্ষণ করে। যারফলে মেয়েটি অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৭মাস পর এই বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসী ধর্ষকের শাস্তির দাবীতে স্বোচ্চার হয়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামের মাতবররা মেয়েটির বাবাকে এক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার আশ^াস দিয়ে থানায় অভিযোগ করতে নিষেধ করে। অবশেষে থানায় মামলা হওয়ায় প্রভাবশালী মাতবরদের গ্রাম সালিসে বেধে দেওয়া সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেছে। 
এবিষয়ে শুক্রবার ভুক্তভোগী মেয়েটির মাতা বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়ায় মাতবররা তার পেটের ৭মাসের সন্তান হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং হাসপাতালে নিয়ে তার অকাল গর্ভপাতের (এ্যাবোশন) জন্য আমাদেরকে ৭লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ^াস দেয়। আমরা এতে রাজি না হলে তারা আমাদেরকে নানা রকম হুমকী দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। মাতবররা ধর্ষক সাদেকুলের পক্ষ নিয়ে আমাদেরকে বলেছেন, আমরা তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে থানায় মামলা করলে থানা পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবেনা। তারা ৭লক্ষ টাকা দিয়ে মামলাটি শেষ করবে। তখন তোমার মেয়ে অবস্থা কি হবে? তাই তাদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে এত দেরি হল। অবশেষে প্রেসক্লাব বদরগঞ্জের সাংবাদিকদের সহযোগীতায় আমি বদরগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি। এসময় মেয়েটির বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, সাদেকুল ইসলাম তার স্ত্রীর অসুস্থতার অজুতে মাঝে মধ্যে আমার মেয়েকে তার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জোরপুর্বক তার সাথে অবৈধ মেলামেশা করত। আমার মেয়ে এর প্রতিবাদ তার গলায় ধারালো অস্ত্র লাগিয়ে দিয়ে তাকে হত্যার হুমকী দিত। তাই আমার মেয়ে মৃত্যুর ভয়ে বিষয়টি এতদিন গোপন রেখেছিল। সম্প্রতিকালে আমার মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে আমরা বিষয়টি টেরে পাই। পরে তাকে ডাক্তারী পরিক্ষা করে তার ৭মাসের অন্তসত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আমরা এখন দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ওই লম্পট সাদেকুলের কঠিন শাস্তি চাই। 
 বদরগঞ্জ থানার ওসি এ,কে,এম আতিকুর রহমান বলেন, ধর্ষণের এঘটনায় মেয়ের মাতা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বাদীর অভিযোগপত্রটি থানার নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। আসামী গ্রেফতারের জন্য জোরতৎপরতা চলছে।
Tag :

ভেস্তে গেল গ্রাম সালিস মামলা হল থানায়

Update Time : 11:59:00 pm, Friday, 20 December 2024
আকাশ রহমান,বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ রংপুরের বদরগঞ্জে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর পেটের ৭মাসের অবৈধ সন্তান হত্যা করার জন্য গ্রাম সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল। 
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গোপন সালিসে মাতবররা ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে এক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মাতবরদের আয়োজন করা গ্রাম সালিম মনোপুত না হওয়ায় ধর্ষকের শাস্তির দাবীতে গ্রামবাসী স্বোচ্চার হয়ে হঠে। অবশেষে উৎসুক গ্রামবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপের মুখে থানা পুলিশ ধর্ষন মামলা নিতে বাধ্য হয়।
গ্রামবাসী ও মামলা সুত্রে জানা যায়, উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পুর্ব মন্ডলপাড়া খোড়াজান গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে (ছদ্মনাম বৃষ্টি) স্থানীয় দামোদরপুর পোদ্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। সে স্কুলে আসা যাওয়া করার পথে একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে সাদেকুল ইসলাম (৩৭) দুই সন্তানের জনক তার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে। এই সম্পর্কের সুত্র ধরে সাদেকুল মেয়েটিকে নানা অজুহাতে তার বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপুর্বক ধর্ষণ করে। যারফলে মেয়েটি অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৭মাস পর এই বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামবাসী ধর্ষকের শাস্তির দাবীতে স্বোচ্চার হয়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামের মাতবররা মেয়েটির বাবাকে এক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার আশ^াস দিয়ে থানায় অভিযোগ করতে নিষেধ করে। অবশেষে থানায় মামলা হওয়ায় প্রভাবশালী মাতবরদের গ্রাম সালিসে বেধে দেওয়া সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেছে। 
এবিষয়ে শুক্রবার ভুক্তভোগী মেয়েটির মাতা বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়ায় মাতবররা তার পেটের ৭মাসের সন্তান হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং হাসপাতালে নিয়ে তার অকাল গর্ভপাতের (এ্যাবোশন) জন্য আমাদেরকে ৭লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ^াস দেয়। আমরা এতে রাজি না হলে তারা আমাদেরকে নানা রকম হুমকী দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। মাতবররা ধর্ষক সাদেকুলের পক্ষ নিয়ে আমাদেরকে বলেছেন, আমরা তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে থানায় মামলা করলে থানা পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবেনা। তারা ৭লক্ষ টাকা দিয়ে মামলাটি শেষ করবে। তখন তোমার মেয়ে অবস্থা কি হবে? তাই তাদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে এত দেরি হল। অবশেষে প্রেসক্লাব বদরগঞ্জের সাংবাদিকদের সহযোগীতায় আমি বদরগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি। এসময় মেয়েটির বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, সাদেকুল ইসলাম তার স্ত্রীর অসুস্থতার অজুতে মাঝে মধ্যে আমার মেয়েকে তার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জোরপুর্বক তার সাথে অবৈধ মেলামেশা করত। আমার মেয়ে এর প্রতিবাদ তার গলায় ধারালো অস্ত্র লাগিয়ে দিয়ে তাকে হত্যার হুমকী দিত। তাই আমার মেয়ে মৃত্যুর ভয়ে বিষয়টি এতদিন গোপন রেখেছিল। সম্প্রতিকালে আমার মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে আমরা বিষয়টি টেরে পাই। পরে তাকে ডাক্তারী পরিক্ষা করে তার ৭মাসের অন্তসত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আমরা এখন দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ওই লম্পট সাদেকুলের কঠিন শাস্তি চাই। 
 বদরগঞ্জ থানার ওসি এ,কে,এম আতিকুর রহমান বলেন, ধর্ষণের এঘটনায় মেয়ের মাতা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বাদীর অভিযোগপত্রটি থানার নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। আসামী গ্রেফতারের জন্য জোরতৎপরতা চলছে।