বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা যুক্ত করতে শিগগির নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির সমন্বয়ে এই দল গঠিত হবে, যার লক্ষ্য ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একদফা দাবির আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে দেশ ও জাতির সমস্যা সমাধান।
তবে দলটির নাম, নেতৃত্ব, কমিটি, গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের পক্ষে তাদের আন্দোলন, তাই দলের আগে-পরে ‘জাস্টিস’ শব্দটি থাকতে পারে।
এ দলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরাসরি সংযুক্তি না থাকলেও প্ল্যাটফর্মটির অনেকেরই অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানা গেছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকা কোনো কোনো প্রতিনিধিও নতুন দলে সম্পৃক্ত হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এমন সময়ে দলটি গঠন হতে যাচ্ছে, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং সেখানে সম্ভাব্য নতুন দলেরও সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে। অন্যদিকে ছোটখাটো ও অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের চাপ রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে প্রাথমিক একটি ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার বিলম্বিত হলে পরের বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন দল গঠনের বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কেউ কেউ এটিকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে অভিহিত করেছেন। তবে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে শুরুতেই সেই উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজধানীতে একটি বিজয় শোভাযাত্রা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বাংলামটর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে বেশ বড়সড় মিছিল নিয়ে এই শোভাযাত্রা হয়। এর আগে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ছোট আকারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও ঘটা করে শোডাউন দেখা যায়নি। শোভাযাত্রায় ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সদস্যরা উপস্থিত হন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-থানা থেকেও কর্মসূচিতে যোগ দেন অনেকে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, তারা নতুন দল নিয়ে আসছেন। এর আগে সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সম্ভাব্য নতুন দলটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি সংযুক্তি না থাকলেও এতে প্ল্যাটফর্মটির অনেকেরই অংশগ্রহণ থাকবে। তবে নতুন দল গঠিত হলেও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিলুপ্তি হবে না। নতুন দলের কারণে বিলুপ্ত হবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। এই দলে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে অভ্যুত্থানের পক্ষের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ঘটানোর চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে নাগরিক কমিটিতে থাকা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ এর বাইরে অনেকেই রয়েছেন, তারা স্থান পাবেন এ দলে। পাশাপাশি বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কেউ এ দলে আসতে চাইলে তাদেরও স্বাগত জানানো হবে।
সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রের সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখাসহ ৮ দফা নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। ৫৫ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক হন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সদস্য সচিব হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেন। মুখপাত্র করা হয় সামান্তা শারমিনকে। যদিও পরে প্ল্যাটফর্মটিতে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে এটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত কমিটিতে আটজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজনকে যুগ্ম সদস্য সচিব, পাঁচজনকে
সহ-মুখপাত্র, চারজনকে যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং ১৪ জনকে সংগঠক করা হয়। এ ছাড়া কয়েক ধাপে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার পর বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির সদস্যসংখ্যা ১৪৭। এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনটি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন নাগরিক কমিটির নেতারা। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় শতাধিক কমিটি গঠন করে সংগঠনের বিস্তৃতিও ঘটিয়েছেন তারা। ১৭টি জেলার বিভিন্ন থানা, তিনটি মহানগরী, একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে নাগরিক কমিটি। তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পৌঁছে দিতে কাজও করছেন প্ল্যাটফর্মটির নেতারা।
এরই মধ্যে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও আদর্শ কী হবে। বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে তাদের পার্থক্যই বা কী হবে। তাদের অর্থনৈতিক নীতি কেমন হবে? তাদের রাষ্ট্র কাঠামো কি পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক, কল্যাণমূলক, নয়া উদার গণতান্ত্রিক, নাকি ইসলামী ভাবধারার—এ নিয়ে গঠিতব্য দলটির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে একটি গণমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘আমরা একটা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। এটাই আমাদের আদর্শ হবে। আমরা বাম-ডান এমন যে, বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।’
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আন্দোলন চলাকালে গত ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের যে একদফা দাবি জানানো হয়েছিল, সেই আকাঙ্ক্ষাকেই ধারণ করে এই জনপদের মানুষদের সমস্যা সমাধানকল্পে নতুন রাজনৈতিক দল আমরা নিয়ে আসতে চাচ্ছি। যারা সর্বস্তরের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে। সংগঠনের নাম আমরা এখনো ঠিক করিনি। নামসহ সংগঠনের অন্য সব আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আমাদের খসড়া (স্ক্রিপ্টিং) চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের পরামর্শক্রমে আমরা দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছব বলে আশা করছি। এরপর আমরা সবকিছুই সামনে নিয়ে আসব।
রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি বিলুপ্ত হবে কি না এবং নাগরিক কমিটির সঙ্গে সেই দলের কী সম্পর্ক থাকবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি বিলুপ্ত হবে না। গঠিতব্য রাজনৈতিক দলে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক শক্তির অংশগ্রহণ থাকবে। আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এই রাজনৈতিক দলকে আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। বৈষম্যবিরোধী ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তির সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে দ্বিদলীয় একটি ধারা বিদ্যমান। ভোটারদের একটি বড় অংশ রাজনীতি বলতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকেই বোঝে। এ দুটি দলেই ভোটাররা বিভক্ত। সেখানে নতুন দল কতটা সুবিধা করতে পারবে, সে প্রশ্নটি রয়েই গেছে। তবে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কালবেলাকে বলেছেন, এই দলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যেন একই প্ল্যাটফর্মে একই সঙ্গে দাঁড়াতে পারে সেসব বিষয়ও প্রাধান্য দেওয়া হবে। সব পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং ভারসাম্য যেন থাকে, সে বিষয়টাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নাগরিক কমিটিতে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট, কালচারাল অ্যাক্টিভিস্টসহ অনেকেই আছেন। তাদের মধ্য থেকে যারা রাজনীতি করতে ইচ্ছুক, নাগরিক কমিটির বাইরেও যারা আসতে চান এবং বিদ্যমান কোনো দলে রাজনীতি করেন, তাদের নিয়ে তরুণদের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে। এটা শুধু নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ নিয়ে একটা দল হবে, এমনটা নয়। এদের একটা অংশ নিয়ে অন্যদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল হবে। দলটির নেতৃত্ব কত সদস্য বিশিষ্ট হবে এবং দলপ্রধান কে হবেন এ বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
তবে দল গঠন সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, দল গঠনের বিষয়ে আমাদের ফোরামে আপাতত আলাপ হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলিনি। আমাদের প্ল্যাটফর্মটা আগে গোছাতে হবে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন করার সময়ই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই প্ল্যাটফর্ম কখনো রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে না। তবে কোনো নতুন দল আত্মপ্রকাশ করলে, এই ব্যানার থেকে যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে যুক্ত হতে পারেন। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলো। গত বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, যে কারোরই নতুন দল করার অধিকার রয়েছে, ছাত্ররাও সেটা করতে পারে। সেই দল যদি পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম না হয়, তাহলে ছাত্রদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল যে কেউ গঠন করতে পারে। ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। তারা মনে করছে, দেশের জন্য হয়তো আরও কিছু করতে পারবে, দেশকে আরও কিছু দিতে পারবে। সেই লক্ষ্যে হয়তো তারা নতুন দল করতে চাচ্ছে, করুক। দল গঠন করার অধিকার সবার রয়েছে। তারা নির্বাচন করতে চাইলে করবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাজনীতি করা তো নাগরিক অধিকার। নাগরিকের মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতা আছে। মতাদর্শ চর্চার জায়গাটাই হলো রাজনীতি। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। যে কেউ দেশের আইন ও সংবিধান মেনে বৈধভাবে রাজনীতি করতে পারে। সেটা নাগরিক কমিটি হোক বা অন্য কেউ হোক। সেই অধিকার চর্চা করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নতুন স্বাধীনতা সবাই অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা অর্জনের পর সবাই তার জায়গা থেকে দেশ ও জাতির জন্য ভূমিকা রাখতে চাইবে। আমরা একটা দল, আরও অন্যান্য দল আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন দল রাজনীতির মাঠে আসতে পারে। তবে রাজনীতির যে উদ্দেশ্য—দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণ এবং একটি দেশের মানুষের চিন্তা-চেতনার আলোকে মানুষের কল্যাণে কাজ করা, দেশের
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা, সেসব যেন প্রতিপালিত হয়। এসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে আমরা তাকে স্বাগত জানাব।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-তরুণরা যদি নতুন রাজনৈতিক দল করতে চান, নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চান, সেটাকে স্বাগত জানাই। তাদের প্রতি মানুষের যে মনোযোগটা আছে, সেটাকে সম্বল করে তারা নতুন দল করতে পারেন; নিশ্চয়ই তাদের সেই সুযোগ এবং অধিকার আছে। তবে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে তারা দল গঠনের উদ্যোগ নিলে শুরুতেই তাদের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সেজন্য দল করতে চাইলে তাদের উচিত হবে, যারা সরকারে আছেন, তাদের বেরিয়ে আসা। কারণ, মানুষ এটা নিয়ে বহুমুখী প্রশ্ন তুলবে, এটাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অতীতের কিংস পার্টির অভিজ্ঞতাটা সুখকর নয়। মানুষ মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটাকে নেয় না। সরকারে থেকে তারা যদি এ ধরনের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তাহলে ছাত্র-তরুণদের যে সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনার অনেকখানিই নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া সরকারও অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের মধ্যে পড়বে। কারণ, এই সরকার চরিত্রের দিক থেকে দলনিরপেক্ষ একটা সরকার। বিশেষ কোনো দল বা মতাদর্শের প্রতি সরকারের যদি কোনো পক্ষপাত থাকে, তাহলে সরকারের এই নিরপেক্ষতা থাকবে না, সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হলে তাদের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দল করার অধিকার সবারই আছে। তারাও করতে পারে, করুক। বুধবার তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশে যে বক্তব্য রাখল, তাতে মনে হলো, সেই বক্তব্যে ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হলো। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো লাগবে কেন, তারা তো জনগণের ভালোবাসা দিয়েই দল করতে পারে। করুক, জনগণ যদি পছন্দ করে, তো হবে। কোনো রাজনৈতিক দল তো আর জনগণের ভালোবাসা ছাড়া হবে না। গায়ের জোরে, দাপট দেখিয়ে, অহংকার দেখিয়ে তো আর দল করতে পারবে না কেউ।
খুলনা গেজেট/এইচ
The post নতুন দল ঘিরে রাজনীতিতে নানা আলোচনা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024