চরফ্যাশন ((ভোলা) প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তারুয়া সমুদ্র সৈকত। লাল কাঁকড়ার বিচরণ আর পাখিদের অভয়ারণ্য খ্যাত চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্নদ্বীপ ঢালচরের এই সৈকতটি দেখতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ও কোলাহল মুক্ত এই স্থানটিতে পর্যটকরা যে যার মত অবস্থান করায় কমে গেছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। সেই সঙ্গে চরটিতে পাখিরাও আর আগের মতো স্বস্তিতে বিচরণ করতে পারছে না। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
প্রাকৃতিক জীব বৈচির্ত্য ও পাখিদের অভয়ারণ্য রক্ষায় চরটিতে পর্যটক ভ্রমণে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই। নেই কোন বিধি-নিষেধ। ফলে অঙ্কুরেই হারিয়ে বসতে শুরু করেছে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের নৈসর্গিক প্রকৃতির সৌন্দর্য।
পর্যটকরা চরটিতে গিয়ে যে যার মত সৌন্দর্য উপভোগ করলেও ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা খেকে তারুয়া সমুদ্র সৈকতে আনন্দ উপভোগে আসছেন হাজারো মানুষ।
পর্যটকেরা সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়া ধরার জন্য ধাওয়া করছেন। কেউ কেউ আবার লাল কাঁকড়া ধরে নিয়ে আসছেন। পর্যটকদের ধাওয়ায় অনেক লাল কাঁকড়া মারাও পড়ছে। পাখিরাও আর নির্বিঘেœ বিচরণ করতে পারছেন না পর্যটকদের কারণে। আর এই অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে তারুয়া সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
১৯৬৫ সালের দিকে জেগে উঠা চরফ্যাশন শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্ন এ চরটি ঢালচর ভেঙ্গে পূর্ব ঢালচর হিসাবে পরিচিত হলেও এটিকে পরে তারুয়া সমুদ্র সৈকত নাম করণ করেন স্থানীয়রা।
যেখানে সম্প্রতি দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি খুব কাছ থেকে তোলার চেষ্টা করছেন। মানছেন না কোনো বিধি নিষেধ। যে কারণে দ্বীপটিতে পাখির সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। আর তাতে করে দ্বীপটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে বসতে শুরু করেছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পাখি কিংবা কাঁকড়াকে তাদের মতো করে থাকতে দিতে হয়। তবে সেটি হচ্ছে না এই দ্বীপে। পর্যটকরা সৌন্দর্য অবলোকন করতে দ্বীপটিতে রাত্রিযাপনও করছেন। ফ্রি-স্টাইলে পর্যটক-দর্শনার্থীরা সমুদ্র সৈকত থাকা খুবই বিপজ্জনক। ঢালচর স্থানীয়রা জানান, সারা বছরই পর্যটকরা তারুয়া সমুদ্র সৈকত আসে। এখন শীত তাই পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত দ্বীপচরটিতে।
সরকার পরিকল্পিত ভাবে টুরিস্ট ভ্রমণের উপযোগী হিসেবে ঘোষণার আগেই পর্যটকরা বিপদের সম্মুখীন হলে এর দায় নিবে কে। তাই পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় ওই স্থানে একটি ঘর করে একজন লোক রেখে পর্যটকদের থাকার সামান্যতম সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। কমপক্ষে তারা এখানে এসে ভয় যাতে না পায়।
তারুয়া দ্বীপে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা করা একান্ত দরকার। দেশ-দেশান্তর থেকে এই তারুয়া সৈকতে পর্যটকেরা ঘুরতে আসে। পর্যটকেরা একবার গেলে বার বার আসতে মন চায়। চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সাগরের অথৈ জলরাশি। তারই মাঝখানে নয়ন ভোলানো এই বিশাল চর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যেন কুয়াকাটা ও কক্সবাজারকেও হার মানায়। লাল কাঁকড়া দৌড়াদৌড়ি, পাখির জাঁক সাগরের ঢেউ এক মায়াকাড়া মনোরম সুন্দরের দৃশ্য। আবার মানুষের পদচারণায় মুহূর্তেই কাঁকড়াদের গর্তে লুকানো।
অনুমানিক দক্ষিণ থেকে দৈর্ঘ্য দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রস্থ প্রায় ১ কিলোমিটার তারুয়ার সৈকত। এখানে দেখা মিলবে চকচকে সাদাবালি আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য তো আছেই। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনের মাঝে অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে এই ঢালচর।
The post সমুদ্র সৈকত তারুয়ায় পর্যটকদের ভিড়, হুমকির মুখে প্রকৃতি appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.