6:50 am, Friday, 27 December 2024

ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা!

আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বর্তমান ঠিকানাই বর্তমানে ভোটার এলাকা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কোনো কারণে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হলে ভোটার এলাকাও পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে অনেকেই নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আবার ভোগান্তিও বাড়ে। তাই এনআইডি থেকে ভোটার এলাকা আলাদা করে ফেলার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা স্থানান্তর এবং এনআইডি সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে দেয় ইসি। সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সমস্যা পর্যালোচনা করে ওই কমিটি একটি সুপারিশ করেছে, যা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কমিটি প্রধান ও ইসির উপ-সচিব এম মাজহারুল ইসলামের সই করা সুপারিশ ইতোমধ্যে সচিবের দপ্তরে রয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। 

কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ব্যতীত স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় না। 

এ ছাড়া বর্তমানে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা বসবাসরত দেশে হলেও কার্ডের পেছনে বাংলাদেশে যে এলাকার ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত আছেন, সে এলাকার ঠিকানা উল্লেখ থাকে। অথচ তাদের নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় প্রবাসের ঠিকানার তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার এলাকা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়। 

এ ছাড়া নাগরিকদের বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রয়োজন ও বিদেশ গমণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা সম্ভব হয় না। কারণ ভোটার স্থানান্তরের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে কেস টু কেস নথিতে উপস্থাপন করে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্থানান্তর কার্যক্রমে অনেক সময় প্রয়োজন হয় এবং নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই বিষয় বিবেচনায নিয়ে সেবা সহজীকরণ কমিটি ওই সুপারিশ করেছে। 

কমিটির সুপারিশে এনআইডি নেওয়ার সময় বা নতুন ভোটার হওয়ার সময় নির্ধারিত ফরমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার পাশাপাশি ভোটার এলাকা লিপিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটারের তথ্য সংগ্রহের সময় ভোটারের তিনটি ঠিকানা থাকবে, যথা বর্তমান বা যোগাযোগ, স্থায়ী ও ভোটার ঠিকানা। একজন নাগরিকের তিনটি ঠিকানা একই হতে পারে অথবা একাধিক স্থান হতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রের পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এটা দেশে বা প্রবাসের ঠিকানা হতে পারে। ভোটার ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ডাটাবেজে থাকবে। তবে ভোটার ঠিকানা মুদ্রিত ভোটার তালিকায় উল্লেখ থাকবে। 

এতে করে তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রথমত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ভোটার মাইগ্রেশন প্রয়োজন হবে না। বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা সংশোধন করলেই হবে। তাতে ভোটার তালিকায় কোনো প্রভাব পড়বে না। 

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোটার স্থানান্তর করে থাকে। ডাটাবেজে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার ঠিকানা ফিল্ড একটাই হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তির দাপ্তরিক প্রয়োজনে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে বাধ্য হয়ে তাকে ভোটার স্থানান্তরও করতে হয়। আবার নির্বাচনের আগে আগে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তরে চাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে স্থানান্তর করছেন, নাকি দাপ্তরিক প্রয়োজনে স্থানান্তর করছেন, তা বোঝার উপায় থাকে না। 

ডাটাবেজে তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে আবেদনের উদ্দেশ্য বোঝা যাবে এবং বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বারবার স্থানান্তর রোধ করা সম্ভব হবে। এমনকি ভোটার স্থানান্তর কতবার করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে। 

তৃতীয়ত, তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে প্রবাসী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা হিসেবে প্রবাসের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এতে করে প্রবাসীদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং তারা সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাপ্ত হবেন। 

ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষযে বলেন, এনআইডি সেবাকে সহজীকরণের জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এজন্য প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন, পরিমার্জনের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। মূলত, ভোগান্তি কমিয়ে নাগরিকদের সেবা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

The post ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা! appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা!

Update Time : 05:08:34 pm, Thursday, 26 December 2024

আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বর্তমান ঠিকানাই বর্তমানে ভোটার এলাকা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কোনো কারণে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হলে ভোটার এলাকাও পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে অনেকেই নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আবার ভোগান্তিও বাড়ে। তাই এনআইডি থেকে ভোটার এলাকা আলাদা করে ফেলার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা স্থানান্তর এবং এনআইডি সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে দেয় ইসি। সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন সমস্যা পর্যালোচনা করে ওই কমিটি একটি সুপারিশ করেছে, যা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কমিটি প্রধান ও ইসির উপ-সচিব এম মাজহারুল ইসলামের সই করা সুপারিশ ইতোমধ্যে সচিবের দপ্তরে রয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। 

কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ব্যতীত স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় না। 

এ ছাড়া বর্তমানে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা বসবাসরত দেশে হলেও কার্ডের পেছনে বাংলাদেশে যে এলাকার ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত আছেন, সে এলাকার ঠিকানা উল্লেখ থাকে। অথচ তাদের নিবন্ধন ফরম পূরণের সময় প্রবাসের ঠিকানার তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার এলাকা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়। 

এ ছাড়া নাগরিকদের বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রয়োজন ও বিদেশ গমণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা সম্ভব হয় না। কারণ ভোটার স্থানান্তরের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে কেস টু কেস নথিতে উপস্থাপন করে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্থানান্তর কার্যক্রমে অনেক সময় প্রয়োজন হয় এবং নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই বিষয় বিবেচনায নিয়ে সেবা সহজীকরণ কমিটি ওই সুপারিশ করেছে। 

কমিটির সুপারিশে এনআইডি নেওয়ার সময় বা নতুন ভোটার হওয়ার সময় নির্ধারিত ফরমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার পাশাপাশি ভোটার এলাকা লিপিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটারের তথ্য সংগ্রহের সময় ভোটারের তিনটি ঠিকানা থাকবে, যথা বর্তমান বা যোগাযোগ, স্থায়ী ও ভোটার ঠিকানা। একজন নাগরিকের তিনটি ঠিকানা একই হতে পারে অথবা একাধিক স্থান হতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রের পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এটা দেশে বা প্রবাসের ঠিকানা হতে পারে। ভোটার ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ডাটাবেজে থাকবে। তবে ভোটার ঠিকানা মুদ্রিত ভোটার তালিকায় উল্লেখ থাকবে। 

এতে করে তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রথমত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ভোটার মাইগ্রেশন প্রয়োজন হবে না। বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা সংশোধন করলেই হবে। তাতে ভোটার তালিকায় কোনো প্রভাব পড়বে না। 

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোটার স্থানান্তর করে থাকে। ডাটাবেজে বর্তমান ঠিকানা ও ভোটার ঠিকানা ফিল্ড একটাই হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তির দাপ্তরিক প্রয়োজনে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে বাধ্য হয়ে তাকে ভোটার স্থানান্তরও করতে হয়। আবার নির্বাচনের আগে আগে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তরে চাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে স্থানান্তর করছেন, নাকি দাপ্তরিক প্রয়োজনে স্থানান্তর করছেন, তা বোঝার উপায় থাকে না। 

ডাটাবেজে তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে আবেদনের উদ্দেশ্য বোঝা যাবে এবং বিভিন্ন নির্বাচনের আগে বারবার স্থানান্তর রোধ করা সম্ভব হবে। এমনকি ভোটার স্থানান্তর কতবার করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে। 

তৃতীয়ত, তিনটি ঠিকানা থাকার ফলে প্রবাসী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের পেছনে বর্তমান বা যোগাযোগের ঠিকানা হিসেবে প্রবাসের ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। এতে করে প্রবাসীদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং তারা সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাপ্ত হবেন। 

ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষযে বলেন, এনআইডি সেবাকে সহজীকরণের জন্য আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এজন্য প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন, পরিমার্জনের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। মূলত, ভোগান্তি কমিয়ে নাগরিকদের সেবা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

The post ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা! appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.