6:48 pm, Wednesday, 1 January 2025

জুয়া-লটারির আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি

লটারি এক ধরণের জুয়া। যেটাকে কুরআনে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া জুয়া মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে চরম অধপতন ডেকে আনে।

জুয়ার পরিচয়
ফুকাহায়ে কেরাম জুয়ার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে-‘অনিশ্চিত কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এভাবে টাকা লাগানো যে, হয় তা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসবে নতুবা ওই টাকা হারাবে’। যেমন আমাদের দেশের লটারি। এর বিভিন্ন পদ্ধতি জাহেলী আরবে প্রচলিত ছিল। সুরা মায়েদার ৩নং আয়াতে এ বিষয় আলোচিত হয়েছে। ফিকহী মাকালাত, কিমার অধ্যায়।

মুফতি শফি রহ. জুয়ার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে-‘প্রত্যেক ওই লেনদেনকে জুয়া বলা হয়, যা ‎লাভ ও ‎লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে’। (জাওয়াহরিুল ফকিহ: ২/৩৩৬)।

শায়েখ সালেহ আল উসাইমিন বলেন, ‘জুয়া হলো, এভাবে কোন চুক্তি করা যে, চুক্তি সম্পাদনকারী হয়তো জিতবে নতুবা হারবে’।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জুয়া হলো-‘প্রতিযোগীদের থেকে অর্থ সংগ্রহের যে কোন খেলা, যা তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করে বিজয়ীকে বিতরণ করা হয় এবং পরাজিতদের বঞ্চিত করা হয়’ । জুয়া একটি ব্যাপক শব্দ। এর অনেক প্রকার রয়েছে। অন্যতম একটি প্রকার হলো লটারি।

লটারি কী
লটারি হলো ভাগ্য পরীক্ষার খেলা, অদৃষ্ট পরীক্ষা। কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য নম্বরযুক্ত টিকিট বিক্রি করে অপরিকল্পিত কিছু নম্বরধারী ক্রেতাকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা। বাংলা একাডেমি, বাংলা অভিধান।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে من القمار المخاطرة লটারি জুয়ার অন্তর্ভূক্ত। ইমাম জাসসাস ও ইবনে সিরিন বলেছেন-‘যে কাজে বা লেনদেনে লটারির ব্যবস্থা আছে তা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত”।

আরবিতে المخاطرة বলা হয় এমন লেনদেনকে, যার মাধ্যমে কেউ প্রচুর সম্পদ পেয়ে যায় এবং অনেকে কিছুই পায় না। আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন র‌্যাফেল ড্র (লটারির) সাথে এর তুলনা করা যায়। মারেফুল কুরআন, সুরা বাকারা ২১৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা।

জাহেলী যুগে প্রচলিত লটারি
জাহেলী যুগে একটি রেওয়াজ ছিল, কয়েকজনে মিলে একটি উট কিনে যবেহ করার পর বিশেষ পন্থায় লটারীর মাধ্যমে তা বন্টন করতো। পদ্ধতি ছিল-তারা কয়েকটি তীর নিত। বিভিন্ন তীরে বিভিন্ন অংশের নাম বা গোস্তের পরিমাণ লিখে একটি থলিতে রেখে দিত। তারপর তীরগুলো এলোমেলো করে বা ঘুরিয়ে একেকজনের নাম ধরে একেকটি তীর বের করতো। যার নামে যে অংশ বা পরিমাণ বের হতো, তাকে সেই পরিমাণ গোস্ত দেওয়া হতো। কোন কোন তীরে কিছুই লেখা থাকতো না। সেই তীর যার নামে বের হতো সে গোস্ত থেকে বঞ্চিত হতো। তাওযীহুল কুরআন, সুরা মায়েদা 3নং আয়াতের ব্যাখ্যা। আর রাহিকুল মাখতুম ৬৬।

জাহেলী যুগের ওই লটারি আর আমাদের দেশের ক্যাসিনো, র‌্যাফেল ড্র, সুরতি খেলা সব একই রকম। সবগুলোর মৌলিক নীতি একই। সুতরাং এগুলো সব প্রকারান্তে জাহেলী যুগের সেই জুয়া, কুরআন স্পষ্ট ভাষায় যা হারাম ঘোষণা করেছে।

জুয়া বা লটারির শরঈ বিধান
লটারিসহ যে কোন ধরণের জুয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম ও কবিরা গুনাহ। কুরআন মাজিদে জুয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। { يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا} লোকেরা আপনার কাছে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলে দিন-উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য রয়েছে কিছু উপকার, তবে এ দুটির পাপ তার উপকার অপেক্ষা গুরুতর। সুরা বাকারা ২১৯।

অনুরূপভাবে সুরা মায়েদার ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘হে ইমান্দারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি (যার উপর পশু কুরবানি দেওয়া হয়) জুয়ার তীর এ সবই অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার’।

সুরা মায়েদার ৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ …. وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণি, রক্ত……লটারির মাধ্যমে বন্টন, এগুলো সব পাপাচার ও অন্যায়।

হাদীসে জুয়া পরিহার করার ব্যাপারে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, জুয়ার লেনদেনকে শুধু হারাম করা হয়নি বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করাকেই গুনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রসুল স. বলেছেন مَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ: تَعَالَ أُقَامِرْكَ فَلْيَتَصَدَّقْ যে ব্যক্তি অন্যকে বলে এসো জুয়া খেলি/জুয়ার লেনদেন করি, তবে আহবান কারীর জন্য উচিত তার গুনাহের জন্য কিছু সদকা করা। সহীহ বুখারী ৪৮৬০। চিন্তা করার বিষয় হল, শুধু জুয়ার কথা বললেই গুনাহ হচ্ছে, শাস্তি আরোপ হচ্ছে, তাহলে জুয়া খেলা বা জুয়ার লেনদেন করা কত বড় শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা সহজেই অনুমেয়।

জুয়ার লাভ ক্ষতি
যদি বলা হয় বাহ্যত জুয়াতে কিছু মানুষের উপকার হয়। যেমন জাহেলী যুগে লটারিতে পাওয়া গোস্ত গরীবদেরকে দান করে দেওয়া হতো এবং দাতারা নিজেদেরকে দানবীর বলে মনে করতো। অনুরুপ জুয়ার অন্যতম একটি লাভ হলো, গরীব মানুষ খুব দ্রুত ধনী হতে পারে।

তাহলেও বলবো এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির দিক অনেক বেশি। প্রথমতঃ অপরের সম্পদ পারস্পারিক সন্তুষ্টচিত্তে এবং ব্যবসায়িক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন ভাবে গ্রহণ করা হারাম (সুরা বাকারা ১৮৮) তাই লটারিতে বিজয়ী ব্যক্তি প্রাপ্ত সম্পদের মালিকই হয় না।

দ্বিতীয়তঃ একজন ধনী হতে গিয়ে কৌশলে অসংখ্য মানুষের পকেট ফাঁকা করা হয়, ফলে গরিব আরো গরিব ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ইসলাম কখনো এটাকে সমর্থন করে না। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-মদ এবং জুয়ার মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং রয়েছে মানুষের জন্য কিছু উপকারও, তবে উভয়ের পাপ ও ক্ষতি তার উপকার অপেক্ষা বেশি গুরুতর। সুরা বাকারা ২১৯।

জুয়ায় আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি
জুয়া খেলা একজনের লাভ এবং অপরজনের ক্ষতির উপর পরিক্রমশীল। বিজয়ী ব্যক্তির কেবল লাভই লাভ, পরাজিত ব্যক্তির শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। কেননা এতে একজনের মাল কোন বিনিময় ছাড়া অন্যের হাতে চলে যায়। লটারিতে সহজে ধনী হওয়ার লোভে পড়ে লাভের আশায় প্রত্যেকে ব্যয় করে কিন্তু পায় এক বা গুটি কয়েকজন। যে ব্যক্তি এতে লাভবান হয়, সে পরোপকারের মানসিকতা থেকে দূরে সরে রক্ত-পিপাসু হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে পরাজিত ব্যক্তি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং আত্মিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর জুয়াতে হেরে যাওয়ার সংখ্যাই যেহেতু বেশি। সেহেতু জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতির আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। মনুষত্বের লোপ ঘটায়, আর মানবিকতায় নামে ধস। যা তার নৈতিকতায় বিরূপ প্রভাব পড়ে।

পক্ষান্তরে ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এর বিপরীত। কেননা, এতে উভয়পক্ষের লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং উভয় পক্ষই এতে লাভবান হয়ে থাকে।

জুয়ার একটি বড় ক্ষতির দিক এই যে, জুয়াড়ি প্রকৃত উপার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। জুয়ার প্রভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তির মতো চিন্তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। শ্রমের বিনিময়ে ন্যায়সঙ্গত উপার্জনের আগ্রহ হারায়। কেননা, তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, কিভাবে একটি বাজির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অন্যের মাল হস্তগত করে ধনী হওয়া যাবে, যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজনই নেই। অন্যকে ঠকিয়ে মাল কামানোর ধান্দা তার মাথায় বাসা বাঁধে। ফলে সে একা অথবা তার সমমনা কয়েকজন মিলে মানুষের পকেটের টাকা হাতানোর জন্য জুয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে থাকে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পুরো সমাজের উপর পড়ে।

আধুনিক ও নতুন পদ্ধতির জুয়াগুলোতে গোটা জাতির কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিছু কিছু করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় এবং ক্ষতিটা সকলের মাঝে বন্টিত হয়ে যায়। ফলে দেখার মতো তেমন কিছু হয় না। আর গুটি কয়েক ব্যক্তি লটারিতে জয়ী হয়ে যে অর্থ কিংবা সম্পদ পায়, তা সকলের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। ফলে কিছু মানুষ লটারি বা জুয়াতে টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে পড়ে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে লোভ এবং লাভের দিবা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। মানুষের এই লোভ আর আবেগকে পূজি করে সমাজের কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বিক্ষিপ্তভাবে হাজার হাজার মানুষের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে, এক বা গুটি কয়েকজনকে সেই অর্থের যৎসামান্য অংশ দিয়ে ফলাও করে প্রচার করে এবং বাকি টাকা দিয়ে নিজেদের হারাম উপার্জনের ঝুলিকে ভারি করে। এতে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে আর কয়েকজন পূজিপতির মাল বাড়তে থাকে। ফলে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়। যার কারণে সমাজে দেখা দেয় সম্পদের বৈষম্য। এক শ্রেণির মানুষ হয় সর্বশান্ত আরেক শ্রেণি হয় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। গরিব আরো গরিব হয়, ধনী হয় আরো ধনী। পরিবারে ও সমাজে নেমে আসে অশান্তি।

অথচ ইসলাম এমন সব পন্থা হারাম ঘোষণা করেছে, যেসব পন্থায় সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হয়। এ প্রসঙ্গে কুরআন ঘোষণা করছে- {كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ} অর্থাৎ কুরআন বর্ণিত অর্থ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য এই যে ‘সম্পদ যেন কয়েকজন পূজিপতির হাতে পূঞ্জিভূত হয়ে না পড়ে। সুরা হাশর ৭।

জুয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো-জুয়াও মদের মত পারস্পারিক ঝগড়া-বিবাদ ও ফেতনা-ফাসাদের জন্ম দেয়। পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই নিজের খোয়ানো টাকার শোকে জয়ী ব্যক্তির উপর কিংবা আয়োজনকারীদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং শত্রু হয়ে দাড়ায়। ফলে সমাজে দেখা দেয় মারামারি, হানাহানি। ছড়িয়ে পড়ে ফেতনা ফাসাদ। জনজীবনে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

জুয়াড়ি কখনো আবার জুয়ার নেশায় অর্থ সম্পদ সব খুইয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়ে। কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। বিমর্ষ আর বিষন্নতার ছাপ পড়ে চেহারায়। পরিবার ও আপন জনের সাথে আচার-আচরণের সৌজন্যতা হারিয়ে ফেলে। দ্বীন-ধর্মের কাজে সৃষ্টি হয় চরম আনীহা। তাই আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন–‘মাদক ও জুয়ার দ্বারা শয়তান তোমাদের মাঝে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে চায়। সুরা মায়েদা, আয়াত ৯১।

যে ক্ষেত্রে লটারি করা যায়
জুয়া ব্যাপক একটি সামাজিক ব্যাধি। তবে আজকের আলোচনার মূল ফোকাস যেহেতু জুয়ার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ প্রকার ‘লটারি’র প্রতি, তাই কোন ক্ষেত্রে লটারি করা জায়েজ আছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকা দরকার।

জুয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে যে শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে (যেমন এমন ভাবে টাকা লাগানা, হয়তো হারবে নয়তো জিতবে) এসব শর্ত যেখানে পাওয়া যাবে না, সেসব ক্ষেত্রে লটারী করা জায়েজ আছে। দু’একটি উদাহরণ দিলে সহজে বুঝা যাবে।

যেমন: দশজন সমপর্যায়ের ছাত্রের মধ্যে আমি দুই জনকে কলম দিব, সেখানে লটারী করে দুই জন নির্ধারণ করতে পারি। আমার চার স্ত্রীর মধ্যে একজনকে সফরে নিয়ে যাব, এখানে সকলে সমান হকদার, কাকে নিব সেক্ষেত্রে লটারি করে একজন নির্ধারণ করা যাবে। আমার অধিনস্থদের থেকে বছরে একজন করে উমরায় পাঠাবো। সকলে সমান হকদার, সেক্ষেত্রে প্রতি বছর লটারি করে একজনকে নির্ধারণ করা যাবে। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দিব 3 জনকে, কিন্তু সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে 5 জন। কোন তিন জনকে আমি পুরস্কার দিব তা লটারি করে নির্ধারণ করা যায়।

বাজার থেকে পণ্য কিনলে বিক্রেতা লটারির যে টিকিট বা কুপন দেয়, যদি সেখানে পণ্য কেনার কোন শর্ত না থাকে এবং কুপনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ না করে, সাথে সাথে ক্রেতার শুধু পণ্য ক্রয় উদ্দেশ্য থাকে লটারি উদ্দেশ্য না থাকে, সেক্ষেত্রে কুপনের পুরস্কার গ্রহণ করা যাবে। ফিকহী মাকালাত, কিমার অধ্যায়। والله أعلم بالصواب
সবধরণের জুয়া এবং হারাম লেনদেন থেকে রব্বে কারিম আমাদের হেফাযত করেন। আমিন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post জুয়া-লটারির আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

জুয়া-লটারির আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি

Update Time : 09:07:27 pm, Sunday, 29 December 2024

লটারি এক ধরণের জুয়া। যেটাকে কুরআনে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া জুয়া মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে চরম অধপতন ডেকে আনে।

জুয়ার পরিচয়
ফুকাহায়ে কেরাম জুয়ার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে-‘অনিশ্চিত কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এভাবে টাকা লাগানো যে, হয় তা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসবে নতুবা ওই টাকা হারাবে’। যেমন আমাদের দেশের লটারি। এর বিভিন্ন পদ্ধতি জাহেলী আরবে প্রচলিত ছিল। সুরা মায়েদার ৩নং আয়াতে এ বিষয় আলোচিত হয়েছে। ফিকহী মাকালাত, কিমার অধ্যায়।

মুফতি শফি রহ. জুয়ার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে-‘প্রত্যেক ওই লেনদেনকে জুয়া বলা হয়, যা ‎লাভ ও ‎লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে’। (জাওয়াহরিুল ফকিহ: ২/৩৩৬)।

শায়েখ সালেহ আল উসাইমিন বলেন, ‘জুয়া হলো, এভাবে কোন চুক্তি করা যে, চুক্তি সম্পাদনকারী হয়তো জিতবে নতুবা হারবে’।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জুয়া হলো-‘প্রতিযোগীদের থেকে অর্থ সংগ্রহের যে কোন খেলা, যা তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করে বিজয়ীকে বিতরণ করা হয় এবং পরাজিতদের বঞ্চিত করা হয়’ । জুয়া একটি ব্যাপক শব্দ। এর অনেক প্রকার রয়েছে। অন্যতম একটি প্রকার হলো লটারি।

লটারি কী
লটারি হলো ভাগ্য পরীক্ষার খেলা, অদৃষ্ট পরীক্ষা। কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য নম্বরযুক্ত টিকিট বিক্রি করে অপরিকল্পিত কিছু নম্বরধারী ক্রেতাকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা। বাংলা একাডেমি, বাংলা অভিধান।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে من القمار المخاطرة লটারি জুয়ার অন্তর্ভূক্ত। ইমাম জাসসাস ও ইবনে সিরিন বলেছেন-‘যে কাজে বা লেনদেনে লটারির ব্যবস্থা আছে তা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত”।

আরবিতে المخاطرة বলা হয় এমন লেনদেনকে, যার মাধ্যমে কেউ প্রচুর সম্পদ পেয়ে যায় এবং অনেকে কিছুই পায় না। আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন র‌্যাফেল ড্র (লটারির) সাথে এর তুলনা করা যায়। মারেফুল কুরআন, সুরা বাকারা ২১৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা।

জাহেলী যুগে প্রচলিত লটারি
জাহেলী যুগে একটি রেওয়াজ ছিল, কয়েকজনে মিলে একটি উট কিনে যবেহ করার পর বিশেষ পন্থায় লটারীর মাধ্যমে তা বন্টন করতো। পদ্ধতি ছিল-তারা কয়েকটি তীর নিত। বিভিন্ন তীরে বিভিন্ন অংশের নাম বা গোস্তের পরিমাণ লিখে একটি থলিতে রেখে দিত। তারপর তীরগুলো এলোমেলো করে বা ঘুরিয়ে একেকজনের নাম ধরে একেকটি তীর বের করতো। যার নামে যে অংশ বা পরিমাণ বের হতো, তাকে সেই পরিমাণ গোস্ত দেওয়া হতো। কোন কোন তীরে কিছুই লেখা থাকতো না। সেই তীর যার নামে বের হতো সে গোস্ত থেকে বঞ্চিত হতো। তাওযীহুল কুরআন, সুরা মায়েদা 3নং আয়াতের ব্যাখ্যা। আর রাহিকুল মাখতুম ৬৬।

জাহেলী যুগের ওই লটারি আর আমাদের দেশের ক্যাসিনো, র‌্যাফেল ড্র, সুরতি খেলা সব একই রকম। সবগুলোর মৌলিক নীতি একই। সুতরাং এগুলো সব প্রকারান্তে জাহেলী যুগের সেই জুয়া, কুরআন স্পষ্ট ভাষায় যা হারাম ঘোষণা করেছে।

জুয়া বা লটারির শরঈ বিধান
লটারিসহ যে কোন ধরণের জুয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম ও কবিরা গুনাহ। কুরআন মাজিদে জুয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। { يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا} লোকেরা আপনার কাছে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলে দিন-উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য রয়েছে কিছু উপকার, তবে এ দুটির পাপ তার উপকার অপেক্ষা গুরুতর। সুরা বাকারা ২১৯।

অনুরূপভাবে সুরা মায়েদার ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘হে ইমান্দারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি (যার উপর পশু কুরবানি দেওয়া হয়) জুয়ার তীর এ সবই অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার’।

সুরা মায়েদার ৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ …. وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণি, রক্ত……লটারির মাধ্যমে বন্টন, এগুলো সব পাপাচার ও অন্যায়।

হাদীসে জুয়া পরিহার করার ব্যাপারে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, জুয়ার লেনদেনকে শুধু হারাম করা হয়নি বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করাকেই গুনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রসুল স. বলেছেন مَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ: تَعَالَ أُقَامِرْكَ فَلْيَتَصَدَّقْ যে ব্যক্তি অন্যকে বলে এসো জুয়া খেলি/জুয়ার লেনদেন করি, তবে আহবান কারীর জন্য উচিত তার গুনাহের জন্য কিছু সদকা করা। সহীহ বুখারী ৪৮৬০। চিন্তা করার বিষয় হল, শুধু জুয়ার কথা বললেই গুনাহ হচ্ছে, শাস্তি আরোপ হচ্ছে, তাহলে জুয়া খেলা বা জুয়ার লেনদেন করা কত বড় শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা সহজেই অনুমেয়।

জুয়ার লাভ ক্ষতি
যদি বলা হয় বাহ্যত জুয়াতে কিছু মানুষের উপকার হয়। যেমন জাহেলী যুগে লটারিতে পাওয়া গোস্ত গরীবদেরকে দান করে দেওয়া হতো এবং দাতারা নিজেদেরকে দানবীর বলে মনে করতো। অনুরুপ জুয়ার অন্যতম একটি লাভ হলো, গরীব মানুষ খুব দ্রুত ধনী হতে পারে।

তাহলেও বলবো এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির দিক অনেক বেশি। প্রথমতঃ অপরের সম্পদ পারস্পারিক সন্তুষ্টচিত্তে এবং ব্যবসায়িক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন ভাবে গ্রহণ করা হারাম (সুরা বাকারা ১৮৮) তাই লটারিতে বিজয়ী ব্যক্তি প্রাপ্ত সম্পদের মালিকই হয় না।

দ্বিতীয়তঃ একজন ধনী হতে গিয়ে কৌশলে অসংখ্য মানুষের পকেট ফাঁকা করা হয়, ফলে গরিব আরো গরিব ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ইসলাম কখনো এটাকে সমর্থন করে না। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-মদ এবং জুয়ার মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং রয়েছে মানুষের জন্য কিছু উপকারও, তবে উভয়ের পাপ ও ক্ষতি তার উপকার অপেক্ষা বেশি গুরুতর। সুরা বাকারা ২১৯।

জুয়ায় আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি
জুয়া খেলা একজনের লাভ এবং অপরজনের ক্ষতির উপর পরিক্রমশীল। বিজয়ী ব্যক্তির কেবল লাভই লাভ, পরাজিত ব্যক্তির শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। কেননা এতে একজনের মাল কোন বিনিময় ছাড়া অন্যের হাতে চলে যায়। লটারিতে সহজে ধনী হওয়ার লোভে পড়ে লাভের আশায় প্রত্যেকে ব্যয় করে কিন্তু পায় এক বা গুটি কয়েকজন। যে ব্যক্তি এতে লাভবান হয়, সে পরোপকারের মানসিকতা থেকে দূরে সরে রক্ত-পিপাসু হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে পরাজিত ব্যক্তি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং আত্মিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর জুয়াতে হেরে যাওয়ার সংখ্যাই যেহেতু বেশি। সেহেতু জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতির আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। মনুষত্বের লোপ ঘটায়, আর মানবিকতায় নামে ধস। যা তার নৈতিকতায় বিরূপ প্রভাব পড়ে।

পক্ষান্তরে ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এর বিপরীত। কেননা, এতে উভয়পক্ষের লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং উভয় পক্ষই এতে লাভবান হয়ে থাকে।

জুয়ার একটি বড় ক্ষতির দিক এই যে, জুয়াড়ি প্রকৃত উপার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। জুয়ার প্রভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তির মতো চিন্তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। শ্রমের বিনিময়ে ন্যায়সঙ্গত উপার্জনের আগ্রহ হারায়। কেননা, তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, কিভাবে একটি বাজির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অন্যের মাল হস্তগত করে ধনী হওয়া যাবে, যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজনই নেই। অন্যকে ঠকিয়ে মাল কামানোর ধান্দা তার মাথায় বাসা বাঁধে। ফলে সে একা অথবা তার সমমনা কয়েকজন মিলে মানুষের পকেটের টাকা হাতানোর জন্য জুয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে থাকে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পুরো সমাজের উপর পড়ে।

আধুনিক ও নতুন পদ্ধতির জুয়াগুলোতে গোটা জাতির কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিছু কিছু করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় এবং ক্ষতিটা সকলের মাঝে বন্টিত হয়ে যায়। ফলে দেখার মতো তেমন কিছু হয় না। আর গুটি কয়েক ব্যক্তি লটারিতে জয়ী হয়ে যে অর্থ কিংবা সম্পদ পায়, তা সকলের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। ফলে কিছু মানুষ লটারি বা জুয়াতে টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে পড়ে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে লোভ এবং লাভের দিবা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। মানুষের এই লোভ আর আবেগকে পূজি করে সমাজের কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বিক্ষিপ্তভাবে হাজার হাজার মানুষের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে, এক বা গুটি কয়েকজনকে সেই অর্থের যৎসামান্য অংশ দিয়ে ফলাও করে প্রচার করে এবং বাকি টাকা দিয়ে নিজেদের হারাম উপার্জনের ঝুলিকে ভারি করে। এতে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে আর কয়েকজন পূজিপতির মাল বাড়তে থাকে। ফলে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়। যার কারণে সমাজে দেখা দেয় সম্পদের বৈষম্য। এক শ্রেণির মানুষ হয় সর্বশান্ত আরেক শ্রেণি হয় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। গরিব আরো গরিব হয়, ধনী হয় আরো ধনী। পরিবারে ও সমাজে নেমে আসে অশান্তি।

অথচ ইসলাম এমন সব পন্থা হারাম ঘোষণা করেছে, যেসব পন্থায় সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হয়। এ প্রসঙ্গে কুরআন ঘোষণা করছে- {كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ} অর্থাৎ কুরআন বর্ণিত অর্থ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য এই যে ‘সম্পদ যেন কয়েকজন পূজিপতির হাতে পূঞ্জিভূত হয়ে না পড়ে। সুরা হাশর ৭।

জুয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো-জুয়াও মদের মত পারস্পারিক ঝগড়া-বিবাদ ও ফেতনা-ফাসাদের জন্ম দেয়। পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই নিজের খোয়ানো টাকার শোকে জয়ী ব্যক্তির উপর কিংবা আয়োজনকারীদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং শত্রু হয়ে দাড়ায়। ফলে সমাজে দেখা দেয় মারামারি, হানাহানি। ছড়িয়ে পড়ে ফেতনা ফাসাদ। জনজীবনে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

জুয়াড়ি কখনো আবার জুয়ার নেশায় অর্থ সম্পদ সব খুইয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়ে। কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। বিমর্ষ আর বিষন্নতার ছাপ পড়ে চেহারায়। পরিবার ও আপন জনের সাথে আচার-আচরণের সৌজন্যতা হারিয়ে ফেলে। দ্বীন-ধর্মের কাজে সৃষ্টি হয় চরম আনীহা। তাই আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন–‘মাদক ও জুয়ার দ্বারা শয়তান তোমাদের মাঝে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে চায়। সুরা মায়েদা, আয়াত ৯১।

যে ক্ষেত্রে লটারি করা যায়
জুয়া ব্যাপক একটি সামাজিক ব্যাধি। তবে আজকের আলোচনার মূল ফোকাস যেহেতু জুয়ার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ প্রকার ‘লটারি’র প্রতি, তাই কোন ক্ষেত্রে লটারি করা জায়েজ আছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকা দরকার।

জুয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে যে শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে (যেমন এমন ভাবে টাকা লাগানা, হয়তো হারবে নয়তো জিতবে) এসব শর্ত যেখানে পাওয়া যাবে না, সেসব ক্ষেত্রে লটারী করা জায়েজ আছে। দু’একটি উদাহরণ দিলে সহজে বুঝা যাবে।

যেমন: দশজন সমপর্যায়ের ছাত্রের মধ্যে আমি দুই জনকে কলম দিব, সেখানে লটারী করে দুই জন নির্ধারণ করতে পারি। আমার চার স্ত্রীর মধ্যে একজনকে সফরে নিয়ে যাব, এখানে সকলে সমান হকদার, কাকে নিব সেক্ষেত্রে লটারি করে একজন নির্ধারণ করা যাবে। আমার অধিনস্থদের থেকে বছরে একজন করে উমরায় পাঠাবো। সকলে সমান হকদার, সেক্ষেত্রে প্রতি বছর লটারি করে একজনকে নির্ধারণ করা যাবে। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দিব 3 জনকে, কিন্তু সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে 5 জন। কোন তিন জনকে আমি পুরস্কার দিব তা লটারি করে নির্ধারণ করা যায়।

বাজার থেকে পণ্য কিনলে বিক্রেতা লটারির যে টিকিট বা কুপন দেয়, যদি সেখানে পণ্য কেনার কোন শর্ত না থাকে এবং কুপনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ না করে, সাথে সাথে ক্রেতার শুধু পণ্য ক্রয় উদ্দেশ্য থাকে লটারি উদ্দেশ্য না থাকে, সেক্ষেত্রে কুপনের পুরস্কার গ্রহণ করা যাবে। ফিকহী মাকালাত, কিমার অধ্যায়। والله أعلم بالصواب
সবধরণের জুয়া এবং হারাম লেনদেন থেকে রব্বে কারিম আমাদের হেফাযত করেন। আমিন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post জুয়া-লটারির আত্মিক ও সামাজিক ক্ষতি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.