ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন দাপুনিয়া খেজুরতলা মোড় এলাকা থেকে তদন্তেপ্রাপ্ত সন্ধিগ্ধ ইউপি সদস্য হত্যা মামলার আসামী আশিকুর রহমান (৩৫), রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯) ও মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫) কে ৩ জানুয়ারী গ্রেফতার করেছে পিবিআই, ময়মনসিংহ।
গত ১লা জানুয়ারী সকাল ১০.০০ ঘটিকায় থানা পুলিশের মাধ্যমে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা সংবাদ পায় তারাকান্দা থানাধীন পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে।
জানা যায় অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির নাম মোঃ আরিফুর রহমান (৪৬) তার বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়। পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা থানা পুলিশের মাধ্যমে খবরটি নিহতের পরিবারকে জানিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনায় থানা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পিবিআই ময়মনসিংহ ছায়া তদন্ত শুরু করে। নিহতের স্ত্রী আয়শা আক্তার বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তৎপ্রেক্ষিতে তারাকান্দা থানার মামলা নং-০১, তাং-০২/০১/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়। থানা পুলিশের তদন্তকালে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করে।
অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই মোঃ মোস্তফা কামাল এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই, ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন গত ২ জানুয়ারী মামলা তদন্ত শুরু করেন।
পিবিআই টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাত আসামীদের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হন। গত ৩ জানুয়ারী অনুমান ০৩.০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন দাপুনিয়া খেজুরতলা মোড় এলাকা থেকে তদন্তেপ্রাপ্ত সন্ধিগ্ধ আসামী মাদারী পুর জেলার শিবপুর থানার শিবাচর গ্রামের আশিকুর রহমান (৩৫), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার কুমারগাতি গ্রমের রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), রংপুর সদরের গনেশপুর গ্রামের মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯) ও তারাকান্দার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫)দের গ্রেফতার করেন। অপরাধে ব্যবহৃত হাইস গাড়টি আলামত হিসেবে ঢাকা থেকে জব্দ করেন।
পুলিশ জানায়, সন্ধিগ্ধ গ্রেফতারকৃত সকল আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সকল আসামী বিজ্ঞ আদালতে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ঘটনার বিবরণ উল্লেখপূর্বক ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসামীরা অপহরণ চক্রের সদস্য। আসামী শ্রাবণ ঢাকায় অবস্থানরত লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ৬নং পূর্ব কেরোয়া ইউনিয়নের রানিং মেম্বার ও ফার্ণিচার ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান এর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সাজায়। গত ২৫ ডিসেম্বর আসামী শ্রাবণ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসে এবং কয়েক দিন অবস্থান করে। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হতে তার বন্ধু তন্ময় ও নিশাতকে নিয়ে মিরপুর চলে যায়। সেখানে গিয়ে শ্রাবণ সুকৌশলে ভিকটিম আরিফুর রহমানকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকা থেকে ডেকে নেয়। ভিকটিম আরিফুর রহমান সেখানে আসামাত্রই আসামী শ্রাবণ, আশিক, তন্ময় ও নিশাত মিলে তাকে ধরে ফেলে এবং প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের পূর্ব হতেই ভাড়া করে রাখা হাইস গাড়ীতে উঠতে বলে। আরিফুর রহমান গাড়ীতে উঠামাত্রই তারা ময়মনসিংহের দিকে রওনা করে। আসামীরা জিম্মি আরিফুর রহমানের ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে কল করায় এবং টাকা পাঠানোর জন্য এসএমএস করায়। বিকাশ নম্বর হিসেবে আসামী আশিকের একটি নম্বর দেয়। গাজীপুরে জ্যামে গাড়ী আটকে গেলে ভিকটিম নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে আসামীরা অপহরণের বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য ভিকটিমকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে হত্যা করে তারাকান্দার পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে আসে।
The post লক্ষিপুরের ইউপি সদস্য হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই গ্রেফতার ৪ appeared first on দৈনিক ময়মনসিংহের খবর.