7:21 am, Tuesday, 7 January 2025

সকালের নাশতা বাদ দিলে সত্যিই কি রোগে ভুগতে হয়!

বর্তমান সময়ে সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার অভাবে অনেকেই সকালে নাশতা খান না। কেউবা ওজন নিয়ন্ত্রণের আশায় সকালে নাশতা বাদ দেন। তবে এটা যে আমাদের শরীরে নানানভাবে ক্ষতি করে সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। সকালের নাশতা বাদ দিলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকে সকাল আর দুপুরের খাবার একবারে খান।

কেউ কেউ আবার ওজন কমাতে সকালের নাশতা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যদিও নাশতা এড়ালে ওজন কমে- এটি একেবারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকার ফলে যা খাওয়া হয় তা সহজে হজম হয়ে যায়। ইটিং ওয়েলের এক প্রতিবেদনে সকালের নাশতা বাদ দেয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন পুষ্টিবিদ চার্লি রিফকিন। এই বিষয়টা জানা থাকলে সকালে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও নাশতা বাদ দিবে না।

কর্মশক্তি হ্রাস: সকালে নাশতা না করার কারণে আমাদের কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের কর্মশক্তি হ্রাস পায়। সকালের নাশতা করার মাধ্যমে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩ বেলা খাবারের মধ্যে সকালের নাশতা অপেক্ষাকৃত ভারি হওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। সকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়, দুর্বল লাগে না। কিন্তু যখন আমার সকালে খাবার খাই না তখন কাজ করার শক্তি পাই না দুর্বল লাগে এমনকি মনোযোগেও সমস্যা হয়।

মুড সুইং: সকালের নাশতা না খেলে পেটে ক্ষুধা থাকে আর পেটের ক্ষুধা আমাদের মস্তিষ্ককেও উত্তেজিত করে ফেলে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কাজে মন বসে না। যারা সকালের নাস্তা করেন না তারা সবচেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন ও সবকিছু ভুলে যান বেশি। অন্যদিকে সকালের নাশতা মস্তিষ্কের সুখী হরমোন সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। এটি ঘুম ও ক্ষুধার ভারসাম্য ঠিক রাখে।

সবসময় ক্ষুধা বোধ করা: সকালে ঠিকভাবে নাশতা করলে সারাদিন আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পুষ্টিবিদরা বলছেন, অনেকে সকালের খাবার বাদ দেন এবং দিনের বাকি সময় তারা ক্ষুধা বোধ করেন। অন্যদিকে না খাওয়ার কারণে দুর্বল লাগে আর তাই আমাদের শরীর শরীর দ্রুত শক্তির উৎস খুঁজতে থাকে। তখন আমরা দ্রুত সময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই যেটা পরে আমাদের শরীরে ক্ষতি করে। এবং পরবর্তীতে ফের ক্ষুধা লাগে।

হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করা: সকালের নাশতা না করলে আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর এই সমস্যা শুরু হয় কর্টিসল দিয়ে, যেটি স্ট্রেস হরমোন। এই হরমোন মানসিক চাপ তৈরিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। সকালবেলা কর্টিসল নিঃসৃত হয় সবচেয়ে বেশি। সকালের নাশতায় যদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হয়, তাহলে তা কর্টিসলের নিঃসরণ কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর এই অভ্যাস মেটাবলিজম সিস্টেম তথা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব: সকালের নাশতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর নাশতা না করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অনেক বেশি জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া সকালের নাশতা অনেক ধরনের রোগ থেকেও রক্ষা করে আমাদের দেহকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত সকালের খাবার খেতে হবে।

সকালের কাজের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। তাই বলে কখনো নাশতা খাওয়া বাদ দেয় যাবে না। বরং অল্প সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করার চেষ্টা করুন। এতে করে সারাদিন ভালো যাবে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post সকালের নাশতা বাদ দিলে সত্যিই কি রোগে ভুগতে হয়! appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

সকালের নাশতা বাদ দিলে সত্যিই কি রোগে ভুগতে হয়!

Update Time : 11:07:25 am, Sunday, 5 January 2025

বর্তমান সময়ে সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার অভাবে অনেকেই সকালে নাশতা খান না। কেউবা ওজন নিয়ন্ত্রণের আশায় সকালে নাশতা বাদ দেন। তবে এটা যে আমাদের শরীরে নানানভাবে ক্ষতি করে সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। সকালের নাশতা বাদ দিলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকে সকাল আর দুপুরের খাবার একবারে খান।

কেউ কেউ আবার ওজন কমাতে সকালের নাশতা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যদিও নাশতা এড়ালে ওজন কমে- এটি একেবারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকার ফলে যা খাওয়া হয় তা সহজে হজম হয়ে যায়। ইটিং ওয়েলের এক প্রতিবেদনে সকালের নাশতা বাদ দেয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন পুষ্টিবিদ চার্লি রিফকিন। এই বিষয়টা জানা থাকলে সকালে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও নাশতা বাদ দিবে না।

কর্মশক্তি হ্রাস: সকালে নাশতা না করার কারণে আমাদের কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের কর্মশক্তি হ্রাস পায়। সকালের নাশতা করার মাধ্যমে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩ বেলা খাবারের মধ্যে সকালের নাশতা অপেক্ষাকৃত ভারি হওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। সকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়, দুর্বল লাগে না। কিন্তু যখন আমার সকালে খাবার খাই না তখন কাজ করার শক্তি পাই না দুর্বল লাগে এমনকি মনোযোগেও সমস্যা হয়।

মুড সুইং: সকালের নাশতা না খেলে পেটে ক্ষুধা থাকে আর পেটের ক্ষুধা আমাদের মস্তিষ্ককেও উত্তেজিত করে ফেলে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কাজে মন বসে না। যারা সকালের নাস্তা করেন না তারা সবচেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন ও সবকিছু ভুলে যান বেশি। অন্যদিকে সকালের নাশতা মস্তিষ্কের সুখী হরমোন সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। এটি ঘুম ও ক্ষুধার ভারসাম্য ঠিক রাখে।

সবসময় ক্ষুধা বোধ করা: সকালে ঠিকভাবে নাশতা করলে সারাদিন আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পুষ্টিবিদরা বলছেন, অনেকে সকালের খাবার বাদ দেন এবং দিনের বাকি সময় তারা ক্ষুধা বোধ করেন। অন্যদিকে না খাওয়ার কারণে দুর্বল লাগে আর তাই আমাদের শরীর শরীর দ্রুত শক্তির উৎস খুঁজতে থাকে। তখন আমরা দ্রুত সময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই যেটা পরে আমাদের শরীরে ক্ষতি করে। এবং পরবর্তীতে ফের ক্ষুধা লাগে।

হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করা: সকালের নাশতা না করলে আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর এই সমস্যা শুরু হয় কর্টিসল দিয়ে, যেটি স্ট্রেস হরমোন। এই হরমোন মানসিক চাপ তৈরিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। সকালবেলা কর্টিসল নিঃসৃত হয় সবচেয়ে বেশি। সকালের নাশতায় যদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হয়, তাহলে তা কর্টিসলের নিঃসরণ কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর এই অভ্যাস মেটাবলিজম সিস্টেম তথা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব: সকালের নাশতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর নাশতা না করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অনেক বেশি জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া সকালের নাশতা অনেক ধরনের রোগ থেকেও রক্ষা করে আমাদের দেহকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত সকালের খাবার খেতে হবে।

সকালের কাজের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। তাই বলে কখনো নাশতা খাওয়া বাদ দেয় যাবে না। বরং অল্প সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করার চেষ্টা করুন। এতে করে সারাদিন ভালো যাবে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post সকালের নাশতা বাদ দিলে সত্যিই কি রোগে ভুগতে হয়! appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.