কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:
দেশের সর্বত্র যখন প্লাস্টিক জাতীয় সামগ্রী পরিবেশ দূষণ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, নিত্য প্রয়োজনীয় প্লাস্টিক সামগ্রীর পর্যাপ্ত বিকল্প না থাকার কারণে প্লাস্টিক সামগ্রী পুরাপুরি বন্ধ করতে পারছেন না। , প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে পরিবেশবাদীরা যখন উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ প্লাস্টিক সামগ্রী বন্ধ করার জন্য নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেও সফল হতে পারছেনা, ঠিক তখন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাঙ্গুলী গ্রামের ন্যাচারাল বিউটি প্রাইভেট লিমিটেড স্বত্বাধিকারি নারী উদ্যোক্তা কেউন্দিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান জুয়েলের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন উদ্যোগ গ্রহণ করেন পরিবেশবান্ধব থালা, বাটি, বাসন, ট্রে সহ নানা প্রকার সামগ্রী তৈরি করার।কাজ শুরু করে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সকল মহলে পরিচিতি লাভ করেন ইতিমধ্যেই। এ বিষয়ে কথা হয় নিলুফার ইয়াসমিনের স্বামী ইঞ্জিনিয়ার জুয়েলের সাথে তিন জানান, তার স্ত্রী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারেন যে প্লাস্টিকের সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক । প্লাস্টিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তখন থেকেই প্লাস্টিকের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিকল্প কি হতে পারে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। পরে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পারেন সুপারি গাছের খোল দিয়ে বিভিন্ন প্রকার পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। তখনই নিলুফার ইয়াসমিন তার স্বামীকে বিষয়টি জানান এবং পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করার কারখানা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন জুয়েল । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কারখানার মেশিন আমদানি নিয়ে। মেশিনগুলো ইন্ডিয়া অথবা অন্য কোন দেশ থেকে আমদানি করতে হলে অনেক ব্যয়বহুল। যে কারণে থমকে যায় তার পরিকল্পনা। ঠিক সেই মুহূর্তে স্ত্রীর পরিকল্পনায় অটল থাকেন। তিনি অন্য একটি কারখানা দেখে ইন্ডিয়ান মেশিনের মত করে নিজস্ব পরিকল্পনায় বাংলাদেশই তৈরি করেন সুপারির খোল দিয়ে থালা বাসন তৈরি করার মেশিন। এতে সফল হন তিনি। পরে বাড়ির পাশে কাউখালী – ঝালকাঠি সংক্ষিপ্ত সড়কের পাশে গাঙ্গুলী সাহাপুরা গ্রামে মামা ফরিদ হোসেনের একটি ঘর ও জায়গা ১০ বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৈরি করেন কারখানা। ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় কারখানা তৈরি করে উৎপাদন শুরু করেন বিভিন্ন প্রকার থালা, বাসন, বাটি, পেয়ালা, ট্রে সহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সামগ্রী। পরিত্যক্ত সুপারির খোল দিয়ে থালা-বাসন প্লেট তৈরি করার মেশিন বসিয়ে যখন পরিবেশবান্ধব সামগ্রী উৎপাদন শুরু করেন। তখন এলাকার চারিদিকে হৈ চৈ লেগে যায়।সর্বত্র তিনি জানান দিয়ে দেন অর্থকারী ফসল সুপারি গাছের পরিত্যক্ত খোলাসটি এখন আর পরিবেশ দূষণ করবে না। এটি ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে পরিবেশের ভারসাম্য জন্য তৈরি করা হবে প্লাস্টিকের বিকল্প সামগ্রী। সাধারণ মানুষ বিষয়টিতে আশ্বস্ত হয় সকলেই শুরু করেন সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ কার্যক্রম। গাছ থেকে একটি সুপারি গাছের খোল পরার সাথে সাথেই সংগ্রহ করছেন বাগানের মালিকরা।উন্নতমানের ভালো সাইজের একটি খোল দুই টাকার বিনিময় কিনছেন উদ্যোক্তা। বাকি অংশটি নিজেরাই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন সুপারি গাছের মালিক পক্ষ। যার ফলে এই এলাকায় সুপারি গাছের চাষ এক বছরে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান আগাছা গাছ কেটে মানুষ এখন ঝুকছে সুপার বাগান তৈরি করতে। এলাকায় ঝিমিয়ে পড়া বেকার মানুষগুলোর মাঝে সৃষ্টি করছে প্রাণ চঞ্চলতা।সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান, আয় বাড়ছে বেকারদের। তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী। সাধারণ মানুষ ও ভোক্তরা স্বল্প মূল্যে মানসম্মত প্লাস্টিকের বিকল্প থালা-বাসন সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে বেশ খুশি। উপজেলার নাঙ্গুলী গ্রামে সরেজমিন ঘুরে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। কারখানার উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমিনের স্বামী ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল জানান আমার স্ত্রীর অদম্য আগ্রহের কারণে এটা করা সম্ভব হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব আমাদের উৎপাদিত মালামাল গুলির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকি। বর্তমানে নেদারল্যান্ডের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। বিদেশে আমরা রপ্তানি করতে পারলে আমরা ব্যক্তিগত এবং দেশ লাভবান হবে। বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। কাউখালী সোনালী ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় কাজটি করা আমার কাছে সম্ভব হয়েছে। তবে সরকারের সহযোগিতা পেলে কারখানার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে ৪জন কর্মচারী খোল দিয়ে বিভিন্ন মালামাল উৎপাদন করছেন। খোল সংগ্রহে অনেকে কর্মব্যস্ত থাকেন তারাও লাভবান হচ্ছে। দৈনিক ৫/৬ শত থালা,বাসন সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তিনি আরো জানান সম্পূর্ণ কেমিক্যাল মুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে এই মালামাল তৈরি করা হয়। নিয়ম মেনে এইগুলি একাধিকবার ব্যবহার করলেও কোন সমস্যা হয় না। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল কর্মচারী বেতন দিতে প্রায় ৫০/ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করেও আমার স্ত্রীর লাভবান হচ্ছে। বাসুরী, আমরাজুড়ি ,সুবিদপুর, চিরাপাড়া গ্রামের কয়েকজন সুপারি চাষীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, কাউখালীতে দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি সুপারের উৎপাদন হয়। যেখানে সুপারির খোলগুলো নষ্ট হয়ে পরিবেশের দূষণ ঘটাত সেই জায়গায় সে খোলটি বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়। যার ফলে খোল সংগ্রহ করে অনেকেই ন্যাচারাল বিউটির কাছে বিক্রি করে লাভবান হতে পারছে। বর্তমানে কারাখানাটি নিলুফা ইয়াসমিনের মামা ফরিদ হোসেন তত্ত্বাবধান করছেন। এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, খোল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব থালা-বাস উৎপাদন করায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। অপরদিকে বেকারত্ব হ্রাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের সকল বেকার যুবক যুবতীদের এই জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে । তাহলে কারো চাকুরির জন্য ঘুরতে হবে না। বরং উদ্যোক্তারা চাকরি দিতে পারবেন। তিনি উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন যে এই জাতীয় কাজে যে কোনো সহযোগিতার চাওয়া হইলে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
The post সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব তৈজসপত্র appeared first on Amader Barisal - First online Newspaper of Greater Barisal - Stay with Barisal 24x7.
ঠিকানা : গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ || তথ্য, খবর ও বিজ্ঞাপন : +8809611719385 || ইমেইল : songbadpatra24@gmail.com
Visit : songbadpatra.com
All rights reserved © সংবাদপত্র-2024