11:46 pm, Tuesday, 7 January 2025

চার মাস ধরে ‘পরিত্যক্ত’ সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও এমপি’র ১০ বাড়ি

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে খুলনায় সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্যদের ১০টি বাড়ি এখন ‘পরিত্যক্ত’। একসময় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় লেগে থাকত এই বাড়িগুলোতে। চার মাস ধরে সেই বাড়িগুলো একেবারে সুনসান।

খুলনার ডুমুরিয়া সদরে প্রাণিসম্পদ অফিসের বিপরীতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের দোতলা বাড়ি। গত ৫ আগস্ট হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে এখানে কেউ থাকেন না। বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। নারায়ণ চন্দ্র গত ৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে মন্ত্রী বাড়িতে থাকলে মধ্যরাত পর্যন্ত লোকসমাগম থাকত। এখন সেই কোলাহল থেমে গেছে।

নগরীর রেলিগেট এলাকায় সড়কের দুই পাশে রয়েছে সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মন্নুজান সুফিয়ানের দুটি বাড়ি। একটি চারতলা, অন্যটি তিনতলা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাড়ি ছাড়েন মন্নুজান সুফিয়ান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এর পর থেকে বাড়ি দুটি খালি পড়ে আছে।

বাড়ি দুটির পার্শ্ববর্তী দু’জন দোকানি জানান, বাড়িতে এখন কোনো লোকজন আসেন না। কোনো নিরাপত্তারক্ষীও নেই।

নগরীর কাস্টমস ঘাট এলাকায় সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এবং তাঁর স্ত্রী সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। গত ৪ ও ৫ আগস্ট কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয় বাড়িটিতে। ৪ আগস্ট রাতে বাড়ি ছাড়েন এই দম্পতি। এর পর থেকে সেটি অনেকটা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির একটি প্রবেশপথ ছাড়া অন্যগুলো বন্ধ করে দিয়ে সেখানে দেয়াল দেওয়া হয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ বলেন, আগে বাড়ির সামনে সব সময় গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সারি দেখা যেত। সেই দৃশ্য আর নেই।

নগরীর নতুন বাজার এলাকায় রূপসা স্ট্যান্ড রোডে চারতলা একটি বাড়ির মালিক জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাড়ি ছাড়েন তিনি। গত ১১ নভেম্বর রাতে যৌথ বাহিনী ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি রাইফেল, রাইফেলের ১৩ রাউন্ড গুলি, রাইফেলের গুলির চারটি খোসা, একটি রিভলবার, রিভলবারের ২০ রাউন্ড গুলি, রাইফেলের গুলির চার্জার দুটি, পিস্তলের কভার একটি, রাইফেলের কভার একটি ও ২৫০ ভারতীয় রুপির নোট উদ্ধার করে।

নগরীর টুটপাড়া এলাকায় খালি পড়ে আছে খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর পাঁচতলা বাড়ি। বাড়িটি এখন তালাবদ্ধ। কয়রায় তাঁর একটি দোতলা ও পাইকগাছায় একটি একতলা বাড়িতে ৪ আগস্ট হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় উত্তেজিত জনতা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাড়ি দুটি। ইটের অবকাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত।

দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডলের দোতলা বাড়ি। তবে ওই বাড়িতে কোনো হামলা হয়নি।

নগরীর শেরেবাংলা সড়কে ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বাড়িটি এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ। গত ৪ ও ৫ আগস্ট উত্তেজিত জনতার সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা যায় এই বাড়িটির ওপর। দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর ইটের অবকাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। বাড়ির গেটও খুলে নিয়ে যায় লোকজন। সম্প্রতি কে বা কারা বাড়ির গেটের জায়গায় টিনের বেড়া দিয়েছে।

নগরীর কাস্টমস ঘাট এলাকার ইসহাক সরদারের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের নিচতলা ও দোতলা ভাড়া নিয়েছিলেন খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী। আগস্টের উত্তাল সময়ে সেখানে ভাঙচুর ও আগুন দেয় লোকজন। গত ১ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন সালাম মুর্শেদী। এখানে তাঁর কেউ আর থাকেন না।

নগরীর খালিশপুরে স্কাউটস মাঠের পাশে একটি বাড়ির নিচতলা ও দোতলা ভাড়া নিয়ে থাকতেন খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

বাড়ির মালিক আবদুর রহিম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামালের বাড়ি মনে করে ৫ আগস্ট কিছু লোকজন এখানে হামলা ও ভাঙচুর করেছিল। এখন আর তাদের কেউ এখানে থাকেন না। অন্যদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়েছি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, সাবেক এই জনপ্রতিনিধিরা অনেক টাকা ব্যয় করে বাড়িগুলো তৈরি করেছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে তারা বাড়িছাড়া। আগে এসব বাড়িতে মধ্যরাত পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজন কেউই বাড়িগুলোর ধারেকাছে ভেড়েন না। সূত্র : সমকাল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post চার মাস ধরে ‘পরিত্যক্ত’ সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও এমপি’র ১০ বাড়ি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

চার মাস ধরে ‘পরিত্যক্ত’ সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও এমপি’র ১০ বাড়ি

Update Time : 11:08:39 am, Monday, 6 January 2025

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে খুলনায় সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্যদের ১০টি বাড়ি এখন ‘পরিত্যক্ত’। একসময় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় লেগে থাকত এই বাড়িগুলোতে। চার মাস ধরে সেই বাড়িগুলো একেবারে সুনসান।

খুলনার ডুমুরিয়া সদরে প্রাণিসম্পদ অফিসের বিপরীতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের দোতলা বাড়ি। গত ৫ আগস্ট হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে এখানে কেউ থাকেন না। বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। নারায়ণ চন্দ্র গত ৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে মন্ত্রী বাড়িতে থাকলে মধ্যরাত পর্যন্ত লোকসমাগম থাকত। এখন সেই কোলাহল থেমে গেছে।

নগরীর রেলিগেট এলাকায় সড়কের দুই পাশে রয়েছে সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মন্নুজান সুফিয়ানের দুটি বাড়ি। একটি চারতলা, অন্যটি তিনতলা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাড়ি ছাড়েন মন্নুজান সুফিয়ান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এর পর থেকে বাড়ি দুটি খালি পড়ে আছে।

বাড়ি দুটির পার্শ্ববর্তী দু’জন দোকানি জানান, বাড়িতে এখন কোনো লোকজন আসেন না। কোনো নিরাপত্তারক্ষীও নেই।

নগরীর কাস্টমস ঘাট এলাকায় সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এবং তাঁর স্ত্রী সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। গত ৪ ও ৫ আগস্ট কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয় বাড়িটিতে। ৪ আগস্ট রাতে বাড়ি ছাড়েন এই দম্পতি। এর পর থেকে সেটি অনেকটা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির একটি প্রবেশপথ ছাড়া অন্যগুলো বন্ধ করে দিয়ে সেখানে দেয়াল দেওয়া হয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ বলেন, আগে বাড়ির সামনে সব সময় গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সারি দেখা যেত। সেই দৃশ্য আর নেই।

নগরীর নতুন বাজার এলাকায় রূপসা স্ট্যান্ড রোডে চারতলা একটি বাড়ির মালিক জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাড়ি ছাড়েন তিনি। গত ১১ নভেম্বর রাতে যৌথ বাহিনী ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি রাইফেল, রাইফেলের ১৩ রাউন্ড গুলি, রাইফেলের গুলির চারটি খোসা, একটি রিভলবার, রিভলবারের ২০ রাউন্ড গুলি, রাইফেলের গুলির চার্জার দুটি, পিস্তলের কভার একটি, রাইফেলের কভার একটি ও ২৫০ ভারতীয় রুপির নোট উদ্ধার করে।

নগরীর টুটপাড়া এলাকায় খালি পড়ে আছে খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর পাঁচতলা বাড়ি। বাড়িটি এখন তালাবদ্ধ। কয়রায় তাঁর একটি দোতলা ও পাইকগাছায় একটি একতলা বাড়িতে ৪ আগস্ট হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় উত্তেজিত জনতা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাড়ি দুটি। ইটের অবকাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত।

দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডলের দোতলা বাড়ি। তবে ওই বাড়িতে কোনো হামলা হয়নি।

নগরীর শেরেবাংলা সড়কে ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বাড়িটি এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ। গত ৪ ও ৫ আগস্ট উত্তেজিত জনতার সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা যায় এই বাড়িটির ওপর। দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর ইটের অবকাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। বাড়ির গেটও খুলে নিয়ে যায় লোকজন। সম্প্রতি কে বা কারা বাড়ির গেটের জায়গায় টিনের বেড়া দিয়েছে।

নগরীর কাস্টমস ঘাট এলাকার ইসহাক সরদারের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের নিচতলা ও দোতলা ভাড়া নিয়েছিলেন খুলনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী। আগস্টের উত্তাল সময়ে সেখানে ভাঙচুর ও আগুন দেয় লোকজন। গত ১ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন সালাম মুর্শেদী। এখানে তাঁর কেউ আর থাকেন না।

নগরীর খালিশপুরে স্কাউটস মাঠের পাশে একটি বাড়ির নিচতলা ও দোতলা ভাড়া নিয়ে থাকতেন খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

বাড়ির মালিক আবদুর রহিম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামালের বাড়ি মনে করে ৫ আগস্ট কিছু লোকজন এখানে হামলা ও ভাঙচুর করেছিল। এখন আর তাদের কেউ এখানে থাকেন না। অন্যদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়েছি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, সাবেক এই জনপ্রতিনিধিরা অনেক টাকা ব্যয় করে বাড়িগুলো তৈরি করেছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে তারা বাড়িছাড়া। আগে এসব বাড়িতে মধ্যরাত পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজন কেউই বাড়িগুলোর ধারেকাছে ভেড়েন না। সূত্র : সমকাল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post চার মাস ধরে ‘পরিত্যক্ত’ সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও এমপি’র ১০ বাড়ি appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.