11:54 pm, Tuesday, 7 January 2025

উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষে ঝুঁক‌ছে কৃষক, খরচ কম উৎপাদন দ্বিগুণ

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ওহিদ শেখ। দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। ২০২২ সালে শসা চাষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল তুলতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

পরের বছর শসা চাষ না করে স্বল্প পরিসরে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। ফলন খুব ভালো হয়। আর্থিক ভাবে লাভবান হন। উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষে তার আগ্রহ এবং উৎসাহ দুই-ই বেড়ে যায়। পরের বছরও সমপরিমাণ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ করে লাভবান হন। এ বছর নিজের ১ বিঘা জমির সাথে অন্যের ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। বাকি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা মূলা, শসা এবং পুঁই শাকের চাষ করেন।

ওহিদ শেখ খুলনা গেজেটকে বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল মাইর যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হই। এরপর নিজের অল্প জমিতে দুই বছর অল্প অল্প করে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের চাষ করি। ফলন খুব ভালো হয়। লাভবান হই। এরপর নিজের এক বিঘা জমির সাথে অন্যের দশ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ শুরু করি। বাকি জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, শসা, মূলা এবং পুইশাক লাগাইছি। আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে লাউ চাষে এ বছর প্রচুর লাভবান হয়েছি। আগে সাধারণতঃ আমাদের আঙ্গিনায়, বাড়ির পাশে মাচায় লাউ চাষ হতো। কিন্তু সেটার উৎপাদন খুব বেশি হতো না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষে খরচ খরচা কম হয় উৎপাদনও দ্বিগুণ হয়। এ বছর আমার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বাভাবিক ফলনের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফলন পেয়েছি। লাউয়ের সাইজ খুবই ভালো। লম্বা এবং গোলাকৃতি দুই জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। খেতে খুব মিষ্টি। এত পরিমাণ লাউ ধরেছে ডগায় যে লাউয়ের ডগা কাটতে পারি না। প্রতিটি ডগায় ছোট ছোট অসংখ্য লাউ ভর্তি। প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াই’শ লাউ কাটছি। বিক্রি করছি প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। দুই মাস আগে থেকে লাউ বিক্রি শুরু করি। তখন উৎপাদন কম ছিল। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টা কাটতাম। তখন একটা লাউ বিক্রি করেছি ৭০-৮০ টাকা।

এখন ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াই’শ কাটছি। দিনে দুইবার লাউ কাটি। এখন দাম একটু কম। এক পিচ ২০/২৫ টাকা বিক্রি করছি। এ পদ্ধতিতে লাউ চাষে খরচ খুব কম। বাশেঁর চটার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তার উপর নেট দিয়ে আইং (আঙ্গিনা) করে লাউ চাষ করছি। উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ এনে রোপণ করে বীজ অংকুর হওয়ার পর থেকে যত্ন নেওয়া শুরু করি। এরপর গাছে ফুল আসলে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজনন না হলে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করাতে হয়। এক্ষেত্রে পুরুষ ফুলের পুংকেশ বা রেনু স্ত্রী ফুলের মাথায় স্পর্শ করে দিলে কৃত্তিম ভাবে পরাগায়ন হয়। এর ফলে লাউ নষ্ট কম হয়। এটা করা না হলে পরাগায়নের অভাবে অনেক লাউ নষ্ট হয়ে যায়। ভোমরে লাউয়ের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য ৫ লিটারের প্লাস্টিক বোতলের মাঝখানে কেটে বিষ মিশ্রিত পানি আঙিনায় মাঝে মাঝে বেঁধে রাখলে ভোমর পানির ভীতর ডুবে মারা যায়।

পার্শ্ববর্তী আমবাগানের মালিক কৃষির মাধ্যমে সফলতা অর্জনকারী এড. শাহাদাত আলী বলেন, ওহিদ শেখ আমাদের দেয়াড়া গ্রামের একজন কর্মঠ চাষী। গত ২/৩ বছর ধরে সে আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক উপায়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউয়ের চাষ করে সফল হয়েছে। বর্তমানে তার লাউ একটা বাম্পার প্রোডাকশনে আছে। প্রচুর ফলন হচ্ছে। লাউ বিক্রি করে খুবই লাভবান হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতে সরবরাহ করছে।

Oplus_131072

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সবজির যে চাহিদা এবং আহাজারি তাতে করে ধান ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে এই সময়টা উন্নত মানের লাউ চাষ করে অনেকে লাভবান হতে পারে। আমার আম বাগানের ভিতর সে সাথী ফসল হিসেবে মুলা চাষ করেছে। লাউয়ের উৎপাদন শেষ হওয়ার সাথে সাথে আর একটা সাথী ফসল আসবে। লাউ চাষের পাশাপাশি সে দশ বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা শসা মূলা এবং পুইশাকের চাষ করছে।

লাউয়ের পুষ্টিগণ সম্পর্কে জানা যায়, লাউয়ে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী লাউ এ ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম রয়েছে। এছাড়াও লাউয়ের অন্যান্য পুষ্টিগুণও রয়েছে যেমন- খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.১ গ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৫.১ গ্রাম।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষে ঝুঁক‌ছে কৃষক, খরচ কম উৎপাদন দ্বিগুণ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষে ঝুঁক‌ছে কৃষক, খরচ কম উৎপাদন দ্বিগুণ

Update Time : 12:08:12 pm, Monday, 6 January 2025

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ওহিদ শেখ। দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। ২০২২ সালে শসা চাষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল তুলতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

পরের বছর শসা চাষ না করে স্বল্প পরিসরে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। ফলন খুব ভালো হয়। আর্থিক ভাবে লাভবান হন। উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষে তার আগ্রহ এবং উৎসাহ দুই-ই বেড়ে যায়। পরের বছরও সমপরিমাণ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ করে লাভবান হন। এ বছর নিজের ১ বিঘা জমির সাথে অন্যের ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। বাকি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা মূলা, শসা এবং পুঁই শাকের চাষ করেন।

ওহিদ শেখ খুলনা গেজেটকে বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল মাইর যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হই। এরপর নিজের অল্প জমিতে দুই বছর অল্প অল্প করে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের চাষ করি। ফলন খুব ভালো হয়। লাভবান হই। এরপর নিজের এক বিঘা জমির সাথে অন্যের দশ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ শুরু করি। বাকি জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, শসা, মূলা এবং পুইশাক লাগাইছি। আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে লাউ চাষে এ বছর প্রচুর লাভবান হয়েছি। আগে সাধারণতঃ আমাদের আঙ্গিনায়, বাড়ির পাশে মাচায় লাউ চাষ হতো। কিন্তু সেটার উৎপাদন খুব বেশি হতো না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষে খরচ খরচা কম হয় উৎপাদনও দ্বিগুণ হয়। এ বছর আমার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বাভাবিক ফলনের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফলন পেয়েছি। লাউয়ের সাইজ খুবই ভালো। লম্বা এবং গোলাকৃতি দুই জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। খেতে খুব মিষ্টি। এত পরিমাণ লাউ ধরেছে ডগায় যে লাউয়ের ডগা কাটতে পারি না। প্রতিটি ডগায় ছোট ছোট অসংখ্য লাউ ভর্তি। প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াই’শ লাউ কাটছি। বিক্রি করছি প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। দুই মাস আগে থেকে লাউ বিক্রি শুরু করি। তখন উৎপাদন কম ছিল। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টা কাটতাম। তখন একটা লাউ বিক্রি করেছি ৭০-৮০ টাকা।

এখন ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াই’শ কাটছি। দিনে দুইবার লাউ কাটি। এখন দাম একটু কম। এক পিচ ২০/২৫ টাকা বিক্রি করছি। এ পদ্ধতিতে লাউ চাষে খরচ খুব কম। বাশেঁর চটার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তার উপর নেট দিয়ে আইং (আঙ্গিনা) করে লাউ চাষ করছি। উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ এনে রোপণ করে বীজ অংকুর হওয়ার পর থেকে যত্ন নেওয়া শুরু করি। এরপর গাছে ফুল আসলে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজনন না হলে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করাতে হয়। এক্ষেত্রে পুরুষ ফুলের পুংকেশ বা রেনু স্ত্রী ফুলের মাথায় স্পর্শ করে দিলে কৃত্তিম ভাবে পরাগায়ন হয়। এর ফলে লাউ নষ্ট কম হয়। এটা করা না হলে পরাগায়নের অভাবে অনেক লাউ নষ্ট হয়ে যায়। ভোমরে লাউয়ের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য ৫ লিটারের প্লাস্টিক বোতলের মাঝখানে কেটে বিষ মিশ্রিত পানি আঙিনায় মাঝে মাঝে বেঁধে রাখলে ভোমর পানির ভীতর ডুবে মারা যায়।

পার্শ্ববর্তী আমবাগানের মালিক কৃষির মাধ্যমে সফলতা অর্জনকারী এড. শাহাদাত আলী বলেন, ওহিদ শেখ আমাদের দেয়াড়া গ্রামের একজন কর্মঠ চাষী। গত ২/৩ বছর ধরে সে আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক উপায়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউয়ের চাষ করে সফল হয়েছে। বর্তমানে তার লাউ একটা বাম্পার প্রোডাকশনে আছে। প্রচুর ফলন হচ্ছে। লাউ বিক্রি করে খুবই লাভবান হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতে সরবরাহ করছে।

Oplus_131072

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সবজির যে চাহিদা এবং আহাজারি তাতে করে ধান ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে এই সময়টা উন্নত মানের লাউ চাষ করে অনেকে লাভবান হতে পারে। আমার আম বাগানের ভিতর সে সাথী ফসল হিসেবে মুলা চাষ করেছে। লাউয়ের উৎপাদন শেষ হওয়ার সাথে সাথে আর একটা সাথী ফসল আসবে। লাউ চাষের পাশাপাশি সে দশ বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা শসা মূলা এবং পুইশাকের চাষ করছে।

লাউয়ের পুষ্টিগণ সম্পর্কে জানা যায়, লাউয়ে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী লাউ এ ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম রয়েছে। এছাড়াও লাউয়ের অন্যান্য পুষ্টিগুণও রয়েছে যেমন- খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.১ গ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৫.১ গ্রাম।

 

খুলনা গেজেট/এনএম

The post উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষে ঝুঁক‌ছে কৃষক, খরচ কম উৎপাদন দ্বিগুণ appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.