পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
সরকারি হিসেব মতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন পটুয়াখালী জেলার ২৪ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা বা চিকিৎসার খরচ পাননি অনেকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পায়রা নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার দক্ষিণ পাংগাশিয়া গ্রামের আব্দুস সোবহান হাওলাদার ও রাবেয়া বেগম দম্পতি। ঢাকায় একটি এনজিওর গাড়ি চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেন তাদের মেঝ ছেলে মো. জসিম উদ্দিন। গ্রামে জমি কিনে বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য তৈরি করে দেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাবা স্ট্রোকের রোগী। মা-ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, তার উপরে বাড়িতে রয়েছে মৃত বোনের প্রতিবন্ধী মেয়ে। স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও গ্রামে নিয়মিত বাবা মায়ের ভরণপোষণের খরচ পাঠাতেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ১০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার আকস্মিক মৃত্যুতে মহাবিপদে পড়ে পুরো পরিবার। উপর্জনক্ষম সন্তানের শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন মা রাবেয়া বেগম। প্রতিনিয়ত সন্তানের কবরের পাশে বসে ফেলেন চোখের জল। কর্মহীন অসুস্থ্ সোবাহান হাওলাদার হিমসিম খাচ্ছেন পরিবার সামাল দিতে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পৌঁছায়নি তাদের কাছে।
এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় চলে তাদের জীবন। সরকারি বড় ধরনের সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় তাদের।
প্রায় একই অবস্থা অন্য শহীদ পরিবারগুলোরও। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মুষড়ে পড়েছেন অনেকেই। রতন তরুয়া ও অর্চনা রানী দম্পতির জীবনে একমাত্র আশার আলো ছিল হৃদয় তরুয়া। মেধাবী হওয়ায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠান তারা। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনে একটি বুলেট ছিটকে গিয়ে তার গলায় লাগে। কয়েকদিন হাসপাতালে ছটফট করে ২৩ জুলাই নিভে যায় হৃদয়ের জীবন প্রদীপ। সেই থেকে তার মা অনেকটাই বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। স্থবির হয়ে পড়ে তাদের জীবন। ছেলের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে প্রতিদিন শ্মশানে ছুটে যান রতন তরুয়া। ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন তিনি।
শহীদ হৃদয় তড়ুয়ার অবদান স্মরেন তার নামে শহরে একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে। তবে সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি তারা।
১৮ জুলাই মহাখালীতে আন্দোলনে যোগ দিয়ে চোখে স্প্রিন্টারের আঘাত লাগে মো. রাজনের৷ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিলেও দৃষ্টিশক্তি এখনও ফিরে পাননি তিনি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কাজকর্ম। চিকিৎসার খরচ দেয়া তো দূরে থাক এতদিনে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
জুলাইয়ে ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনতার অংশগ্রহণে রূপ নেয় গণআন্দোলনে। ছাত্র জনতার আত্মাহুতিতে পতন হয় তৎকালীন সরকারের। আন্দোলনে নেমে প্রথম দিকে পটুয়াখালীতে ছাত্ররা হামলার শিকার হলেও ৩ আগস্ট থেকে সবার সমন্বয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। ৫ আগস্ট মুক্তির স্বাদ পেয়েও ঘরে ফিরে যাননি ছাত্ররা। বিভিন্ন সরকারি দফতর, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহাড়া এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করেছেন তারা। বর্তমানে নিহত ও আহতদের তালিকা প্রস্তুত করতে প্রশাসনকে সহায়তা করছেন তারা। তাই শহীদ পরিবারকে সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় প্রদান করবে সরকার এমন প্রত্যাশা সবার।
The post পটুয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের খোঁজ রাখেনি কেউ! appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.