12:54 pm, Wednesday, 15 January 2025

যাত্রী সংকটে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ

বিশেষ প্রতিনিধি:

জৌলুস হারিয়ে ফেলা বরিশাল-ঢাকা নৌরুট বিলাসবহুল লঞ্চগুলো এখন যাত্রী সংকটে ভুগছে। কালোবাজারে কেবিনের টিকিট বিক্রিসহ কল ম্যানদের ডাকেও এখন লঞ্চগুলোতে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী মিলছে না। যদিও সংকটের মাঝেই বর্ষা বা গরমের থেকে শীতে কিছুটা যাত্রী বেশি হচ্ছে লঞ্চগুলোতে, তবে তাতেও খরচ পুষিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ফলে লঞ্চ মালিকের পাশাপাশি কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। 

জানা গেছে, ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রী সংকট শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে যত কোম্পানি তাদের বিলাসবহুল বাস সার্ভিস ঢাকা-বরিশাল রুটে শুরু করে ততই যাত্রী সংকট বাড়ে নৌ রুটে। 

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর আগে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যেখানে গড়ে ১০-১৪টি লঞ্চ প্রতিদিন দুই প্রান্ত থেকে চলাচল করতো, সেখানে বর্তমানে চারটি লঞ্চ দুই প্রান্ত থেকে চলাচল করে। লঞ্চ কমিয়েও তিনভাগের একভাগে নিয়ে এলেও বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার ব্যতীত বাকি চার দিনে ডেকেই তেমন যাত্রী হয় না, তার ওপরে কেবিনও যায় ফাঁকা। 

এ নৌ রুটের নিয়মিত যাত্রী ও ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীদের দাবি ছিল নিয়মিত যেন লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে চালানো হয় কিন্তু লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন একপ্রান্ত থেকে ৫-৭টি লঞ্চ চালনা করত অর্থাৎ দুই প্রান্ত থেকে ১০-১৪টি। এর ফলে লঞ্চের কেবিন ঠিকভাবে পাওয়া যেত না। আর কালোবাজারি থেকে দুই থেকে পাঁচশ টাকা বেশি দিয়ে কেবিন নিতে হতো। এছাড়া ঈদের সময়ও যাত্রীদের চাহিদার থেকে লঞ্চ কমিয়ে পরিচালনা করা হতো। যাতে প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এখন সড়কমুখী। লঞ্চে তেমন যাত্রী নেই, এখন ঘাটে এসেও কেবিন পাওয়া যায়। বৃহ ও শনিবারের লঞ্চে মাঝে মাঝে লঞ্চের কেবিন না পাওয়া গেলেও কালোবাজারি থেকে ৫০ থেকে ১শ টাকা বেশি দিয়ে সেটি মিলে যায়। বেশিরভাগ সময় লঞ্চের সামনে কর্মচারীরা যাত্রী এলেই কেবিন লাগবে কি না জানতে চায়। 

পারাবত লঞ্চের কর্মচারী বাবুল শরীফ বলেন, এখন আর লঞ্চে যাত্রী নেই। ডিসেম্বর মাসে কিছু যাত্রী লঞ্চে চলাচল করছে। জানুয়ারি মাসে তার অর্ধেক যাত্রীও আসে না। যে কেউ এলেই কেবিন পাচ্ছে। 

একই কথা জানালেন এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের সুকানী মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, গেল সপ্তাহের বুধবার ঢাকা থেকে মাত্র ৩শ যাত্রী নিয়ে বরিশালে এসেছেন আবার বৃহস্পতিবারও তেমন যাত্রী হয়নি। আগেতো যাত্রীর কারণে ডেকে লঞ্চের কেবিনের করিডোরে হাটাও যেত না। এখন তার উলটো চিত্র থাকে সবসময়। 

পারাবাত ১২ লঞ্চের মো. শাহীন হোসেন জানান, গত সপ্তাহের বুধবার ঢাকা থেকে মাত্র আড়াইশ যাত্রী নিয়ে বরিশাল এসেছেন। সিঙ্গেল, ডাবল, ফেমিলি ও ভিআইপি মিলিয়ে ১৭৩টি কেবিনের ১২০টিতে শুধু যাত্রী ছিল। এদিকে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের স্টাফরা জানিয়েছেন, তাদের কোম্পানির আগে দুইটি লঞ্চ ছিল। এখন এ রুটে একটি লঞ্চ চলাচল করছে। কীর্তনখোলা-১ নামের লঞ্চটি রোলিং মিলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল আসতে যেতে সাড়ে ৬ হাজার লিটার তেল প্রয়োজন। এছাড়াও স্টাফ, মবিল, ইঞ্জিন মেরামত, ঘাট ভাড়াসহ মোট যে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয় তাই বেশিরভাগ ট্রিপেই ওঠানো সম্ভব হয় না।

অপরদিকে বিভিন্ন লঞ্চের মাস্টারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪টি নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করতো। আর ঈদ-কোরবানির ছুটিতে দিবা ও রাত্রীকালীন সার্ভিস ও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৪টি পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। সরকারি জাহাজের চলাচল বন্ধ রেখে বর্তমানে ছয়টি কোম্পানির ১২ লঞ্চ চলাচল করে। যাত্রী কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ঢাকা থেকে দুইটি ও বরিশাল থেকে দুইটি লঞ্চ ছাড়ে। রোটেশন করেও তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে লঞ্চ মালিকদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। 

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, একটা লঞ্চের প্রতি যাত্রায় কমপক্ষে হাজার যাত্রী প্রয়োজন। কিন্তু এখন অর্ধেক যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই প্রতি ট্রিপেই আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে।

The post যাত্রী সংকটে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

যাত্রী সংকটে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ

Update Time : 08:08:56 pm, Tuesday, 14 January 2025

বিশেষ প্রতিনিধি:

জৌলুস হারিয়ে ফেলা বরিশাল-ঢাকা নৌরুট বিলাসবহুল লঞ্চগুলো এখন যাত্রী সংকটে ভুগছে। কালোবাজারে কেবিনের টিকিট বিক্রিসহ কল ম্যানদের ডাকেও এখন লঞ্চগুলোতে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী মিলছে না। যদিও সংকটের মাঝেই বর্ষা বা গরমের থেকে শীতে কিছুটা যাত্রী বেশি হচ্ছে লঞ্চগুলোতে, তবে তাতেও খরচ পুষিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ফলে লঞ্চ মালিকের পাশাপাশি কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। 

জানা গেছে, ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রী সংকট শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে যত কোম্পানি তাদের বিলাসবহুল বাস সার্ভিস ঢাকা-বরিশাল রুটে শুরু করে ততই যাত্রী সংকট বাড়ে নৌ রুটে। 

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর আগে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যেখানে গড়ে ১০-১৪টি লঞ্চ প্রতিদিন দুই প্রান্ত থেকে চলাচল করতো, সেখানে বর্তমানে চারটি লঞ্চ দুই প্রান্ত থেকে চলাচল করে। লঞ্চ কমিয়েও তিনভাগের একভাগে নিয়ে এলেও বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার ব্যতীত বাকি চার দিনে ডেকেই তেমন যাত্রী হয় না, তার ওপরে কেবিনও যায় ফাঁকা। 

এ নৌ রুটের নিয়মিত যাত্রী ও ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীদের দাবি ছিল নিয়মিত যেন লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে চালানো হয় কিন্তু লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন একপ্রান্ত থেকে ৫-৭টি লঞ্চ চালনা করত অর্থাৎ দুই প্রান্ত থেকে ১০-১৪টি। এর ফলে লঞ্চের কেবিন ঠিকভাবে পাওয়া যেত না। আর কালোবাজারি থেকে দুই থেকে পাঁচশ টাকা বেশি দিয়ে কেবিন নিতে হতো। এছাড়া ঈদের সময়ও যাত্রীদের চাহিদার থেকে লঞ্চ কমিয়ে পরিচালনা করা হতো। যাতে প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এখন সড়কমুখী। লঞ্চে তেমন যাত্রী নেই, এখন ঘাটে এসেও কেবিন পাওয়া যায়। বৃহ ও শনিবারের লঞ্চে মাঝে মাঝে লঞ্চের কেবিন না পাওয়া গেলেও কালোবাজারি থেকে ৫০ থেকে ১শ টাকা বেশি দিয়ে সেটি মিলে যায়। বেশিরভাগ সময় লঞ্চের সামনে কর্মচারীরা যাত্রী এলেই কেবিন লাগবে কি না জানতে চায়। 

পারাবত লঞ্চের কর্মচারী বাবুল শরীফ বলেন, এখন আর লঞ্চে যাত্রী নেই। ডিসেম্বর মাসে কিছু যাত্রী লঞ্চে চলাচল করছে। জানুয়ারি মাসে তার অর্ধেক যাত্রীও আসে না। যে কেউ এলেই কেবিন পাচ্ছে। 

একই কথা জানালেন এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের সুকানী মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, গেল সপ্তাহের বুধবার ঢাকা থেকে মাত্র ৩শ যাত্রী নিয়ে বরিশালে এসেছেন আবার বৃহস্পতিবারও তেমন যাত্রী হয়নি। আগেতো যাত্রীর কারণে ডেকে লঞ্চের কেবিনের করিডোরে হাটাও যেত না। এখন তার উলটো চিত্র থাকে সবসময়। 

পারাবাত ১২ লঞ্চের মো. শাহীন হোসেন জানান, গত সপ্তাহের বুধবার ঢাকা থেকে মাত্র আড়াইশ যাত্রী নিয়ে বরিশাল এসেছেন। সিঙ্গেল, ডাবল, ফেমিলি ও ভিআইপি মিলিয়ে ১৭৩টি কেবিনের ১২০টিতে শুধু যাত্রী ছিল। এদিকে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের স্টাফরা জানিয়েছেন, তাদের কোম্পানির আগে দুইটি লঞ্চ ছিল। এখন এ রুটে একটি লঞ্চ চলাচল করছে। কীর্তনখোলা-১ নামের লঞ্চটি রোলিং মিলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল আসতে যেতে সাড়ে ৬ হাজার লিটার তেল প্রয়োজন। এছাড়াও স্টাফ, মবিল, ইঞ্জিন মেরামত, ঘাট ভাড়াসহ মোট যে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয় তাই বেশিরভাগ ট্রিপেই ওঠানো সম্ভব হয় না।

অপরদিকে বিভিন্ন লঞ্চের মাস্টারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪টি নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করতো। আর ঈদ-কোরবানির ছুটিতে দিবা ও রাত্রীকালীন সার্ভিস ও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৪টি পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। সরকারি জাহাজের চলাচল বন্ধ রেখে বর্তমানে ছয়টি কোম্পানির ১২ লঞ্চ চলাচল করে। যাত্রী কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ঢাকা থেকে দুইটি ও বরিশাল থেকে দুইটি লঞ্চ ছাড়ে। রোটেশন করেও তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে লঞ্চ মালিকদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। 

লঞ্চ মালিকরা বলছেন, একটা লঞ্চের প্রতি যাত্রায় কমপক্ষে হাজার যাত্রী প্রয়োজন। কিন্তু এখন অর্ধেক যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই প্রতি ট্রিপেই আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে।

The post যাত্রী সংকটে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.