1:53 am, Friday, 17 January 2025

ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইনের পরিকল্পনা

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

সরকার ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৪,৫০০ কোটি টাকার একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি ঘাটতি পূরণ করা হবে। একই সঙ্গে এ প্রকল্প গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থান-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এ ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু পরে এটি খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) জানিয়েছে, দেশের বর্তমানে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় ২,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয় উৎস থেকে আসে।

নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে আগামী ১৯ বছরে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন আরও ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ভোলার শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর এবং ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রের নয়টি কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস এ পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এক বৈঠকে এ পাইপলাইন তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। জিটিসিএল ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে।

জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা নাজমা ইসহাক বলেন, ‘ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য আমরা খুলনা পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।’

২০২৩ সালে জিটিসিএল ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব করে, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,৩০০ কোটি টাকা। তবে, শুধু বরিশাল পর্যন্ত সংযোগ দিয়ে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও জ্বালানি বিভাগের সদস্য মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাইপলাইন খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলে প্রকল্পটি কার্যকর হবে।

বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, ভোলায় প্রায় ২.০৪৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে, যার মধ্যে ১.৪৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলনযোগ্য। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ০.১৭৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে অগ্রাধিকার না দেওয়ার ফলে ভোলার বিশাল মজুত দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে স্থানীয় সরবরাহ বাড়বে, বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ভোলার গ্যাস খুলনায় আনা হলে এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। এতে খুলনার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোন্নত অঞ্চলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং নতুন শিল্প স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে।

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোলা-বরিশাল অংশে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের এবং বরিশাল-খুলনা অংশে ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

জিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইনের স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ২৫ বছর, এবং বার্ষিক পরিচালন ব্যয় হবে প্রায় ১৬.৪২ কোটি টাকা।

তবে ভোলা একটি দ্বীপ হওয়ায় এটি ভাঙনপ্রবণ একাধিক নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। ফলে সেখানে পাইপলাইন নির্মাণ বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করেছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স।

সংস্থাগুলো ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত পাইপলাইনের সম্ভাব্য রুট বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছে। এর মধ্যে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শাহবাজপুর-ভোলা উত্তর-ইলিশা-মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা-বরিশাল রুটটি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। তবে, মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা এলাকায় নদী ভাঙন ঠেকাতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছে দুই সংস্থা।

জিটিসিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পরামর্শক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ প্রক্রিয়ায় পরামর্শদাতাদের অংশগ্রহণ এবং সমীক্ষা উভয়ই সময়সাপেক্ষ। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাবটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রস্তাবটি বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের কাছে পাঠানো হবে।

গত বছরের ৩১ আগস্ট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক সভায় বলেছিলেন, ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হবে।

জিটিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মশিহুর রহমান বলেছেন, দেশে গ্যাসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ভোলায় প্রচুর গ্যাস মজুত থাকা সত্ত্বেও, নদীর তলদেশে পাইপলাইন স্থাপনের উচ্চ ব্যয় ও চ্যালেঞ্জের কারণে এগুলো দীর্ঘদিন ধরে অপ্রযুক্ত ছিল।

তিনি আরও বলেন, আগে ভোলার গ্যাস মজুতের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি ধীর ছিল। এখন সরকার নতুন কূপ খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা প্রকল্পের অগ্রগতি বাড়িয়েছে।

ভোলার গ্যাস-মজুত বৃদ্ধির সম্ভাবনা
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি এবং ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। এতে ভোলা এবং আশপাশের এলাকায় গ্যাস মজুত বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ পরিকল্পনার অধীনে শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর এবং আশপাশের এলাকায় ১৯টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কূপ এবং ৯টি অনুসন্ধান কূপ অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া, ২০২৫ সালের মধ্যে চরফ্যাশন, মনপুরা এবং হাতিয়ার ট্রানজিশনাল জোনে ১,৯৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানো হবে।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলমান ২ডি/৩ডি জরিপ সম্পন্ন করে নতুন কূপের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। সফল অনুসন্ধানে ভোলায় অতিরিক্ত গ্যাস মজুত আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুতকে ঘিরে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।

বর্তমানে, ভোলা অঞ্চলে দৈনিক গড় গ্যাস চাহিদা ৭২-৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট।

গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী সরকার
৮ জানুয়ারি একনেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের সরকার এলএনজি আমদানিতে বেশি জোর দিয়েছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভোলায় গ্যাসের বড় মজুত রয়েছে। নতুন কূপ খননের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, অন্যান্য এলাকাতেও গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যয় অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দ্রুততর করতে কাজ করছে।

The post ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইনের পরিকল্পনা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :

ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইনের পরিকল্পনা

Update Time : 04:08:23 pm, Thursday, 16 January 2025

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

সরকার ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৪,৫০০ কোটি টাকার একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি ঘাটতি পূরণ করা হবে। একই সঙ্গে এ প্রকল্প গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থান-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এ ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু পরে এটি খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) জানিয়েছে, দেশের বর্তমানে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় ২,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয় উৎস থেকে আসে।

নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে আগামী ১৯ বছরে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন আরও ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ভোলার শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর এবং ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রের নয়টি কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস এ পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এক বৈঠকে এ পাইপলাইন তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। জিটিসিএল ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে।

জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা নাজমা ইসহাক বলেন, ‘ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য আমরা খুলনা পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।’

২০২৩ সালে জিটিসিএল ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব করে, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,৩০০ কোটি টাকা। তবে, শুধু বরিশাল পর্যন্ত সংযোগ দিয়ে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও জ্বালানি বিভাগের সদস্য মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাইপলাইন খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলে প্রকল্পটি কার্যকর হবে।

বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, ভোলায় প্রায় ২.০৪৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে, যার মধ্যে ১.৪৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলনযোগ্য। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ০.১৭৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে অগ্রাধিকার না দেওয়ার ফলে ভোলার বিশাল মজুত দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে স্থানীয় সরবরাহ বাড়বে, বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ভোলার গ্যাস খুলনায় আনা হলে এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। এতে খুলনার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোন্নত অঞ্চলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং নতুন শিল্প স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে।

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোলা-বরিশাল অংশে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের এবং বরিশাল-খুলনা অংশে ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

জিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইনের স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ২৫ বছর, এবং বার্ষিক পরিচালন ব্যয় হবে প্রায় ১৬.৪২ কোটি টাকা।

তবে ভোলা একটি দ্বীপ হওয়ায় এটি ভাঙনপ্রবণ একাধিক নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। ফলে সেখানে পাইপলাইন নির্মাণ বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করেছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স।

সংস্থাগুলো ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত পাইপলাইনের সম্ভাব্য রুট বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছে। এর মধ্যে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শাহবাজপুর-ভোলা উত্তর-ইলিশা-মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা-বরিশাল রুটটি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। তবে, মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা এলাকায় নদী ভাঙন ঠেকাতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছে দুই সংস্থা।

জিটিসিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পরামর্শক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ প্রক্রিয়ায় পরামর্শদাতাদের অংশগ্রহণ এবং সমীক্ষা উভয়ই সময়সাপেক্ষ। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাবটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রস্তাবটি বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের কাছে পাঠানো হবে।

গত বছরের ৩১ আগস্ট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক সভায় বলেছিলেন, ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হবে।

জিটিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মশিহুর রহমান বলেছেন, দেশে গ্যাসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ভোলায় প্রচুর গ্যাস মজুত থাকা সত্ত্বেও, নদীর তলদেশে পাইপলাইন স্থাপনের উচ্চ ব্যয় ও চ্যালেঞ্জের কারণে এগুলো দীর্ঘদিন ধরে অপ্রযুক্ত ছিল।

তিনি আরও বলেন, আগে ভোলার গ্যাস মজুতের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি ধীর ছিল। এখন সরকার নতুন কূপ খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা প্রকল্পের অগ্রগতি বাড়িয়েছে।

ভোলার গ্যাস-মজুত বৃদ্ধির সম্ভাবনা
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি এবং ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। এতে ভোলা এবং আশপাশের এলাকায় গ্যাস মজুত বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ পরিকল্পনার অধীনে শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর এবং আশপাশের এলাকায় ১৯টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কূপ এবং ৯টি অনুসন্ধান কূপ অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া, ২০২৫ সালের মধ্যে চরফ্যাশন, মনপুরা এবং হাতিয়ার ট্রানজিশনাল জোনে ১,৯৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানো হবে।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলমান ২ডি/৩ডি জরিপ সম্পন্ন করে নতুন কূপের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। সফল অনুসন্ধানে ভোলায় অতিরিক্ত গ্যাস মজুত আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুতকে ঘিরে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।

বর্তমানে, ভোলা অঞ্চলে দৈনিক গড় গ্যাস চাহিদা ৭২-৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট।

গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী সরকার
৮ জানুয়ারি একনেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের সরকার এলএনজি আমদানিতে বেশি জোর দিয়েছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভোলায় গ্যাসের বড় মজুত রয়েছে। নতুন কূপ খননের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, অন্যান্য এলাকাতেও গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যয় অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দ্রুততর করতে কাজ করছে।

The post ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পাইপলাইনের পরিকল্পনা appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.