2:11 am, Friday, 17 January 2025

অবৈধ স্থাপনার কারনে শেষ হচ্ছে না বিষখালী নদী পুনঃখনন

অবৈধ স্থাপনার কারণে সময় বাড়িয়েও বিষখালী নদী পুনঃখনন শেষ করতে পারছেনা বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফসলি জমি চাষাবাদে দ্রুত খাল খনন শেষ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নদী খননের আগে জরিপের পরে কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলেন প্রভাবশালীরা। নোটিশ দেওয়ার পরও তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায়, খনন কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা নদী বিষখালী দীর্ঘদিন খনরের অভাবে ভরাট হয়ে যায়। পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে সেচের সংকট দেখা দেয়, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার মানুষ। এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে নদীটি পুনঃখননে জরিপ কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

২০২৩ সালে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ জায়গা খনন করা হলেও, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনার কারণে খনন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মাত্র এক কিলোমিটার খাল খননে আরও ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও নদীর জমিতে দখল করে করা স্থানীয় আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তির নিজস্ব বাড়ি, কবর স্থান ও মসজিদের কারণে খনন কাজ শেষ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এলাকাবাসীর দাবি সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সঠিকভাবে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খাল খননের দাবি জানান।

স্থানীয় আব্দুল জব্বার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, এই নদী দিয়ে বড় বড় ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতে দেখেছি। কিন্তু নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের এলঅকার মানুষ চাষাবাদে পানি পাচ্ছে না। এমনকি গৃহস্থলী কাজের জন্য পানি পাওয়া যায়নি। যার ফলে অনেকের ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থায় পড়েছে। নদী খননের মধ্যে দিয়ে যেমন নদীর তার প্রপান ফিরে পাবে। তেমনি এলাকার মানুষের পানির সংকটে অনাবাদি জমি পড়ে থাকবে না। আমরা দ্রুত নদী খননের দাবি জানচ্ছি।

বিষখালী নদী পাড়ের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে দুই কাঠা জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি তৈরী করে বসাবস করছিলাম। আগে জানতাম না সরকারের জমি এভাবে খাল কাটার কাজে নিয়ে যাবে। এখন আবারও নি:শ্ব হলাম।

এদিকে আবুল বাশার বলেন, আমরা জমি ক্রয় করে সরকারকে খাজনা দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কোন প্রকার ক্ষতিপুরণ না দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন করতে চাচ্ছে। ক্রয়কৃত জমিতে খাল খনন করা হলে ক্ষতিপূরণ অথবা পুনঃবাসনের না করা হলে জমিতে খাল কাটতে দেওয়া হবে না।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সহকারি প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বলেন. সিএস রেকর্ড ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নৌটিশ ও মাইকিং করার পরেও, রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় খনন কাজে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সবশেষ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়া হলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ সম্পন্ন করে খাল খনন করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। বাগেরহাটের বিষখালী নদীর প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ইতো মধ্যে যেখানে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post অবৈধ স্থাপনার কারনে শেষ হচ্ছে না বিষখালী নদী পুনঃখনন appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট এনডিএফ বিডি জেলা বিতর্ক উৎসব’

অবৈধ স্থাপনার কারনে শেষ হচ্ছে না বিষখালী নদী পুনঃখনন

Update Time : 07:08:10 pm, Thursday, 16 January 2025

অবৈধ স্থাপনার কারণে সময় বাড়িয়েও বিষখালী নদী পুনঃখনন শেষ করতে পারছেনা বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফসলি জমি চাষাবাদে দ্রুত খাল খনন শেষ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নদী খননের আগে জরিপের পরে কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলেন প্রভাবশালীরা। নোটিশ দেওয়ার পরও তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায়, খনন কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা নদী বিষখালী দীর্ঘদিন খনরের অভাবে ভরাট হয়ে যায়। পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে সেচের সংকট দেখা দেয়, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার মানুষ। এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে নদীটি পুনঃখননে জরিপ কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

২০২৩ সালে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ জায়গা খনন করা হলেও, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনার কারণে খনন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মাত্র এক কিলোমিটার খাল খননে আরও ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও নদীর জমিতে দখল করে করা স্থানীয় আবুল বাশার নামের এক ব্যক্তির নিজস্ব বাড়ি, কবর স্থান ও মসজিদের কারণে খনন কাজ শেষ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এলাকাবাসীর দাবি সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সঠিকভাবে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খাল খননের দাবি জানান।

স্থানীয় আব্দুল জব্বার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, এই নদী দিয়ে বড় বড় ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতে দেখেছি। কিন্তু নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের এলঅকার মানুষ চাষাবাদে পানি পাচ্ছে না। এমনকি গৃহস্থলী কাজের জন্য পানি পাওয়া যায়নি। যার ফলে অনেকের ফসলী জমি অনাবাদি হয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থায় পড়েছে। নদী খননের মধ্যে দিয়ে যেমন নদীর তার প্রপান ফিরে পাবে। তেমনি এলাকার মানুষের পানির সংকটে অনাবাদি জমি পড়ে থাকবে না। আমরা দ্রুত নদী খননের দাবি জানচ্ছি।

বিষখালী নদী পাড়ের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে দুই কাঠা জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি তৈরী করে বসাবস করছিলাম। আগে জানতাম না সরকারের জমি এভাবে খাল কাটার কাজে নিয়ে যাবে। এখন আবারও নি:শ্ব হলাম।

এদিকে আবুল বাশার বলেন, আমরা জমি ক্রয় করে সরকারকে খাজনা দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কোন প্রকার ক্ষতিপুরণ না দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খনন করতে চাচ্ছে। ক্রয়কৃত জমিতে খাল খনন করা হলে ক্ষতিপূরণ অথবা পুনঃবাসনের না করা হলে জমিতে খাল কাটতে দেওয়া হবে না।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সহকারি প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বলেন. সিএস রেকর্ড ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নৌটিশ ও মাইকিং করার পরেও, রামচন্দ্রপুর ও সাগরকাঠি এলাকায় কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় খনন কাজে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সবশেষ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়া হলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ সম্পন্ন করে খাল খনন করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। বাগেরহাটের বিষখালী নদীর প্রায় ২৪ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ইতো মধ্যে যেখানে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post অবৈধ স্থাপনার কারনে শেষ হচ্ছে না বিষখালী নদী পুনঃখনন appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.