5:44 am, Friday, 17 January 2025

কাউন্সিলর টিপু খুন : ৫ মাস আগে পরিকল্পনা, কিলিং মিশনে ছিলেন ৮ জন

খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ৫ মাস আগে। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছেন মোট ৮ জন। এর মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা পালিয়ে যান। তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন আসামি ঋতু (২৪), শেখ শাহরিয়ার ইসলাম (২৭) ও গোলাম রসুল (২৫) গত বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, পাঁচ মাস আগে করা এই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন আটজন। চাচা চরমপন্থী নেতা হুজি শহীদ হত্যার বদলা নিতে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু তরুণীর মাধ্যমে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিন আসামি কক্সবাজারের পৃথক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান।

পুলিশ জানায়, ঋতুর স্বামী রকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। একাধিক হত্যা মামলার আসামি শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পু অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। এ জন্য এলাকার মানুষ তাঁকে ‘শুটার পাপ্পু’ নামে চেনে।

১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উঠে আসলো খুনের পরিকল্পনা

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে দৌলতপুরের খান এ সবুর সড়কে ইসলামী ব্যাংকের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় চরমপন্থী নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদকে। এই মামলার আসামি ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু। ঋতু নামের এক তরুণীর মাধ্যমে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পাপ্পু বলেন, হুজি শহীদ ও টিপু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। দুজন পূর্ব বাংলা চরমপন্থী দলের নেতা গাজী কামরুলের অনুসারী ছিলেন। চাচা হুজি শহীদের পক্ষে কাজ করায় টিপু টার্গেট করে তাঁকে (পাপ্পু) বিভিন্ন মামলায় আসামি করতেন। কিন্তু টিপু ক্ষমতায় থাকায় কিছুই করতে পারছিলেন না। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যা পরিকল্পনার কথা প্রথমে শেয়ার করেন বন্ধু রিয়াজকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋতু টিপুকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান, টিপু ঋতুকে বন্ধু করে নেন। ঋতুকে ফেসবুকে টিপুর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে বলা হয়। ঋতু কক্সবাজার বেড়াতে যেতে বলেন টিপুকে। এরপর কক্সবাজার সৈকতে নিয়ে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করেন রিয়াজ ও পাপ্পু। হত্যা পরিকল্পনার কথা জানানো হয় মিল্লাত গাজী ও নিহত শহীদুলের দেহরক্ষী রিপনকে। রিপনের নির্দেশনায় রায়হান নামের আরেকজন পাপ্পুর হাতে তুলে দেন পাঁচটি গুলিসহ একটি পিস্তল।

জবানবন্দিতে বলা হয়, মিল্লাত নামের একজন থাকার জন্য কক্সবাজারে হোটেল ঠিক করে দিয়ে পাপ্পুর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। গোলাম রসুল ৭ জানুয়ারি কক্সবাজারে চলে যান। পাপ্পু, কামরান, সাব্বির ও রিয়াজ কক্সবাজার আসেন। ৯ জানুয়ারি দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছে পাপ্পু গোলাম রসুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রসুলের কথামতো সবাই কলাতলীর কক্স কুইন রিসোর্টে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে একই রিসোর্টে ওঠেন সানি ও মেহেদী নামের আরও দুজন। রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় ২০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন পাপ্পু, সাব্বির, কামরান ও গোলাম রসুল। নিচতলার ১০২ নম্বর কক্ষে ওঠেন সানি, মেহেদী ও রিয়াজ। একই দিন সকালে ঋতুর সঙ্গে কক্সবাজার পৌঁছান গোলাম রব্বানী টিপু। তাঁরা ওঠেন কলাতলীর আরেক হোটেল গোল্ডেন হিলে। রিয়াজ মুঠোফোন ও খুদে বার্তার মাধ্যমে ঋতুর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন।

আদালতের জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, ৯ জানুয়ারি বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে টিপুকে নিয়ে ঋতু হোটেল থেকে সৈকতের দিকে যেতে থাকেন। ঋতুর কথামতো আগে থেকে গোল্ডেন হিলে পৌঁছান সানি, মেহেদী ও গোলাম রসুল। অন্যদিকে শাহরিয়ার, রিয়াজ, কামরান ও সাব্বির সৈকতে নামেন। তখন তাঁরা দেখতে পান ঋতু ও টিপু সৈকতের কিটকটে বসে গল্প করছিলেন।

লাগেজ ট্যাগ থেকে আসামি শনাক্ত

পুলিশ জানায়, টিপু হত্যাকাণ্ডের পর ঋতুর হদিস পাচ্ছিলেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে হোটেল কক্ষ থেকে ঋতুর বাসের লাগেজ ট্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ট্যাগ ছিল ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস নামের একটি বাসের। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পুলিশ ঋতুর অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর মৌলভীবাজারের জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকার বিকাশের বাড়ি থেকে ঋতু, গোলাম রসুল ও পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাপ্পুর তথ্যমতে, পুলিশ কক্সবাজারের কক্স কুইন রিসোর্টের ২০৮ নম্বর কক্ষের বাথরুমের ওপরে চিলেকোঠা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পিস্তল ও চারটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সৈকতে সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় রব্বানীকে। তাঁর বাড়ি খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার দৌলতপুরে। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, আটক আরেক কাউন্সিলর হাসান ইখতেখার চালু এই হত্যায় জড়িত নয়। তাকে এই মামলায় জড়ানো হবে না।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়

The post কাউন্সিলর টিপু খুন : ৫ মাস আগে পরিকল্পনা, কিলিং মিশনে ছিলেন ৮ জন appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

কাউন্সিলর টিপু খুন : ৫ মাস আগে পরিকল্পনা, কিলিং মিশনে ছিলেন ৮ জন

Update Time : 11:08:56 pm, Thursday, 16 January 2025

খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ৫ মাস আগে। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছেন মোট ৮ জন। এর মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা পালিয়ে যান। তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন আসামি ঋতু (২৪), শেখ শাহরিয়ার ইসলাম (২৭) ও গোলাম রসুল (২৫) গত বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, পাঁচ মাস আগে করা এই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন আটজন। চাচা চরমপন্থী নেতা হুজি শহীদ হত্যার বদলা নিতে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু তরুণীর মাধ্যমে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিন আসামি কক্সবাজারের পৃথক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান।

পুলিশ জানায়, ঋতুর স্বামী রকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। একাধিক হত্যা মামলার আসামি শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পু অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। এ জন্য এলাকার মানুষ তাঁকে ‘শুটার পাপ্পু’ নামে চেনে।

১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উঠে আসলো খুনের পরিকল্পনা

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে দৌলতপুরের খান এ সবুর সড়কে ইসলামী ব্যাংকের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় চরমপন্থী নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদকে। এই মামলার আসামি ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু। ঋতু নামের এক তরুণীর মাধ্যমে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পাপ্পু বলেন, হুজি শহীদ ও টিপু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। দুজন পূর্ব বাংলা চরমপন্থী দলের নেতা গাজী কামরুলের অনুসারী ছিলেন। চাচা হুজি শহীদের পক্ষে কাজ করায় টিপু টার্গেট করে তাঁকে (পাপ্পু) বিভিন্ন মামলায় আসামি করতেন। কিন্তু টিপু ক্ষমতায় থাকায় কিছুই করতে পারছিলেন না। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যা পরিকল্পনার কথা প্রথমে শেয়ার করেন বন্ধু রিয়াজকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋতু টিপুকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান, টিপু ঋতুকে বন্ধু করে নেন। ঋতুকে ফেসবুকে টিপুর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে বলা হয়। ঋতু কক্সবাজার বেড়াতে যেতে বলেন টিপুকে। এরপর কক্সবাজার সৈকতে নিয়ে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করেন রিয়াজ ও পাপ্পু। হত্যা পরিকল্পনার কথা জানানো হয় মিল্লাত গাজী ও নিহত শহীদুলের দেহরক্ষী রিপনকে। রিপনের নির্দেশনায় রায়হান নামের আরেকজন পাপ্পুর হাতে তুলে দেন পাঁচটি গুলিসহ একটি পিস্তল।

জবানবন্দিতে বলা হয়, মিল্লাত নামের একজন থাকার জন্য কক্সবাজারে হোটেল ঠিক করে দিয়ে পাপ্পুর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। গোলাম রসুল ৭ জানুয়ারি কক্সবাজারে চলে যান। পাপ্পু, কামরান, সাব্বির ও রিয়াজ কক্সবাজার আসেন। ৯ জানুয়ারি দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছে পাপ্পু গোলাম রসুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রসুলের কথামতো সবাই কলাতলীর কক্স কুইন রিসোর্টে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে একই রিসোর্টে ওঠেন সানি ও মেহেদী নামের আরও দুজন। রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় ২০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন পাপ্পু, সাব্বির, কামরান ও গোলাম রসুল। নিচতলার ১০২ নম্বর কক্ষে ওঠেন সানি, মেহেদী ও রিয়াজ। একই দিন সকালে ঋতুর সঙ্গে কক্সবাজার পৌঁছান গোলাম রব্বানী টিপু। তাঁরা ওঠেন কলাতলীর আরেক হোটেল গোল্ডেন হিলে। রিয়াজ মুঠোফোন ও খুদে বার্তার মাধ্যমে ঋতুর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন।

আদালতের জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, ৯ জানুয়ারি বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে টিপুকে নিয়ে ঋতু হোটেল থেকে সৈকতের দিকে যেতে থাকেন। ঋতুর কথামতো আগে থেকে গোল্ডেন হিলে পৌঁছান সানি, মেহেদী ও গোলাম রসুল। অন্যদিকে শাহরিয়ার, রিয়াজ, কামরান ও সাব্বির সৈকতে নামেন। তখন তাঁরা দেখতে পান ঋতু ও টিপু সৈকতের কিটকটে বসে গল্প করছিলেন।

লাগেজ ট্যাগ থেকে আসামি শনাক্ত

পুলিশ জানায়, টিপু হত্যাকাণ্ডের পর ঋতুর হদিস পাচ্ছিলেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে হোটেল কক্ষ থেকে ঋতুর বাসের লাগেজ ট্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ট্যাগ ছিল ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস নামের একটি বাসের। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পুলিশ ঋতুর অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর মৌলভীবাজারের জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকার বিকাশের বাড়ি থেকে ঋতু, গোলাম রসুল ও পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাপ্পুর তথ্যমতে, পুলিশ কক্সবাজারের কক্স কুইন রিসোর্টের ২০৮ নম্বর কক্ষের বাথরুমের ওপরে চিলেকোঠা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পিস্তল ও চারটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সৈকতে সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় রব্বানীকে। তাঁর বাড়ি খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার দৌলতপুরে। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, আটক আরেক কাউন্সিলর হাসান ইখতেখার চালু এই হত্যায় জড়িত নয়। তাকে এই মামলায় জড়ানো হবে না।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়

The post কাউন্সিলর টিপু খুন : ৫ মাস আগে পরিকল্পনা, কিলিং মিশনে ছিলেন ৮ জন appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.