1:18 am, Saturday, 18 January 2025

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য

বিচারবহির্ভূত হত্যা (খুন), গুম, অমানবিক নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তরা যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্য পৃথক আইনের খসড়া করতে যাচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

ওই খসড়া অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সরকারের সংলাপ শুরুর আগেই এ খসড়া দেওয়া হবে, যাতে সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আরও জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন তৈরির আগে কয়েকটি বিষয়ে জনমত জরিপ চালিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে করা জরিপে যেসব বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টি ছিল না। কমিশনের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রস্তাব করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইনে আদালতে সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অযোগ্য হন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এসব অপরাধে অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই তারা অযোগ্য হচ্ছেন। এ সুপারিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও তৈরি হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে দ্রুত এ আইন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনো দলকে লক্ষ্য করে এ সুপারিশ করা হয়নি। নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করতে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গুম, খুন, গুরুতর দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্তরা যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারে, সেজন্য এই সুপারিশ করা হয়েছে। এ সুপারিশ অনুমোদিত হলে ভবিষ্যতে যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তারা ভোটে অযোগ্য হবেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি গুম, খুনের মতো মানবতাবিরোধী কাজ, অর্থ পাচার ও গুরুতর দুর্নীতি সাধারণ অপরাধ নয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গুরুতর অপরাধ। তাই এসব অপরাধীকে নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসহ চারটি কমিশন বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাদের সংবিধানের (৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ-সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।

এছাড়া ঋণ-বিলখেলাপি এবং আদালতের ফেরারি আসামিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা; সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ)-এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলেই তাকে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা (খুন), গুম, অমানবিক নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে সংক্ষিপ্ত একটি আইনের খসড়া করতে যাচ্ছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিওর ১২ ধারায় ওই আইনের প্রতিফলন ঘটানোর সুপারিশও করা হবে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২ ধারায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা উল্লেখ রয়েছে।

পৃথক এই আইনের খসড়া করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে কমিশনের সদস্যরা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অভিযুক্ত করে থাকে। আর গুম কমিশনও তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে অভিযোগ করে। এ কারণে তাদের সাজার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য করার আইন করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দুর্নীতি দমন কমিশনের চার্জশিটে যাদের নাম থাকবে, তাদের অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে চায় কমিশন। তারা মনে করেন, দুদক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নয়, স্থানীয় আইন অনুসারে অভিযুক্ত করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ আদালতে টেকে না। দুদকের চার্জশিটভুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য করা হলে বিতর্ক উঠতে পারে।

খুলনা গেজেট/এনএম

The post বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য

Update Time : 10:07:37 am, Friday, 17 January 2025

বিচারবহির্ভূত হত্যা (খুন), গুম, অমানবিক নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তরা যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্য পৃথক আইনের খসড়া করতে যাচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

ওই খসড়া অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সরকারের সংলাপ শুরুর আগেই এ খসড়া দেওয়া হবে, যাতে সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আরও জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন তৈরির আগে কয়েকটি বিষয়ে জনমত জরিপ চালিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে করা জরিপে যেসব বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টি ছিল না। কমিশনের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রস্তাব করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইনে আদালতে সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অযোগ্য হন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এসব অপরাধে অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই তারা অযোগ্য হচ্ছেন। এ সুপারিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও তৈরি হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে দ্রুত এ আইন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনো দলকে লক্ষ্য করে এ সুপারিশ করা হয়নি। নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করতে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গুম, খুন, গুরুতর দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্তরা যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারে, সেজন্য এই সুপারিশ করা হয়েছে। এ সুপারিশ অনুমোদিত হলে ভবিষ্যতে যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তারা ভোটে অযোগ্য হবেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি গুম, খুনের মতো মানবতাবিরোধী কাজ, অর্থ পাচার ও গুরুতর দুর্নীতি সাধারণ অপরাধ নয়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গুরুতর অপরাধ। তাই এসব অপরাধীকে নির্বাচনে অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসহ চারটি কমিশন বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাদের সংবিধানের (৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ-সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।

এছাড়া ঋণ-বিলখেলাপি এবং আদালতের ফেরারি আসামিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা; সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ)-এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলেই তাকে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা (খুন), গুম, অমানবিক নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে সংক্ষিপ্ত একটি আইনের খসড়া করতে যাচ্ছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিওর ১২ ধারায় ওই আইনের প্রতিফলন ঘটানোর সুপারিশও করা হবে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২ ধারায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা উল্লেখ রয়েছে।

পৃথক এই আইনের খসড়া করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে কমিশনের সদস্যরা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অভিযুক্ত করে থাকে। আর গুম কমিশনও তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে অভিযোগ করে। এ কারণে তাদের সাজার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য করার আইন করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দুর্নীতি দমন কমিশনের চার্জশিটে যাদের নাম থাকবে, তাদের অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে চায় কমিশন। তারা মনে করেন, দুদক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নয়, স্থানীয় আইন অনুসারে অভিযুক্ত করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ আদালতে টেকে না। দুদকের চার্জশিটভুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য করা হলে বিতর্ক উঠতে পারে।

খুলনা গেজেট/এনএম

The post বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.