4:44 am, Saturday, 18 January 2025

খুবি শিক্ষার্থীদের ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’: জীবন বদলের দিশা ও আগামীর সম্ভাবনা

“আগে থেকেই দর্জির কাজ জানতাম, কিন্তু পুরান কাপড় দিয়া যে ব্যাগ বানায়া টাকা আয় করা যায়, এডা জানতাম না। ‘সমৃদ্ধি’ প্রজেক্টে আইসা শিখলাম কেমনে ব্যাগ বানায়া বিক্রি করা যায়।আমার দুইডা পুলাপান, ক্লাস সিক্স আর সেভেনে পড়ে। ‘সমৃদ্ধি’ শুধু আমারে স্বাবলম্বী করে নাই, আমার পুলাপানের ভবিষ্যৎটাও বদলাইছে।দুই দিক দিয়াই এই প্রজেক্ট আমাগো জীবনডা বদলাই দিছে।”হাসিমুখে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বটিয়াঘাটার বিরাট গ্রামের শিমলা।

জীবন বদলের এ গল্প শুধু শিমলার নয় বিরাট গ্রামের জেলে পড়ার অধিকাংশ নারীর। ‘আজকের উদ্যোগ,আগামীর সম্ভাবনা’ স্লোগানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই কাজ করছে ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’। তাদের মূল লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে পুরাতন জিনিস পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসহ সামগ্রী তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করে নারীদের সাবলম্বী করা এবং শিশুদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশে সহায়তা করা।

সমাজের এসব পিছিয়ে পড়া মানুষের নিয়ে কাজ করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের মোঃ সৌরভ হোসেন, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের নিশাত জাহান নাদিরা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের সুমাইয়া আফরিন অর্থি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মশিউর রহমান, শিক্ষা ডিসিপ্লিনের আরাফাত বিন সোহেল ও মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের মোঃ আব্দুল খালেক সরকার।

প্রজেক্ট সমৃদ্ধি মূলত ব্র্যাকের আমরা নতুন নেটওয়ার্ক খুলনা কো- হর্টের একটি কমিউনিটি প্রজেক্ট। সাতজন তরুণ উদ্দামী সদস্য প্রজেক্টটির জন্য নির্বাচন করেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুঝবুনিয়া ইউনিয়ন এর বিরাট গ্রামের পিছিয়ে পড়া জেলে পাড়াকে। সেখানে তারা নারীদের সাত থেকে আটটি সেশনের মাধ্যমে পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে কিভাবে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী যেমন পুরাতন কাপড় থেকে বাজারের ব্যাগ, নান্দনিক টোট, পাটের পাপশ, টেকসই বাজারের ব্যাগ, মাল্টিপল ইউজ ব্যাগ, পাপশ বা আসন, পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিং ব্যাগ, ডিজাইনার টুপি, নকশি কাঁথা ইত্যাদি বস্তু ব্যবহার করা যায় তা শেখান। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তারা নিজেরাই সুন্দরভাবে বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব, টেকসই ও নান্দনিক জিনিস তৈরি করে। পরে প্রজেক্ট সমৃদ্ধি সেগুলো বাজারজাত করে।এখান থেকে প্রাপ্ত লোভ্যাংশ দিয়ে তারা বিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করে। প্রজেক্ট সমৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেশনের মাধ্যমে শেখায় কিভাবে তারা নিজেদেরকে ক্লাইমেট আইডল হিসেবে গড়ে তুলতে , কিভাবে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে এবং বিভিন্ন দলগত কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতিতে কাজ করবে। এছাড়াও প্রজেক্ট সমৃদ্ধি গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, স্কুলে মানসম্মত পাঠাগার ব্যবস্থা, বই খাতা ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে সহায়তা করে থাকে।

প্রজেক্ট সমৃদ্ধির সহ প্রতিষ্ঠাতা মোঃ সৌরভ হোসেন বলেন, “আমরা বিরাট গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের নারীদের খোঁজ পায় ।তাদের সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ পর জানতে পারি দারিদ্রতাই প্রধান কারণ। তখন আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেই এবং বাজারে তাদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে আসে। এর লভ্যাংশ থেকে আমরা তাদেরকে যেমন স্বাবলম্বী করেছি সাথে সাথে তাদের বাচ্চাদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’ এক কথায় স্ব উদ্যোগ ও স্ব অর্থায়নে পরিচালিত জনকল্যাণমূলক একটি সংগঠন।”

তাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনীর ও প্রচারের জন্য প্রজেক্ট সমৃদ্ধি দুইদিন ব্যাপী আয়োজন করবে উদ্ভাবনী সমৃদ্ধি মেলার। প্রজেক্ট সমৃদ্ধির আরেক সহ প্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা বলেন ,”আমরা নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছি। তাদের তৈরিকৃত সামগ্রী যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সেজন্য আমরা আয়োজন করেছি ‘উদ্ভাবনী সমৃদ্ধি মেলার’ ।বিরাট গ্রামের নারীর এখন অর্থ এর একটা উৎস খুঁজে পেয়েছে ।তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।”

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post খুবি শিক্ষার্থীদের ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’: জীবন বদলের দিশা ও আগামীর সম্ভাবনা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

খুবি শিক্ষার্থীদের ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’: জীবন বদলের দিশা ও আগামীর সম্ভাবনা

Update Time : 07:07:18 pm, Friday, 17 January 2025

“আগে থেকেই দর্জির কাজ জানতাম, কিন্তু পুরান কাপড় দিয়া যে ব্যাগ বানায়া টাকা আয় করা যায়, এডা জানতাম না। ‘সমৃদ্ধি’ প্রজেক্টে আইসা শিখলাম কেমনে ব্যাগ বানায়া বিক্রি করা যায়।আমার দুইডা পুলাপান, ক্লাস সিক্স আর সেভেনে পড়ে। ‘সমৃদ্ধি’ শুধু আমারে স্বাবলম্বী করে নাই, আমার পুলাপানের ভবিষ্যৎটাও বদলাইছে।দুই দিক দিয়াই এই প্রজেক্ট আমাগো জীবনডা বদলাই দিছে।”হাসিমুখে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন বটিয়াঘাটার বিরাট গ্রামের শিমলা।

জীবন বদলের এ গল্প শুধু শিমলার নয় বিরাট গ্রামের জেলে পড়ার অধিকাংশ নারীর। ‘আজকের উদ্যোগ,আগামীর সম্ভাবনা’ স্লোগানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই কাজ করছে ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’। তাদের মূল লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে পুরাতন জিনিস পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসহ সামগ্রী তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করে নারীদের সাবলম্বী করা এবং শিশুদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশে সহায়তা করা।

সমাজের এসব পিছিয়ে পড়া মানুষের নিয়ে কাজ করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের মোঃ সৌরভ হোসেন, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের নিশাত জাহান নাদিরা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের সুমাইয়া আফরিন অর্থি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মশিউর রহমান, শিক্ষা ডিসিপ্লিনের আরাফাত বিন সোহেল ও মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের মোঃ আব্দুল খালেক সরকার।

প্রজেক্ট সমৃদ্ধি মূলত ব্র্যাকের আমরা নতুন নেটওয়ার্ক খুলনা কো- হর্টের একটি কমিউনিটি প্রজেক্ট। সাতজন তরুণ উদ্দামী সদস্য প্রজেক্টটির জন্য নির্বাচন করেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুঝবুনিয়া ইউনিয়ন এর বিরাট গ্রামের পিছিয়ে পড়া জেলে পাড়াকে। সেখানে তারা নারীদের সাত থেকে আটটি সেশনের মাধ্যমে পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে কিভাবে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী যেমন পুরাতন কাপড় থেকে বাজারের ব্যাগ, নান্দনিক টোট, পাটের পাপশ, টেকসই বাজারের ব্যাগ, মাল্টিপল ইউজ ব্যাগ, পাপশ বা আসন, পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিং ব্যাগ, ডিজাইনার টুপি, নকশি কাঁথা ইত্যাদি বস্তু ব্যবহার করা যায় তা শেখান। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তারা নিজেরাই সুন্দরভাবে বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব, টেকসই ও নান্দনিক জিনিস তৈরি করে। পরে প্রজেক্ট সমৃদ্ধি সেগুলো বাজারজাত করে।এখান থেকে প্রাপ্ত লোভ্যাংশ দিয়ে তারা বিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করে। প্রজেক্ট সমৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেশনের মাধ্যমে শেখায় কিভাবে তারা নিজেদেরকে ক্লাইমেট আইডল হিসেবে গড়ে তুলতে , কিভাবে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে এবং বিভিন্ন দলগত কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতিতে কাজ করবে। এছাড়াও প্রজেক্ট সমৃদ্ধি গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, স্কুলে মানসম্মত পাঠাগার ব্যবস্থা, বই খাতা ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে সহায়তা করে থাকে।

প্রজেক্ট সমৃদ্ধির সহ প্রতিষ্ঠাতা মোঃ সৌরভ হোসেন বলেন, “আমরা বিরাট গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের নারীদের খোঁজ পায় ।তাদের সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ পর জানতে পারি দারিদ্রতাই প্রধান কারণ। তখন আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেই এবং বাজারে তাদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে আসে। এর লভ্যাংশ থেকে আমরা তাদেরকে যেমন স্বাবলম্বী করেছি সাথে সাথে তাদের বাচ্চাদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’ এক কথায় স্ব উদ্যোগ ও স্ব অর্থায়নে পরিচালিত জনকল্যাণমূলক একটি সংগঠন।”

তাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনীর ও প্রচারের জন্য প্রজেক্ট সমৃদ্ধি দুইদিন ব্যাপী আয়োজন করবে উদ্ভাবনী সমৃদ্ধি মেলার। প্রজেক্ট সমৃদ্ধির আরেক সহ প্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা বলেন ,”আমরা নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছি। তাদের তৈরিকৃত সামগ্রী যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সেজন্য আমরা আয়োজন করেছি ‘উদ্ভাবনী সমৃদ্ধি মেলার’ ।বিরাট গ্রামের নারীর এখন অর্থ এর একটা উৎস খুঁজে পেয়েছে ।তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।”

খুলনা গেজেট/ টিএ

The post খুবি শিক্ষার্থীদের ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’: জীবন বদলের দিশা ও আগামীর সম্ভাবনা appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.