9:26 pm, Tuesday, 26 November 2024

সূর্যের আলো না সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন ডির জন্য কোনটি ভালো?

ভিটামিন ডি হাড়ের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইদানীং অনেকের দেহেই ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ভিটামিন ডির প্রাথমিক উৎস দুটি। ১. সূর্যের আলো ও ২. সাপ্লিমেন্ট।

আরামপ্রিয় জীবনযাত্রা, দীর্ঘক্ষণ অফিস করা ও দিনের বেলা ঘরের মধ্যে থাকা ইত্যাদি কারণে ভিটামিন ডির প্রাকৃতিক উৎস সূর্যের আলোর সঙ্গে মানবদেহের সঠিক সংস্পর্শ হয় না। ভিটামিন ডির চাহিদা সহজে পূরণ করার জন্য তাই বাজারে বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাপ্লিমেন্ট কি রোদের চেয়ে ভালো? সূর্যের আলো সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকে থাকা কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করে। পরে লিভার ও কিডনিতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে ভিটামিন ডি আমাদের দেহে ব্যবহারের উপযোগী হয়। কিন্তু ব্যক্তি, স্থান ও ঋতুভেদে আমাদের শরীরে সূর্যের আলো সমানভাবে লাগানো সম্ভব হয় না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সূর্যের আলো প্রবল থাকে। শুধু এ সময়ের মধ্যে সূর্যের আলো গায়ে লাগালে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। একই পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার জন্য শ্বেতবর্ণের চেয়ে গাঢ় বর্ণের লোকদের অপেক্ষাকৃত বেশি সূর্যের আলো দরকার হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি কম পরিমাণে তৈরি হয়। আবার অনেক উঁচু স্থানে বাস করা লোকেরা শীতকালে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় না। এসব সীমাবদ্ধতার কারণেই বাজারে এসেছে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দুই ধরনের সাপ্লিমেন্ট আছে। ভিটামিন ডি২, যা ইস্ট ও ছত্রাক থেকে আসে এবং ভিটামিন ডি৩, যা আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। উভয় ধরনের সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ডির মাত্রা বাড়াতে পারলেও সাপ্লিমেন্টে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি৩ ব্যবহৃত হয়। সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে সহজে বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সঠিক পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যায়।

এ ছাড়া সূর্যের আলো কমবেশি গ্রহণের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সূর্যের আলো, না সাপ্লিমেন্ট? সূর্যের আলো ও সাপ্লিমেন্ট দুটিই ভিটামিন ডির প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগত অবস্থাভেদে এদের কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে। যাঁরা সহজেই পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পান, তাঁদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, সেটাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সাধারণত ১০-৩০ মিনিট সূর্যের আলো গ্রহণ করাই যথেষ্ট। তবে ৩০ মিনিটের বেশি রোদ গায়ে পড়লে ত্বকের ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।

অন্যদিকে যাঁরা অফিস কিংবা পরিবেশগত কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পান না কিংবা স্বাস্থ্যগত কারণে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না, তাঁদের সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। তবে উচ্চমাত্রার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে দেহে ভিটামিন ডির আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া এবং হাইপারক্যালসেমিয়া, হাড়ে ব্যথা, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। এ জন্য সতর্কতা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে আগে রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাতে হবে। এ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ রোদ পোহানোর চেয়ে সহজ মনে হলেও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের জন্য রোগীকে টাকা খরচ করতে হয়। তাই শুধু ওপরের অবস্থাগুলো পর্যালোচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, মেডিসিন গবেষক, বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা

Tag :

সূর্যের আলো না সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন ডির জন্য কোনটি ভালো?

Update Time : 09:06:19 am, Friday, 27 September 2024

ভিটামিন ডি হাড়ের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইদানীং অনেকের দেহেই ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ভিটামিন ডির প্রাথমিক উৎস দুটি। ১. সূর্যের আলো ও ২. সাপ্লিমেন্ট।

আরামপ্রিয় জীবনযাত্রা, দীর্ঘক্ষণ অফিস করা ও দিনের বেলা ঘরের মধ্যে থাকা ইত্যাদি কারণে ভিটামিন ডির প্রাকৃতিক উৎস সূর্যের আলোর সঙ্গে মানবদেহের সঠিক সংস্পর্শ হয় না। ভিটামিন ডির চাহিদা সহজে পূরণ করার জন্য তাই বাজারে বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাপ্লিমেন্ট কি রোদের চেয়ে ভালো? সূর্যের আলো সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের সংস্পর্শে এসে ত্বকে থাকা কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করে। পরে লিভার ও কিডনিতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে ভিটামিন ডি আমাদের দেহে ব্যবহারের উপযোগী হয়। কিন্তু ব্যক্তি, স্থান ও ঋতুভেদে আমাদের শরীরে সূর্যের আলো সমানভাবে লাগানো সম্ভব হয় না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সূর্যের আলো প্রবল থাকে। শুধু এ সময়ের মধ্যে সূর্যের আলো গায়ে লাগালে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। একই পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার জন্য শ্বেতবর্ণের চেয়ে গাঢ় বর্ণের লোকদের অপেক্ষাকৃত বেশি সূর্যের আলো দরকার হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি কম পরিমাণে তৈরি হয়। আবার অনেক উঁচু স্থানে বাস করা লোকেরা শীতকালে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় না। এসব সীমাবদ্ধতার কারণেই বাজারে এসেছে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দুই ধরনের সাপ্লিমেন্ট আছে। ভিটামিন ডি২, যা ইস্ট ও ছত্রাক থেকে আসে এবং ভিটামিন ডি৩, যা আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। উভয় ধরনের সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ডির মাত্রা বাড়াতে পারলেও সাপ্লিমেন্টে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি৩ ব্যবহৃত হয়। সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে সহজে বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সঠিক পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যায়।

এ ছাড়া সূর্যের আলো কমবেশি গ্রহণের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সূর্যের আলো, না সাপ্লিমেন্ট? সূর্যের আলো ও সাপ্লিমেন্ট দুটিই ভিটামিন ডির প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগত অবস্থাভেদে এদের কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে। যাঁরা সহজেই পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পান, তাঁদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, সেটাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সাধারণত ১০-৩০ মিনিট সূর্যের আলো গ্রহণ করাই যথেষ্ট। তবে ৩০ মিনিটের বেশি রোদ গায়ে পড়লে ত্বকের ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।

অন্যদিকে যাঁরা অফিস কিংবা পরিবেশগত কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পান না কিংবা স্বাস্থ্যগত কারণে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না, তাঁদের সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। তবে উচ্চমাত্রার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে দেহে ভিটামিন ডির আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া এবং হাইপারক্যালসেমিয়া, হাড়ে ব্যথা, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। এ জন্য সতর্কতা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে আগে রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাতে হবে। এ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ রোদ পোহানোর চেয়ে সহজ মনে হলেও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের জন্য রোগীকে টাকা খরচ করতে হয়। তাই শুধু ওপরের অবস্থাগুলো পর্যালোচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, মেডিসিন গবেষক, বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা