বাউফল ((পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় শহীদ আবু সাইদ-মুগ্ধ ম্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের নামে ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে জোড়পূর্বক টাকা আদায়ের পর পুরস্কার বিতরণেও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খেলায় বিজয়ীদের ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২৪ ইঞ্চি টিভি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ ও মুগ্ধের নাম ব্যবহার করে উপজেলার কালাইয়া বন্দরের গরুর হাট মাঠে “আবু সাঈদ ও মুগ্ধ” স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে স্থানীয় কয়েক যুবক। গত ২৮ আগস্ট টুর্নামেন্টের খেলা শুরু হয়। এতে আটটি দল অংশ নেয়।
গত বুধবার (৯ অক্টোবর) ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল খেলায় কালাইয়া ফুটবল একাডেমী ও লিয়ন একাদশ প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এতে লিয়ন একাদশ ২-১ গোলে কালাইয়া ফুটবল একাডেমীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়। পরে বিজয়ী দলকে ২৪ ইঞ্চি টিভি দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন বিজয়ী দলের খেলোয়ার ও দর্শকেরা।
লিয়ন একাদশের টিম ম্যানেজার মো. লিয়ন বলেন,ফাইনাল খেলায় বিজয়ী দলকে ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশন দেওয়ার কথা থাকলেও ২৪ ইঞ্চির টেলিভিশন দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে।
এদিকে ফাইনাল খেলার আমন্ত্রণের নামে ও খেলায় সহযোগিতার নামে চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ব্যাংক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে দুইশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। এ থেকে বাদ যায়নি সড়কের পাশে খোলা জায়গার ফুটপাতের ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরাও। নির্ধারিত চাঁদা না দেওয়ায় অনেককে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের নাম বিক্রি করে এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্দরের ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,খেলার আমন্ত্রণের নামে ও খেলায় সহযোগিতার নামে চিঠি দিয়ে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির মুন্সি ও টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য মো. রাসেল হাওলাদার দলবল নিয়ে বন্দরের ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে খেলার নামে চাঁদা উঠান। তবে তারা জোড়পূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থা এই খেলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নাম চিঠিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রধান অতিথি হিসেবে। ইউএনও মো. বশির গাজী ওই খেলায় উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বলেন,‘ওই টুর্নামেন্টের তিনি কোনো অনুমতি দেননি এবং ফাইনাল খেলায় তাকে প্রধান অতিথি করার বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না।’
একজন শিক্ষক বলেন, একটি চিঠি দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আর বলে, বুজেনতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ ও মুগ্ধর নামে খেলা। এ কারণে ইচ্ছে না থাকা সত্তে¡ও ২ হাজার ৫০০টাকা দিতে হয়েছে। এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একশ টাকা দিয়েছিলাম। কম দেখে নেয়নি। পরে পাঁচশ টাকা দিতে হয়েছে।
জোড়পূর্বক টাকা উঠানোর কথা অস্বীকার করে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মাদ আলী বলেন,‘খেলায় সহায়তার জন্য টাকা চেয়েছিলেন। যে যা দিয়েছে, তাই নিয়েছেন। জোড় করা কিংবা কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।’ চ্যাম্পিয়ন পুরুস্কার নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম পুরুস্কার ৩২ ইঞ্চি টিভি দেওয়ার কথা। যারা বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন তারাই ৩২ইঞ্চি টিভি পরির্বতন করে ২৪ ইঞ্চি টিভি দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর চ্যাম্পিয়ন দলের ম্যানেজারকে ৩২ ইঞ্চি টিভি দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছি।
টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য মো. রাসেল হাওলাদার বলেন,টাকা কম উঠেছে বলে ৩২ ইঞ্চি টিভির প্যাকেটে ২৪ ইঞ্চি টিভি দিয়েছি। তবে কারো কাছ থেকে জোড়পূর্বক টাকা নেওয়া হয়নি। যারা পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন, তারা ভালোবেসেই দিয়েছেন।
The post বাউফলে ফুটবল টুর্নামেন্টের নামে জোড়পূর্বক টাকা আদায়ের পর পুরস্কার বিতরণেও প্রতারণার অভিযোগ appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.