বাজারে সরবরাহ সাভাবিক রাখতে সম্প্রতি দুই দফায় ভোজ্যতেলের ভ্যাট ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু এতে কোনো সুফল আসেনি। উল্টো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা পাম ও সয়াবিন তেল। পাশাপাশি বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা গিয়েছে বোতলজাত তেলের। অবশ্য চিনিতে ভ্যাট ছাড় ও ডিম আমদানির খবরে পণ্য দুটির দাম কিছুটা কমেছে।
ভোজ্যতেলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে গত ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার ভ্যাট অব্যাহতির ফলে বর্তমানে শুধু আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বলবৎ থাকল।
জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর) এর নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও সেই চিত্র কোথাও দেখা যায়নি। চড়া দামে খোলা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা ও প্রতি কেজি পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোজ্য তেলের ভ্যাট ছাড়ে এখনো বাজারে সঙ্কট কাটেনি। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যনুযায়ী, গেল ১০ দিন ধরেই বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর কাছে তেলের জন্য অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাম তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে রোজার আগেই অনেক ব্যবসায়ী রিস্ক নিয়ে পাম তেল কেনার সাহস করছেন না।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ফারুক স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মো. ফারুক হোসেন বলেন, যখনই বাজারে আমাদানিকৃত পণ্যে সংকট দেখা দেয় সরকার সেই পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়। বরাবরের মতো এবারও শুল্ক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তেমন একটা কাজে আসেনি। আগের থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাম তেল। তাছাড়া, কোম্পানির প্রতিনিধিদের অগ্রিম টাকা দিয়েও বোতলজাত তেল নিতে পারছি না। উল্টো কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কমিশন কমানোর শর্তে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদিকে ভ্যাট ছাড়ে তেলের দাম ও সরবরাহ সমাধান না হলেও চিনি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহের প্রায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯ কোটি ডিম আমদানি ও এর আগে চিনির শুল্ক কমানোয় বাজারে পণ্য দুটির দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন ডিম ১৪৫ টাকা ও প্রতি কেজি চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহেও প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকা ও প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২৫ টাকা বিক্রি হয়েছিলো। তবে পাড়া মহল্লায় এখনো ডিমের দামের প্রভাব পড়েনি। চড়া দামে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা ও বাড়তি দামেই প্রতি প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিম আমদানির খবরে আড়ত মালিকরা কম দামে ডিম বিক্রি করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে চিনির আমদানিতে ভ্যাট কমানোর মোকাম ও মিলে চিনির দাম কমেছে।
এদিকে অগ্রহায়নের শুরুতে রাজধানীর বাজারগুলো শীতের সবজিতে সয়লাব হওয়ায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। বেশিরভাগ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
গতকাল কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ ১০০, টমেটো ১২০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০, পটোল ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৬০, কচুর মুখী ৮০, ২০ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও দাম অপরিবর্তিত থেকে ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও মিয়ানমার থেকে আসা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।
সবজির মতো মাছের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। মাছের দামে চড়া ভাব কমে প্রতি কেজি পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই ২৭০ থেকে ২৮০, সরপুঠি ২৫০, বাইলা ৬০০ থেকে ৭০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০, ও প্রতি কেজি লইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়।
খুলনা গেজেট/এইচ
The post ভ্যাট ছাড়ের লাভ ব্যবসায়ীদের পকেটে, কমেনি ভোজ্যতেলের দাম appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.