4:53 am, Tuesday, 26 November 2024

ঋণের প্রলোভনে যেভাবে লোক আনা হয় শাহবাগে

ঢাকায় শাহবাগের সমাবেশে যারা উপস্থিত থাকবে তাদেরকে এক লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি ভর্তি করে লোক আনা হয়েছিল। রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এমন প্রায় তিনশোরও বেশি বাস, মাইক্রোবাস আটক করেছে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা

ঋণের আশায় যারা এই সমাবেশে যারা এসেছিলেন তাদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চরের জাকির হোসেন ভুইয়া সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনিও এসেছিলেন এসেছিলেন এই ‘ঋণ সমাবেশে’ যোগ দিতে।

বিবিসি বাংলাকে মি. ভুইয়া বলেন, “গ্রামে আমার মায়ের মাধ্যমে একটি চক্র আমার রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে এবং আমাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকাও নিয়েছে। এখানে আসার পর বুঝছি কোনো একটা ষড়যন্ত্রে পা দিছি আমি।”

বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা রোববার রাত থেকে শাহবাগে আসতে শুরু করেন তাদের বেশিরভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

তাদের অনেকের কাছে আ ব ম মোস্তফা আমীন নামের এক ব্যক্তির নামে লিফটলেট পাওয়া গেছে। ওই লিফলেটে মি. আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার মি. আমীনসহ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।

মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোববার মধ্যরাত থেকে ঢাকায় এসব বাস ঢুকতে শুরু করে।

রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু গাড়ি ঢোকার পর বিষয়টি নজরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আটকে দেয়া হয় বেশ কিছু গাড়ি।

এই ঘটনাটিকে সরকার বিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ।

মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার পরও রাতের আঁধারে এসে জড়ো হতে শুরু করে। এই বিষয়টি যে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ তা একেবারেই পরিষ্কার।”

কিন্তু কারা এই ষড়যন্ত্র করছে সেটি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি পুলিশ কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রস্তুতি শুরু এক মাস আগে থেকেই
শাহবাগের এই সমাবেশে যোগ দিতে আসা বেশিরভাগই জানান গত প্রায় এক মাস আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিচয়ে কাজ শুরু করে একটি গোষ্ঠী।

নিম্ন আয়ের সাধারণ নারী ও পুরুষকে টার্গেট করে তাদেরকে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কোথাও কোথাও আবার নিজেদের এনজিও কর্মীও পরিচয় দেয় তারা।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর উপজেলা ফরিদপুর গ্রামের মিনারা বেগমের কাছেও প্রায় এক মাস আগে এমন কয়েকজন লোক আসেন।

মিনারা বেগমের ছেলে জাকির হোসেন ভুইয়া সাভারের গার্মেন্টসে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন।

মি. ভুইয়া সোমবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত মাসে কিছু লোক আমাদের গ্রামে এসে জানায় তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসছে। তারা আমার মায়ের সাথে কথা বলে এবং জানায় আমাকে ঋণ দেয়া হবে। এজন্য আমার কাছ থেকে তারা এনআইডি ও এক কপি ছবি নেয়।”

এরপর গত শনিবার তারা একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ডও নিয়ে আসে মিনারা বেগমের কাছে। সেখানে জাকির হোসেন ভুইয়ার নামে রেজিস্ট্রেশনও করানো হয়।

ঢাকা আসতে হবে জানিয়ে শনিবার তার কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫০০ টাকাও নেয়া হয় বলেও জানান মি. ভুইয়া।

পুরানো ঢাকা থেকে সোমবার সকালে শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন আমিন মিয়া।

তিনি বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়িও কিশোরগঞ্জে। এলাকার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ লোক গত কয়েকদিন ধরে তার সাথে যোগাযোগ করছিলেন ঢাকার এই সমাবেশে আসার জন্য।

ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ও আশপাশের এলাকা থেকে সমাবেশে লোক জড়ো করার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ সংগঠনের নেতারা।

এছাড়াও শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। সেখানে সোমবার সমাবেশের কথা জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত ১৯ নভেম্বর ওই গ্রুপটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে শাহবাগে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চায়। কিন্তু ডিএমপি তাদের অনুমতি দেয়নি।”

ফুটপাতে জুতা বিক্রি করে সংসার চালান আমিন মিয়া। সোমবার সকালে তিনিও এসেছিলেন শাহবাগের সমাবেশে।

এলাকার লোকজনের কাছে তিনি শুনেছেন শাহবাগের সমাবেশে গেলে কম হলেও এক লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে।

আমিন মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি তো ভাবছি সত্যি এইহানে আইলে ঋণ পাওয়া যাইবে। আইসা দেহি এইহানে আনছে অন্য কোনো কারণে।”

কিশোরগঞ্জের জাকির হোসেন ভুইয়া জানান, তার মা মিনারা বেগমকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়ে গেছে সেই টাকা ফেরত আনা হবে। সেই টাকা গরীবদের মাঝে ঋণ দেয়া হবে। এজন্য শাহবাগের সমাবেশে যেতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি সোমবার সকাল ৭টায় গার্মেন্টস থেকে ছুটি নিয়ে শাহবাগে আসি। আমারে বলা হইছিলো এইখানে আসলে এক লাখ থেকে শুরু করে চার পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে।”

“আমি এই আশায় আসছি। আর যেভাবে তারা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বলছে আমি সত্যি সত্যি ভাবছি এখানে মনে হয় ঋণ দেয়া হবে,” বলছিলেন জাকির হোসেন ভুইয়া।

মানিকগঞ্জ থেকে এমন একটি বাসে আসা কয়েকজন গণমাধ্যমে জানান, ঋণ দেয়ার কথা বলে মানিকগঞ্জের দবির উদ্দিন নামে একজন তাদের ঢাকায় আনেন। মোট পাঁচটি বাস ঢাকায় আসে।

সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ থেকে ঋণ দেয়ার নামে শাহবাগের সমাবেশে নিয়ে যেতে সংগঠিত করার অভিযোগ সোমবার দুপুরে দবির উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

একই অভিযোগে দবির উদ্দিনের স্ত্রী চামেলি বেগম এবং নাসিমা বেগম নামে এক এনজিও কর্মীকে আটক করা হয়।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত আনিসুর রহমান স্বপন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দবির উদ্দিনসহ তিনজনকে আমরা আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে”।

পুলিশ জানায় তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায় নি।

মি. উদ্দিন স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত বলেও জানায় পুলিশ।

তবে কিভাবে তারা এর সাথে যুক্ত হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মি. স্বপন।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বেশ কিছু বাস আটকের পর যারা শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিতে এসেছে তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছে তাদেরকে এক লাখ থেকে কমপক্ষে দশ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছে তারা জানেন এক কোটি টাকাও ঋণ দেয়া হতে পারে।”

ঋণের আশা দেখিয়ে এনেছে কারা?
যারা এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসে তাদের অনেকের কাছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের হ্যান্ডবিল পাওয়া গেছে।

যেখানে আ ব ম মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে ২৫ নভেম্বর ঢাকা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।

হ্যান্ডবিলে ‘বিনা সুদে বিনা জামানতে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত পুঁজি পেয়ে দারিদ্র্য মুক্তিতে আগ্রহী সর্বস্তরের জনগণকে’ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।

অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমিনের নামে এই আহবান জানানো হয়।

অনেকের কাছে ঋণের জন্য একটি ফরমও পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওই ফরমে নাম, ফোন নম্বর, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষরও দেখা গেছে।

কিশোরগঞ্জের আমিন উদ্দিন ভুইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে ওরকম একটা ফরমে তার কাছ থেকেও স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে একটি চক্র তাদের ঢাকায় এনেছে। এর আহ্বায়ক মোস্তফা আমীনকে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মামলার প্রস্তুতিও চলছে।”

তিনি বলেন, “এই ঘটনায় মোস্তফা আমীন ছাড়া আর যারা যারা যুক্ত আছে তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করা চেষ্টা করছি”।

এই মোস্তফা আমিন ফরোয়ার্ড পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলের সাথেও জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

খুলনা গেজেট/কেডি

The post ঋণের প্রলোভনে যেভাবে লোক আনা হয় শাহবাগে appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

ঋণের প্রলোভনে যেভাবে লোক আনা হয় শাহবাগে

Update Time : 12:06:37 am, Tuesday, 26 November 2024

ঢাকায় শাহবাগের সমাবেশে যারা উপস্থিত থাকবে তাদেরকে এক লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি ভর্তি করে লোক আনা হয়েছিল। রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এমন প্রায় তিনশোরও বেশি বাস, মাইক্রোবাস আটক করেছে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা

ঋণের আশায় যারা এই সমাবেশে যারা এসেছিলেন তাদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চরের জাকির হোসেন ভুইয়া সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনিও এসেছিলেন এসেছিলেন এই ‘ঋণ সমাবেশে’ যোগ দিতে।

বিবিসি বাংলাকে মি. ভুইয়া বলেন, “গ্রামে আমার মায়ের মাধ্যমে একটি চক্র আমার রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে এবং আমাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকাও নিয়েছে। এখানে আসার পর বুঝছি কোনো একটা ষড়যন্ত্রে পা দিছি আমি।”

বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা রোববার রাত থেকে শাহবাগে আসতে শুরু করেন তাদের বেশিরভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

তাদের অনেকের কাছে আ ব ম মোস্তফা আমীন নামের এক ব্যক্তির নামে লিফটলেট পাওয়া গেছে। ওই লিফলেটে মি. আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার মি. আমীনসহ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।

মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোববার মধ্যরাত থেকে ঢাকায় এসব বাস ঢুকতে শুরু করে।

রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু গাড়ি ঢোকার পর বিষয়টি নজরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আটকে দেয়া হয় বেশ কিছু গাড়ি।

এই ঘটনাটিকে সরকার বিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ।

মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার পরও রাতের আঁধারে এসে জড়ো হতে শুরু করে। এই বিষয়টি যে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ তা একেবারেই পরিষ্কার।”

কিন্তু কারা এই ষড়যন্ত্র করছে সেটি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি পুলিশ কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রস্তুতি শুরু এক মাস আগে থেকেই
শাহবাগের এই সমাবেশে যোগ দিতে আসা বেশিরভাগই জানান গত প্রায় এক মাস আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিচয়ে কাজ শুরু করে একটি গোষ্ঠী।

নিম্ন আয়ের সাধারণ নারী ও পুরুষকে টার্গেট করে তাদেরকে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কোথাও কোথাও আবার নিজেদের এনজিও কর্মীও পরিচয় দেয় তারা।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর উপজেলা ফরিদপুর গ্রামের মিনারা বেগমের কাছেও প্রায় এক মাস আগে এমন কয়েকজন লোক আসেন।

মিনারা বেগমের ছেলে জাকির হোসেন ভুইয়া সাভারের গার্মেন্টসে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন।

মি. ভুইয়া সোমবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত মাসে কিছু লোক আমাদের গ্রামে এসে জানায় তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসছে। তারা আমার মায়ের সাথে কথা বলে এবং জানায় আমাকে ঋণ দেয়া হবে। এজন্য আমার কাছ থেকে তারা এনআইডি ও এক কপি ছবি নেয়।”

এরপর গত শনিবার তারা একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ডও নিয়ে আসে মিনারা বেগমের কাছে। সেখানে জাকির হোসেন ভুইয়ার নামে রেজিস্ট্রেশনও করানো হয়।

ঢাকা আসতে হবে জানিয়ে শনিবার তার কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫০০ টাকাও নেয়া হয় বলেও জানান মি. ভুইয়া।

পুরানো ঢাকা থেকে সোমবার সকালে শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন আমিন মিয়া।

তিনি বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়িও কিশোরগঞ্জে। এলাকার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ লোক গত কয়েকদিন ধরে তার সাথে যোগাযোগ করছিলেন ঢাকার এই সমাবেশে আসার জন্য।

ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ও আশপাশের এলাকা থেকে সমাবেশে লোক জড়ো করার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ সংগঠনের নেতারা।

এছাড়াও শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। সেখানে সোমবার সমাবেশের কথা জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত ১৯ নভেম্বর ওই গ্রুপটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে শাহবাগে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চায়। কিন্তু ডিএমপি তাদের অনুমতি দেয়নি।”

ফুটপাতে জুতা বিক্রি করে সংসার চালান আমিন মিয়া। সোমবার সকালে তিনিও এসেছিলেন শাহবাগের সমাবেশে।

এলাকার লোকজনের কাছে তিনি শুনেছেন শাহবাগের সমাবেশে গেলে কম হলেও এক লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে।

আমিন মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি তো ভাবছি সত্যি এইহানে আইলে ঋণ পাওয়া যাইবে। আইসা দেহি এইহানে আনছে অন্য কোনো কারণে।”

কিশোরগঞ্জের জাকির হোসেন ভুইয়া জানান, তার মা মিনারা বেগমকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়ে গেছে সেই টাকা ফেরত আনা হবে। সেই টাকা গরীবদের মাঝে ঋণ দেয়া হবে। এজন্য শাহবাগের সমাবেশে যেতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি সোমবার সকাল ৭টায় গার্মেন্টস থেকে ছুটি নিয়ে শাহবাগে আসি। আমারে বলা হইছিলো এইখানে আসলে এক লাখ থেকে শুরু করে চার পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে।”

“আমি এই আশায় আসছি। আর যেভাবে তারা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বলছে আমি সত্যি সত্যি ভাবছি এখানে মনে হয় ঋণ দেয়া হবে,” বলছিলেন জাকির হোসেন ভুইয়া।

মানিকগঞ্জ থেকে এমন একটি বাসে আসা কয়েকজন গণমাধ্যমে জানান, ঋণ দেয়ার কথা বলে মানিকগঞ্জের দবির উদ্দিন নামে একজন তাদের ঢাকায় আনেন। মোট পাঁচটি বাস ঢাকায় আসে।

সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ থেকে ঋণ দেয়ার নামে শাহবাগের সমাবেশে নিয়ে যেতে সংগঠিত করার অভিযোগ সোমবার দুপুরে দবির উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

একই অভিযোগে দবির উদ্দিনের স্ত্রী চামেলি বেগম এবং নাসিমা বেগম নামে এক এনজিও কর্মীকে আটক করা হয়।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত আনিসুর রহমান স্বপন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দবির উদ্দিনসহ তিনজনকে আমরা আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে”।

পুলিশ জানায় তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায় নি।

মি. উদ্দিন স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত বলেও জানায় পুলিশ।

তবে কিভাবে তারা এর সাথে যুক্ত হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মি. স্বপন।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বেশ কিছু বাস আটকের পর যারা শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিতে এসেছে তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছে তাদেরকে এক লাখ থেকে কমপক্ষে দশ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছে তারা জানেন এক কোটি টাকাও ঋণ দেয়া হতে পারে।”

ঋণের আশা দেখিয়ে এনেছে কারা?
যারা এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসে তাদের অনেকের কাছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের হ্যান্ডবিল পাওয়া গেছে।

যেখানে আ ব ম মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে ২৫ নভেম্বর ঢাকা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।

হ্যান্ডবিলে ‘বিনা সুদে বিনা জামানতে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত পুঁজি পেয়ে দারিদ্র্য মুক্তিতে আগ্রহী সর্বস্তরের জনগণকে’ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।

অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমিনের নামে এই আহবান জানানো হয়।

অনেকের কাছে ঋণের জন্য একটি ফরমও পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওই ফরমে নাম, ফোন নম্বর, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষরও দেখা গেছে।

কিশোরগঞ্জের আমিন উদ্দিন ভুইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে ওরকম একটা ফরমে তার কাছ থেকেও স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে একটি চক্র তাদের ঢাকায় এনেছে। এর আহ্বায়ক মোস্তফা আমীনকে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মামলার প্রস্তুতিও চলছে।”

তিনি বলেন, “এই ঘটনায় মোস্তফা আমীন ছাড়া আর যারা যারা যুক্ত আছে তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করা চেষ্টা করছি”।

এই মোস্তফা আমিন ফরোয়ার্ড পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলের সাথেও জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

খুলনা গেজেট/কেডি

The post ঋণের প্রলোভনে যেভাবে লোক আনা হয় শাহবাগে appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.