12:52 pm, Wednesday, 27 November 2024

উপরাষ্ট্রপতি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ তৈরির প্রস্তাব বিএনপির

উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, সংসদে উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও গণভোটের বিধান রাখাসহ সংবিধানের ৬২ জায়গায় সংশোধন চেয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করতে বলেছিল। সেই আহ্বানের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি তাদের প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করে। দলটির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে লিখিত ওই প্রস্তাবমালা জমা দেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্যই এসব প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন সংশোধনীর প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনার মূল অংশে কিছু নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।’

এর আগে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দল গঠিত সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে বিএনপি। সে আলোকে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধান সংস্কার কমিটির সুপারিশ জমা দেওয়া হয়। আজকালের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবও জমা দেবে দলটি।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সোমবারের বৈঠকে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্তের পাশাপাশি গত কয়েক দিন দেশব্যাপী চলা অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। দেশ সঠিকভাবে চলছে না এবং বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে বিএনপি উদ্বিগ্ন, সেটি অবহিত করতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এ ইস্যুতে ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি দিতে পারে দলটি।

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অংশ নেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

গত ১ অক্টোবর রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটি গঠন করেছিল বিএনপি।

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্যারেক্টার (চরিত্র) পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো যেসব বিধান পঞ্চদশ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ এনেছিল, ওগুলোসহ পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে কেউ আসীন হবেন না, সেই বিধান চেয়েছি। নতুন করে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির বিধান প্রস্তাব করেছি এবং জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রেও আমরা নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছি।’ প্রস্তাবনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণের আকাক্সক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদের রক্তের অঙ্গীকার, দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সেগুলো মাথায় রেখে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকে, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। প্রস্তাবনায় প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, তফসিলসহ সব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাধিত হয়।’

সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ব্যাপক ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন তারা। যাতে এটা গণতান্ত্রিক সংবিধান সংশোধন হয়। জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়।

সংসদ না থাকায় সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞসহ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত করবেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবাই একমত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, সেগুলো তারা যদি অঙ্গীকার করেন, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন করেন, তাহলে সবার অঙ্গীকার থাকবে পরবর্তী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংবিধান সেভাবে পরিবর্তন করবে।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৪৮, ৫৬, ১৪২ অনুচ্ছেদ যেগুলোতে পরিবর্তন এবং প্রস্তাব আনতে গেলে যে গণভোটের বিধান ছিল, সেটা আওয়ামী লীগ উঠিয়ে দিয়েছিল, সেগুলো পুনরায় প্রবর্তনের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।’

সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ১৫টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। বাকি কমিটিগুলোর প্রতিবেদনও চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল এক নেতা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক নেতা জানান, পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চারটি মূল মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি পুনর্বহাল করা হয়। বিএনপি বলেছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেওয়া রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করতে হবে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা বর্তমান ৪৫ থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে। এটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন সবাই। অনুচ্ছেদ ৭-এর মধ্যে সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল রোধের জন্য ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা হয়। ধারা ৭(খ) অনুযায়ী, সংবিধানের মৌলিক বিধানগুলোকে ‘অসংশোধনযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়। অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে। বিএনপি এ ধারার সংশোধন চেয়েছে।

বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সব রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান আইনি সংস্কারের মাধ্যমে পুনঃগঠন করা দরকার। দেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলেছে বিএনপি। এজন্য বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করতে বলেছে তারা। যাতে অধীন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্র্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন পৃথক সচিবালয় গঠন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে থাকা আগের ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনও চায় বিএনপি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সংবলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ করার প্রস্তাব করেছে দলটি। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এ মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ নিশ্চিতের বিষয়টি সংবিধানে যুক্তের পক্ষে বিএনপি।

গত ৭ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই কমিশন ৬ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করে এবং সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাজে হস্তান্তর করবে।

প্রতিবেদন জমার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘৬ অক্টোবর কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা আশা করি, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাব। যদিও বলা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা আমাদের প্রস্তাব দেব। কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশাবাদী। রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো দিতে পারব।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ

The post উপরাষ্ট্রপতি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ তৈরির প্রস্তাব বিএনপির appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

উপরাষ্ট্রপতি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ তৈরির প্রস্তাব বিএনপির

Update Time : 08:06:54 am, Wednesday, 27 November 2024

উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, সংসদে উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও গণভোটের বিধান রাখাসহ সংবিধানের ৬২ জায়গায় সংশোধন চেয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করতে বলেছিল। সেই আহ্বানের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি তাদের প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করে। দলটির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে লিখিত ওই প্রস্তাবমালা জমা দেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্যই এসব প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন সংশোধনীর প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনার মূল অংশে কিছু নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।’

এর আগে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দল গঠিত সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে বিএনপি। সে আলোকে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধান সংস্কার কমিটির সুপারিশ জমা দেওয়া হয়। আজকালের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবও জমা দেবে দলটি।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সোমবারের বৈঠকে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্তের পাশাপাশি গত কয়েক দিন দেশব্যাপী চলা অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। দেশ সঠিকভাবে চলছে না এবং বিদ্যমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে বিএনপি উদ্বিগ্ন, সেটি অবহিত করতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। এ ইস্যুতে ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি দিতে পারে দলটি।

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অংশ নেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

গত ১ অক্টোবর রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটি গঠন করেছিল বিএনপি।

সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্যারেক্টার (চরিত্র) পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো যেসব বিধান পঞ্চদশ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ এনেছিল, ওগুলোসহ পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে কেউ আসীন হবেন না, সেই বিধান চেয়েছি। নতুন করে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির বিধান প্রস্তাব করেছি এবং জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রেও আমরা নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছি।’ প্রস্তাবনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণের আকাক্সক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদের রক্তের অঙ্গীকার, দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সেগুলো মাথায় রেখে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকে, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। প্রস্তাবনায় প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, তফসিলসহ সব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাধিত হয়।’

সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ব্যাপক ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন তারা। যাতে এটা গণতান্ত্রিক সংবিধান সংশোধন হয়। জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়।

সংসদ না থাকায় সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞসহ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত করবেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবাই একমত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, সেগুলো তারা যদি অঙ্গীকার করেন, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন করেন, তাহলে সবার অঙ্গীকার থাকবে পরবর্তী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংবিধান সেভাবে পরিবর্তন করবে।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৪৮, ৫৬, ১৪২ অনুচ্ছেদ যেগুলোতে পরিবর্তন এবং প্রস্তাব আনতে গেলে যে গণভোটের বিধান ছিল, সেটা আওয়ামী লীগ উঠিয়ে দিয়েছিল, সেগুলো পুনরায় প্রবর্তনের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।’

সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ১৫টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন। বাকি কমিটিগুলোর প্রতিবেদনও চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল এক নেতা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক নেতা জানান, পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চারটি মূল মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি পুনর্বহাল করা হয়। বিএনপি বলেছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেওয়া রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করতে হবে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা বর্তমান ৪৫ থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে। এটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন সবাই। অনুচ্ছেদ ৭-এর মধ্যে সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল রোধের জন্য ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা হয়। ধারা ৭(খ) অনুযায়ী, সংবিধানের মৌলিক বিধানগুলোকে ‘অসংশোধনযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়। অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল পঞ্চদশ সংশোধনীতে। বিএনপি এ ধারার সংশোধন চেয়েছে।

বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সব রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান আইনি সংস্কারের মাধ্যমে পুনঃগঠন করা দরকার। দেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলেছে বিএনপি। এজন্য বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করতে বলেছে তারা। যাতে অধীন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্র্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন পৃথক সচিবালয় গঠন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে থাকা আগের ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনও চায় বিএনপি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সংবলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ করার প্রস্তাব করেছে দলটি। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এ মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ নিশ্চিতের বিষয়টি সংবিধানে যুক্তের পক্ষে বিএনপি।

গত ৭ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই কমিশন ৬ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করে এবং সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাজে হস্তান্তর করবে।

প্রতিবেদন জমার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘৬ অক্টোবর কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা আশা করি, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাব। যদিও বলা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা আমাদের প্রস্তাব দেব। কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশাবাদী। রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো দিতে পারব।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ

The post উপরাষ্ট্রপতি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ তৈরির প্রস্তাব বিএনপির appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.