7:39 pm, Thursday, 28 November 2024

ববি উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আল্টিমেটাম

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:

নতুন কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের যোগদানকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।  

এরইমধ্যে নতুন তাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে তার নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। 

পাশাপাশি নতুন কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ এবং তার যোগদানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওই পক্ষ তার পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, আলোচনা শেষে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উপনীত হন তারা। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারেফ হোসেন জানান, তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে, নাহলে কঠোর আন্দোলনের পথ শিক্ষার্থীদের বেছে নিতে হবে। 

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন বলেন, বর্তমান উপাচার্য জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করেন না। সাম্প্রতিক দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত নবনিযুক্ত ববি কোষাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীরা যোগদানে বাধা দিলেও উপাচার্য তাকে যোগদানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন।  

তিনি বলেন, এ উপাচার্য বারবার বিতর্কিত কাজ করে শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছেন। তিনি এক কথায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সর্বোচ্চ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি। 

নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ যোগদান করতে আসবেন, এমন সংবাদে বুধবার সকাল ১০টা থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তখন বেশ কয়েকজন শিক্ষককে তাদের পাশে দেখা যায়। 

পরে ২১ জন শিক্ষকের সই করা একটি প্রতিবাদলিপিও প্রকাশিত হয়। তাতে ওই কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

কর্মস্থলে যোগ দিতে এসে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রথম বাধার মুখে পড়েন নতুন কোষাধ্যক্ষ। সেসময় থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন। 

প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সহযোগিতায় নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষের যোগদানের আগেই নিয়মবহির্ভূতভাবে রাতে এক অফিস আদেশে অফিস, কর্মকর্তা এবং গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

তারা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য নিজে কলিমুল্লাহর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ) হাতকে শক্ত করতে এমন কর্মকাণ্ড করছেন।  

প্রজ্ঞাপন জারি করা কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোছা. সানজিদা সুলতানা জানান, তাকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাতে ডেকে নিয়ে অফিস আদেশটি দিতে বাধ্য করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনায় উপাচার্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আর উপাচার্য তাদের অভিভাবক, তাই তার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেটা লিখিত হলেও যা, মৌখিক হলেও তা। 

ওই অফিস আদেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোছা. সানজিদা সুলতানাকে জিজ্ঞেস করেন। এরপর সত্য ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশের জন্যও চাপ দেন।  

তবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এ ধরনের আয়োজন করতে পারেন না বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়। সেক্ষেত্রে উপাচার্য এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। যদিও বুধবার উপাচার্য শুচিতা শরমিন অন্যত্র থাকায় কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায়, সেই চেষ্টা করছি। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কাজের মাধ্যমে, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

The post ববি উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আল্টিমেটাম appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Tag :
জনপ্রিয়

ববি উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আল্টিমেটাম

Update Time : 02:09:33 pm, Thursday, 28 November 2024

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:

নতুন কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের যোগদানকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।  

এরইমধ্যে নতুন তাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে তার নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। 

পাশাপাশি নতুন কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ এবং তার যোগদানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওই পক্ষ তার পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, আলোচনা শেষে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উপনীত হন তারা। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারেফ হোসেন জানান, তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে, নাহলে কঠোর আন্দোলনের পথ শিক্ষার্থীদের বেছে নিতে হবে। 

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন বলেন, বর্তমান উপাচার্য জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করেন না। সাম্প্রতিক দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত নবনিযুক্ত ববি কোষাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীরা যোগদানে বাধা দিলেও উপাচার্য তাকে যোগদানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন।  

তিনি বলেন, এ উপাচার্য বারবার বিতর্কিত কাজ করে শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছেন। তিনি এক কথায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সর্বোচ্চ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি। 

নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ যোগদান করতে আসবেন, এমন সংবাদে বুধবার সকাল ১০টা থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তখন বেশ কয়েকজন শিক্ষককে তাদের পাশে দেখা যায়। 

পরে ২১ জন শিক্ষকের সই করা একটি প্রতিবাদলিপিও প্রকাশিত হয়। তাতে ওই কোষাধ্যক্ষের নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

কর্মস্থলে যোগ দিতে এসে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রথম বাধার মুখে পড়েন নতুন কোষাধ্যক্ষ। সেসময় থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন। 

প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সহযোগিতায় নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষের যোগদানের আগেই নিয়মবহির্ভূতভাবে রাতে এক অফিস আদেশে অফিস, কর্মকর্তা এবং গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

তারা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য নিজে কলিমুল্লাহর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ) হাতকে শক্ত করতে এমন কর্মকাণ্ড করছেন।  

প্রজ্ঞাপন জারি করা কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোছা. সানজিদা সুলতানা জানান, তাকে উপাচার্য মঙ্গলবার রাতে ডেকে নিয়ে অফিস আদেশটি দিতে বাধ্য করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনায় উপাচার্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আর উপাচার্য তাদের অভিভাবক, তাই তার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেটা লিখিত হলেও যা, মৌখিক হলেও তা। 

ওই অফিস আদেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোছা. সানজিদা সুলতানাকে জিজ্ঞেস করেন। এরপর সত্য ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশের জন্যও চাপ দেন।  

তবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এ ধরনের আয়োজন করতে পারেন না বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়। সেক্ষেত্রে উপাচার্য এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। যদিও বুধবার উপাচার্য শুচিতা শরমিন অন্যত্র থাকায় কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায়, সেই চেষ্টা করছি। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কাজের মাধ্যমে, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

The post ববি উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আল্টিমেটাম appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.