বিশেষ প্রতিবেদক:
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ল্যাসিক যন্ত্রটি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর ফ্যাকো মেশিনটি গত জুলাই থেকে অচল। চক্ষু চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি মেশিন অকেজো থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন রোগী ও স্বজনেরা।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক ও দুজন সহকারী অধ্যাপক মিলিয়ে তিনজন চিকিৎসক আছেন। দুটি মেশিন অকেজো থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসকদের সমস্যা হচ্ছে।
চক্ষু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বিভাগ থেকে প্রতিবছর এক লাখের বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশই দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাসিক যন্ত্রটি চালু করা হয়েছিল। অত্যাধুনিক এ যন্ত্রের সাহায্যে হাসপাতালে চোখের ল্যাসিক চিকিৎসা চলত। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা প্রায় বিনা খরচে পেতেন এই অঞ্চলের মানুষ। ল্যাসিক হচ্ছে মানুষের চোখে আলোর প্রতিসরণজনিত দূরদৃষ্টি ত্রুটিকে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়ার অত্যাধুনিক পদ্ধতি। চশমা পরা বাদ দিতে অনেকেই ল্যাসিকের দিকে ঝুঁকছেন। সাধারণত দূরদৃষ্টি সমস্যায় ভোগা রোগীরা মোটা লেন্সের চশমা ব্যবহার করেন। ল্যাসিক চিকিৎসা নিলে তাঁদের চশমার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই যন্ত্র ২০১৯ সাল থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আর ফ্যাকো মেশিনটি গত জুলাই থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে। চোখের ছানি পড়ে দৃষ্টিশক্তির অস্পষ্টতায় ভোগা ব্যক্তিদের দৃষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যাধুনিক লেজার পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করতে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়। একে ফ্যাকো সার্জারি বা ফ্যাকোইমালসিফিকেশন বলা হয়।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারেক্ট অ্যান্ড রিফ্রেকটিভ সার্জনসের তথ্য অনুযায়ী, চোখের ছানি পড়া রোগে ভুগছেন দেশের ৬ লাখের বেশি মানুষ। এর সঙ্গে প্রতিবছর ২ লাখ রোগী নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। ছানিতে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিবছর দুই লাখ রোগীর অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এর ৮০ শতাংশ রোগী গ্রামে বসবাস করায় অসচেতনতা ও অবহেলায় তাঁদের অধিকাংশই যথাসময়ে চিকিৎসার আওতায় আসছেন না।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন অকেজো থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০১১ সালে এই বিভাগে যোগদান করেছি। সে সময় কনিষ্ঠ চিকিৎসক হিসেবে ছিলাম, এখন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বিভাগীয় প্রধান হয়েছি। ২০১৫ সালে ল্যাসিক মেশিনটি চালুর পর বেশ কয়েক বছর অস্ত্রোপচারের কাজ ঠিকঠাকমতো চললেও ২০১৯ সাল থেকে এটি কাজ করছে না। অকেজো হওয়ার পর প্রকৌশলী এসে এটি দেখেও গেছেন। কিন্তু এটি মেরামত করে চালু করা ব্যয়বহুল। আর ফ্যাকো মেশিনটি জুলাই থেকে নষ্ট হয়ে আছে। দুটি মেশিন চালুর ব্যাপারে বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিন্তু এখনো সাড়া পাইনি।’
চক্ষু বিভাগ জানায়, হাসপাতালে প্রতিবছর অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে এক লাখের বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। এর মধ্যে ন্যাশনাল আই কেয়ারের অধীনে বরিশাল বিভাগের ২০টি উপজেলায় বছরে অন্তত ৭০ হাজার রোগীকে টেলিমেডিসিন চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। চোখের জটিলতা ছাড়াও ছানিপড়া রোগীর ভিড় থাকলেও ফ্যাকো মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ায় কয়েক মাস ধরে সাধারণ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে রোগীদের ছানি অপসারণ করা হচ্ছে। ল্যাসিক মেশিনটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে অকেজো থাকার ফলে কর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। চক্ষু বিভাগে প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চোখের গুরুতর সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। এর মধ্যে অধিকাংশই ছানি পড়া রোগী।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসার অনেক সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। এসব সমস্যার কথা তিনি জেনেছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য অল্প দিনের মধ্যেই তিনি উদ্যোগ নেবেন।
The post বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ:ল্যাসিক যন্ত্র নষ্ট পাঁচ বছর, সেবা ব্যাহত appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.