10:58 am, Wednesday, 25 December 2024

চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে আন্দোলনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সরকার নির্বিকার

চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়ম ভেঙে গত রোববার সচিবালয়ে সমবেত হয়ে শোডাউন করেন। অন্য ক্যাডারগুলোর কর্মকর্তারা পাল্টা হিসেবে আজ মঙ্গলবার কলমবিরতির নামে এক ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকার কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন। দুই পক্ষই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছে। তবে সরকার যেন নির্বিকার। এর আগে পদায়নের দাবিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের অনেকে। তারা এখন আরও সুবিধা চাইছেন। এসব দেখে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও গাড়ি, সুদমুক্ত ঋণের মতো সুবিধা চাইছেন। চাপ দিয়ে পদোন্নতি, পদায়নের সিদ্ধান্ত বদল করা হচ্ছে। এতে প্রশাসনে অস্থিরতা, অচলাবস্থা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর না হওয়ায় তা দূর হচ্ছে না।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনরূপ অসন্তোষ বা ক্ষোভ প্রকাশ বা আন্দোলনে কোনো সরকারি কর্মচারী অংশগ্রহণ করবেন না।’ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকুরেদের সবাই কর্মচারী; কর্মকর্তা বলে কিছু নেই। ৩০ ধারার সি উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্ত বদলের জন্য চাপ দিতে পারবেন না কর্মচারীরা। ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২(ই) ধারায় এমন আচরণকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কেউ তা করলে সরকার তিরস্কার থেকে শুরু করে চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো শাস্তি দিতে পারবে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশন পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। বিধিমালা ভেঙে এর বিরোধিতায় নেমেছেন আমলারা। উপসচিব থেকে ঊর্ধ্বতন পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ২৫ ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ পদায়নের সুপারিশ করা হবে বলে কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন। এর বিরোধিতা করছেন প্রশাসনের আমলারা। শতভাগ পদ প্রশাসন ক্যাডার থেকে পূরণের দাবিতে ফেসবুকে লিখেছেন অনেক কর্মকর্তা। কিন্তু সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারেও বিধিনিষেধ রয়েছে। তা না মেনে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ গঠনের দাবিতে ফেসবুকে প্রস্তাবিত লোগো পোস্ট করছেন। এসব দাবি নিয়ে গত রোববার কয়েকশ কর্মকর্তা সচিবালয়ে জমায়েত হন জনপ্রশাসন সচিবের কক্ষের সামনে। পরে তারা সচিবের সঙ্গে দেখা করে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। অথচ চাকরিবিধি অনুযায়ী, অবস্থান নেওয়া বা কর্মসূচি গ্রহণের সুযোগ নেই ক্যাডার কর্মকর্তাদের।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন হাজারো কর্মকর্তা। সরকার ইতোমধ্যে ৫৩৭ জনকে পদোন্নতি দিয়েছে। ভূতাপেক্ষা পদোন্নতিতে কেউ কেউ সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে ‘ত্রিপল প্রমোশনে’ অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। সচিব পদে ২৩ এবং গ্রেড-১ পদে ১৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন ১৩৫ জন।

আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত আরও ৭৬৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাকি কর্মকর্তারা চাকরিতে রয়েছেন। আগের আমলের ২৭ সচিব এখনও পদে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে আমলারা রাজনীতিকদের চেয়ে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিলেন বলে বারবার বলা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকেও। প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া, বিরোধী দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে রাজনীতিকদের মতো সমালোচনা করার অনেক অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বহু আমলার সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর নজির রয়েছে।

আমলাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকে বৈধতা দেওয়া নিয়ে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৫৬০ কর্মকর্তার সবাই চাকরিতে রয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট, ১ হাজার ২০৫ কেন্দ্রে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ এবং ৬ হাজার ৪৮৪ কেন্দ্রে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছিল। এই অবিশ্বাস্য ভোটের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাও এখন নানা দাবিতে সরব হয়েছেন।

সচিবালয় সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বদলের চাপ দিচ্ছেন বিতর্কিত নির্বাচনের কর্মকর্তারাও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সক্রিয় কর্মকর্তারাও একই ভূমিকায় রয়েছেন। এতে জনপ্রশাসনে স্থবিরতা, অস্থিরতা চলছে। দৈনন্দিন কাজ চললেও, বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তেরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

প্রশাসন বাদে বাকি ২৫ ক্যাডার পদোন্নতিতে পরীক্ষার বিপক্ষে হলেও উপসচিব থেকে ঊর্ধ্বতন পদে ৫০ শতাংশ কোটার পক্ষে। তারা কলমবিরতির নামে এক ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকার যে কর্মসূচি দিয়েছেন একে বিধিমালার পরিপন্থি বলে আখ্যা দিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো সার্ভিস শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তারা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিতে পারেন, দেনদরবার করতে পারেন। এক ঘণ্টা কর্মবিরতি দেওয়া মানে এক ঘণ্টা জনগণ সেবা পাবে না। জনগণকে সেবাবঞ্চিত করার অধিকার তাদের কে দিল? প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে সচিবের কক্ষের সামনে অবস্থান নিলেন এটিও একইভাবে সার্ভিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি। আসলে ক্যাডার সার্ভিসের লোকজন সুবিধাভোগী, আমি যদিও ক্যাডারেরই ছিলাম। কিন্তু এটা সত্য, সুবিধাভোগীরা সুবিধা চাচ্ছেন।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নের দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের কক্ষে হাতাহাতির ঘটনায় ১৭ উপসচিবকে শাস্তি দিতে সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। এ সুপারিশ বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেই।

সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডারের বাইরে রাখার চিন্তার কথা জানিয়েছে। এই দুই ক্যাডার এর বিরোধিতায় নেমেছে। এই দুই ক্যাডারের বহু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ভেঙে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নজির রয়েছে। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিল অনেক কর্মকর্তা। যদিও কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সেই সময়ে তারা সরকারের আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন।

ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কী প্রস্তাবনা দিচ্ছে, তা না দেখেই কর্মসূচি দিয়ে দিলেন কর্মকর্তারা! সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তা করা হচ্ছে। যাদের নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ নেই, তাদের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে। এসব বিশৃঙ্খলা শক্ত হাতে দমন করা উচিত সরকারের। সরকার হবে শক্তিশালী, এর পরিচয় পাওয়া যায়নি। সরকারি কর্মচারীরা এতটা বাড় বাড়লে সরকার চলবে কীভাবে? এসবের ফলে ভুগছে তো জনগণ।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ

The post চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে আন্দোলনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সরকার নির্বিকার appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে আন্দোলনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সরকার নির্বিকার

Update Time : 08:07:23 am, Tuesday, 24 December 2024

চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়ম ভেঙে গত রোববার সচিবালয়ে সমবেত হয়ে শোডাউন করেন। অন্য ক্যাডারগুলোর কর্মকর্তারা পাল্টা হিসেবে আজ মঙ্গলবার কলমবিরতির নামে এক ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকার কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন। দুই পক্ষই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছে। তবে সরকার যেন নির্বিকার। এর আগে পদায়নের দাবিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের অনেকে। তারা এখন আরও সুবিধা চাইছেন। এসব দেখে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও গাড়ি, সুদমুক্ত ঋণের মতো সুবিধা চাইছেন। চাপ দিয়ে পদোন্নতি, পদায়নের সিদ্ধান্ত বদল করা হচ্ছে। এতে প্রশাসনে অস্থিরতা, অচলাবস্থা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর না হওয়ায় তা দূর হচ্ছে না।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনরূপ অসন্তোষ বা ক্ষোভ প্রকাশ বা আন্দোলনে কোনো সরকারি কর্মচারী অংশগ্রহণ করবেন না।’ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকুরেদের সবাই কর্মচারী; কর্মকর্তা বলে কিছু নেই। ৩০ ধারার সি উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্ত বদলের জন্য চাপ দিতে পারবেন না কর্মচারীরা। ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২(ই) ধারায় এমন আচরণকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কেউ তা করলে সরকার তিরস্কার থেকে শুরু করে চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো শাস্তি দিতে পারবে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশন পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। বিধিমালা ভেঙে এর বিরোধিতায় নেমেছেন আমলারা। উপসচিব থেকে ঊর্ধ্বতন পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ২৫ ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ পদায়নের সুপারিশ করা হবে বলে কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন। এর বিরোধিতা করছেন প্রশাসনের আমলারা। শতভাগ পদ প্রশাসন ক্যাডার থেকে পূরণের দাবিতে ফেসবুকে লিখেছেন অনেক কর্মকর্তা। কিন্তু সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারেও বিধিনিষেধ রয়েছে। তা না মেনে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ গঠনের দাবিতে ফেসবুকে প্রস্তাবিত লোগো পোস্ট করছেন। এসব দাবি নিয়ে গত রোববার কয়েকশ কর্মকর্তা সচিবালয়ে জমায়েত হন জনপ্রশাসন সচিবের কক্ষের সামনে। পরে তারা সচিবের সঙ্গে দেখা করে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। অথচ চাকরিবিধি অনুযায়ী, অবস্থান নেওয়া বা কর্মসূচি গ্রহণের সুযোগ নেই ক্যাডার কর্মকর্তাদের।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন হাজারো কর্মকর্তা। সরকার ইতোমধ্যে ৫৩৭ জনকে পদোন্নতি দিয়েছে। ভূতাপেক্ষা পদোন্নতিতে কেউ কেউ সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে ‘ত্রিপল প্রমোশনে’ অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। সচিব পদে ২৩ এবং গ্রেড-১ পদে ১৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন ১৩৫ জন।

আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত আরও ৭৬৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাকি কর্মকর্তারা চাকরিতে রয়েছেন। আগের আমলের ২৭ সচিব এখনও পদে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে আমলারা রাজনীতিকদের চেয়ে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিলেন বলে বারবার বলা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকেও। প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া, বিরোধী দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে রাজনীতিকদের মতো সমালোচনা করার অনেক অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বহু আমলার সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর নজির রয়েছে।

আমলাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকে বৈধতা দেওয়া নিয়ে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৫৬০ কর্মকর্তার সবাই চাকরিতে রয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট, ১ হাজার ২০৫ কেন্দ্রে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ এবং ৬ হাজার ৪৮৪ কেন্দ্রে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছিল। এই অবিশ্বাস্য ভোটের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাও এখন নানা দাবিতে সরব হয়েছেন।

সচিবালয় সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বদলের চাপ দিচ্ছেন বিতর্কিত নির্বাচনের কর্মকর্তারাও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সক্রিয় কর্মকর্তারাও একই ভূমিকায় রয়েছেন। এতে জনপ্রশাসনে স্থবিরতা, অস্থিরতা চলছে। দৈনন্দিন কাজ চললেও, বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তেরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

প্রশাসন বাদে বাকি ২৫ ক্যাডার পদোন্নতিতে পরীক্ষার বিপক্ষে হলেও উপসচিব থেকে ঊর্ধ্বতন পদে ৫০ শতাংশ কোটার পক্ষে। তারা কলমবিরতির নামে এক ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকার যে কর্মসূচি দিয়েছেন একে বিধিমালার পরিপন্থি বলে আখ্যা দিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো সার্ভিস শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তারা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিতে পারেন, দেনদরবার করতে পারেন। এক ঘণ্টা কর্মবিরতি দেওয়া মানে এক ঘণ্টা জনগণ সেবা পাবে না। জনগণকে সেবাবঞ্চিত করার অধিকার তাদের কে দিল? প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে সচিবের কক্ষের সামনে অবস্থান নিলেন এটিও একইভাবে সার্ভিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি। আসলে ক্যাডার সার্ভিসের লোকজন সুবিধাভোগী, আমি যদিও ক্যাডারেরই ছিলাম। কিন্তু এটা সত্য, সুবিধাভোগীরা সুবিধা চাচ্ছেন।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নের দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের কক্ষে হাতাহাতির ঘটনায় ১৭ উপসচিবকে শাস্তি দিতে সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। এ সুপারিশ বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেই।

সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডারের বাইরে রাখার চিন্তার কথা জানিয়েছে। এই দুই ক্যাডার এর বিরোধিতায় নেমেছে। এই দুই ক্যাডারের বহু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ভেঙে সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নজির রয়েছে। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিল অনেক কর্মকর্তা। যদিও কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সেই সময়ে তারা সরকারের আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন।

ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কী প্রস্তাবনা দিচ্ছে, তা না দেখেই কর্মসূচি দিয়ে দিলেন কর্মকর্তারা! সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তা করা হচ্ছে। যাদের নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ নেই, তাদের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে। এসব বিশৃঙ্খলা শক্ত হাতে দমন করা উচিত সরকারের। সরকার হবে শক্তিশালী, এর পরিচয় পাওয়া যায়নি। সরকারি কর্মচারীরা এতটা বাড় বাড়লে সরকার চলবে কীভাবে? এসবের ফলে ভুগছে তো জনগণ।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ

The post চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে আন্দোলনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, সরকার নির্বিকার appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.