1:37 am, Saturday, 28 December 2024

নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে : জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল সংসদে তত পারসেন্ট প্রতিনিধিত্ব করবে। এতে করে এক পারসেন্ট ভোট যদি কোন দল পায় সেই দলের যোগ্যলোক থাকলে তারাও সংসদে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। কোন কোন নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ এবং ভোট এই দুটি জিম্মি হওয়ার আর আশঙ্কা থাকবে না। এই জন্য আমরা চাই যে আনুপাতিক হারে সেই নির্বাচনটা হোক।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং মৌলিক সংস্কার চাই। সংস্কারের সাথে সাথে বর্তমান সরকার যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়। রোডম্যাপ দেওয়ার আগে সমস্ত ভোটারের উপযুক্ত বয়স যাদের হয়েছে, পরিণত বয়স যাদের হয়েছে তাদের সকলের ভোটের তালিকা নিশ্চিত দেখতে চাই। আমাদের যে সন্তানেরা তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, ভোটের প্রতি তাদের ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই অধিকার তারা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে এজন্য আমরা তাদেরকে স্যালুট জানাই। তাদের সকলের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলের ভোট তুলতে হবে। আমাদের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা লড়াই করেছে এই যুদ্ধের জন্যে তাদের প্রবাসীদের সকলের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। যারা বাংলাদেশের প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে, এই সকলের ভোটের তালিকা সম্পন্ন হওয়ার পরেই নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে সকল যোদ্ধার মতের প্রতিফলন হবে ইনশাআল্লাহ।

খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেঁড়িবাধ সংকট নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা অন্তত: শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোন দাবি করতে হবে না, বরং জনগনের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে। এদেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।

কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমীর আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।

সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন বাক্য এদেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোন গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আওয়ামীলীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমীর বলেন, ১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায়না। ডামি নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সে অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আ’লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীত দমন কমিশন এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোন গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ফুসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মত অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ এদেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাতো না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না, বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামীলীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে।

তিনি বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামীলীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার হতে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সে মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির।

এর আগে তিনি পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভা এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

পাইকগাছার পথসভায় তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত যেসব গুম, খুন, হত্যা, গণহত্যা করা হয়েছে সব খুনের বিচার জনগণ চায়। সেনা হত্যা, আয়নাঘরের হত্যা, জামায়াত নেতাদের হত্যা, সবশেষ ছাত্র-জনতাকে গণহত্যা সব হত্যার বিচার করতে হবে।

ডা. শফিকুল রহমান বলেন, তারা ভারতের কাছে দেশকে বন্ধক ও ইজারা দিয়েছিলেন। এই দেশের সবকিছু তাদেরকে উজাড় করে দিয়েছেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ভারতকে এত দিয়েছি যে ভারত সারা জিন্দেগী স্মরণ রাখবে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন দিলেন তো অনেক, এখন কি চাইবেন কিছু? তিনি উত্তর দিলেন আমি ছোটলোক নই যে চাইবো। বারে বাহ কত বড়, বড় লোক। দেশের সবকিছু তুলে দিয়ে তিনি বলছেন তিনি ছোটলোক নন। আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেবাদাসী। এজন্য তিনি দাসত্বের শৃংখলে বাংলাদেশের জনগণকে বন্দি করতে চেয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সন্তানদের নেতৃত্বে সেই শৃঙ্খল জাতি ভেঙে ফেলেছে। আর এই জাতির গলায় শৃংখল পড়ানো যাবে না ইনশাল্লাহ।

ভারতের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করি, আপনারাও আমাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করতে শিখুন। ভারত থেকে চোখ রাঙিয়ে আর বাংলাদেশকে শাসনের চিন্তা করবেন না। বাংলাদেশের মানুষ এখন চোখে চোখ রেখে সাহস করে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করেছে। বুক খুলে দিয়ে ডানা মেলে বলতে পারে গুলি কর, সেই দেশের মানুষকে আর ভয় দেখাবেন না। অনুরোধ করবো আমরা শান্তিতে থাকি, সবাই শান্তিতে থাকুক। আমরা কারো অভ্যন্তরীণ বেশি হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটাও আমরা চাই না। সেখান (ভারত) থেকে আমাদের জন্য অশান্তি সৃষ্টি করবেন না।

জামায়াতের আমির বলেন, এরা বলতো বাংলাদেশে এখন অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে। আমি তাদের আমলেও চিৎকার দিয়ে বলেছি হা তোমাদের এই শান্তি হল কবরস্থানের শান্তি। কবরস্থানে কোন জীবিত মানুষ থাকে না। তাই সেখানে হাসি কান্না শোনা যায় না। আজকে বাংলাদেশকে তোমরা কবরস্থানে পরিণত করেছো। মানুষের মুখের ভাষা বুকের ভাষা তোমরা কেড়ে নিয়েছো। দেখা তালা তোমরা মানুষের মুখে ঝুলিয়ে দিয়েছো।

তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ আমরা যুবকদের হাতে তুলে দিতে চাই। তারাই পারবে একটি শোষণ ও নির্যাতন মুক্ত এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে।

বিগত তিনটি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিয়ে নিজেরা জয়ী হয়ে এদেশ পরিচালনা করেছে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ওই নির্বাচন ছিল আমি ও ড্যামির নির্বাচন। যা এই দেশের জনগণ কখনোই মেনে নেয়নি এবং আগামীতেও মেনে নেবে না। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

কয়রার কর্মীসম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।

উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন খুলনা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির।

পাইকগাছার পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।

পাইকগাছার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াত আমীর মাওলানা শাহীদুর রহমান ও আঠারোমাইলের পথসভায় সভাপতিত্ব করেন, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন।

খুলনা গেজেট/এইচ/এএজে

The post নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে : জামায়াত আমির appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.

Tag :

নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে : জামায়াত আমির

Update Time : 07:07:08 pm, Thursday, 26 December 2024

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল সংসদে তত পারসেন্ট প্রতিনিধিত্ব করবে। এতে করে এক পারসেন্ট ভোট যদি কোন দল পায় সেই দলের যোগ্যলোক থাকলে তারাও সংসদে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। কোন কোন নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ এবং ভোট এই দুটি জিম্মি হওয়ার আর আশঙ্কা থাকবে না। এই জন্য আমরা চাই যে আনুপাতিক হারে সেই নির্বাচনটা হোক।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং মৌলিক সংস্কার চাই। সংস্কারের সাথে সাথে বর্তমান সরকার যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়। রোডম্যাপ দেওয়ার আগে সমস্ত ভোটারের উপযুক্ত বয়স যাদের হয়েছে, পরিণত বয়স যাদের হয়েছে তাদের সকলের ভোটের তালিকা নিশ্চিত দেখতে চাই। আমাদের যে সন্তানেরা তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, ভোটের প্রতি তাদের ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই অধিকার তারা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে এজন্য আমরা তাদেরকে স্যালুট জানাই। তাদের সকলের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলের ভোট তুলতে হবে। আমাদের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা লড়াই করেছে এই যুদ্ধের জন্যে তাদের প্রবাসীদের সকলের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। যারা বাংলাদেশের প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে, এই সকলের ভোটের তালিকা সম্পন্ন হওয়ার পরেই নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে সকল যোদ্ধার মতের প্রতিফলন হবে ইনশাআল্লাহ।

খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেঁড়িবাধ সংকট নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা অন্তত: শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোন দাবি করতে হবে না, বরং জনগনের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে। এদেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।

কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমীর আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।

সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন বাক্য এদেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোন গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আওয়ামীলীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমীর বলেন, ১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায়না। ডামি নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সে অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আ’লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীত দমন কমিশন এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোন গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ফুসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মত অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ এদেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাতো না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না, বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামীলীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে।

তিনি বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামীলীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার হতে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সে মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির।

এর আগে তিনি পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভা এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

পাইকগাছার পথসভায় তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত যেসব গুম, খুন, হত্যা, গণহত্যা করা হয়েছে সব খুনের বিচার জনগণ চায়। সেনা হত্যা, আয়নাঘরের হত্যা, জামায়াত নেতাদের হত্যা, সবশেষ ছাত্র-জনতাকে গণহত্যা সব হত্যার বিচার করতে হবে।

ডা. শফিকুল রহমান বলেন, তারা ভারতের কাছে দেশকে বন্ধক ও ইজারা দিয়েছিলেন। এই দেশের সবকিছু তাদেরকে উজাড় করে দিয়েছেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ভারতকে এত দিয়েছি যে ভারত সারা জিন্দেগী স্মরণ রাখবে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন দিলেন তো অনেক, এখন কি চাইবেন কিছু? তিনি উত্তর দিলেন আমি ছোটলোক নই যে চাইবো। বারে বাহ কত বড়, বড় লোক। দেশের সবকিছু তুলে দিয়ে তিনি বলছেন তিনি ছোটলোক নন। আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেবাদাসী। এজন্য তিনি দাসত্বের শৃংখলে বাংলাদেশের জনগণকে বন্দি করতে চেয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সন্তানদের নেতৃত্বে সেই শৃঙ্খল জাতি ভেঙে ফেলেছে। আর এই জাতির গলায় শৃংখল পড়ানো যাবে না ইনশাল্লাহ।

ভারতের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করি, আপনারাও আমাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করতে শিখুন। ভারত থেকে চোখ রাঙিয়ে আর বাংলাদেশকে শাসনের চিন্তা করবেন না। বাংলাদেশের মানুষ এখন চোখে চোখ রেখে সাহস করে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করেছে। বুক খুলে দিয়ে ডানা মেলে বলতে পারে গুলি কর, সেই দেশের মানুষকে আর ভয় দেখাবেন না। অনুরোধ করবো আমরা শান্তিতে থাকি, সবাই শান্তিতে থাকুক। আমরা কারো অভ্যন্তরীণ বেশি হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটাও আমরা চাই না। সেখান (ভারত) থেকে আমাদের জন্য অশান্তি সৃষ্টি করবেন না।

জামায়াতের আমির বলেন, এরা বলতো বাংলাদেশে এখন অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে। আমি তাদের আমলেও চিৎকার দিয়ে বলেছি হা তোমাদের এই শান্তি হল কবরস্থানের শান্তি। কবরস্থানে কোন জীবিত মানুষ থাকে না। তাই সেখানে হাসি কান্না শোনা যায় না। আজকে বাংলাদেশকে তোমরা কবরস্থানে পরিণত করেছো। মানুষের মুখের ভাষা বুকের ভাষা তোমরা কেড়ে নিয়েছো। দেখা তালা তোমরা মানুষের মুখে ঝুলিয়ে দিয়েছো।

তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ আমরা যুবকদের হাতে তুলে দিতে চাই। তারাই পারবে একটি শোষণ ও নির্যাতন মুক্ত এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে।

বিগত তিনটি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিয়ে নিজেরা জয়ী হয়ে এদেশ পরিচালনা করেছে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ওই নির্বাচন ছিল আমি ও ড্যামির নির্বাচন। যা এই দেশের জনগণ কখনোই মেনে নেয়নি এবং আগামীতেও মেনে নেবে না। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

কয়রার কর্মীসম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।

উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন খুলনা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির।

পাইকগাছার পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।

পাইকগাছার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াত আমীর মাওলানা শাহীদুর রহমান ও আঠারোমাইলের পথসভায় সভাপতিত্ব করেন, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন।

খুলনা গেজেট/এইচ/এএজে

The post নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে : জামায়াত আমির appeared first on খুলনা গেজেট | সবার আগে সঠিক খবর.